২১ জুন ২০২০, ১৬:৩৫

ইন্টারনেট খরচ বৃদ্ধি নিয়ে শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ

  © প্রতীকী ছবি

আগামী অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল সেবার ওপর কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাজেটে মোবাইল সেবায় সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যার ফলে ফোনে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সরকারের কাছে কর হিসেবে যাবে প্রায় ২৫ টাকা, যা এতদিন ছিল ২২ টাকার মত। এর ফলে মোবাইল ব্যবহারকারীদের ফোনে কথা বলার খরচ তো বাড়বেই, মোবাইল ইন্টারনেটের খরচও বাড়বে।

করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যখন ইন্টারনেট নির্ভর হয়েছে, সেই সময়ে এই সেবার ওপর কর বৃদ্ধি তাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি ইন্টারনেটের ধীরগতিও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।

গত ১১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন তাতে মোবাইল সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত এমন সময় এলো, যখন গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশের অধিকাংশ মানুষ এবং শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত। তাই ঘরে থেকে অনলাইনে পড়াশোনাসহ সময় কাটানোর জন্য ইন্টারনেট একমাত্র ভরসা শিক্ষার্থীদের। যার ফলে অন্যান্য সময়ের চেয়ে এর ব্যবহার অনেক গুণ বেড়েছে।

গত ১৭ মার্চ সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার পরপরই বাসাবন্দি হয়ে যান রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী কলেজের শিক্ষার্থী মিনা আল-আমিন। এরপর থেকে ছুটির মেয়াদ বাড়তে থাকায় তার কলেজ থেকে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বাসাতে ইন্টারনেট ও কম্পিউটারের সুবিধা না থাকায় ফোনের ইন্টারনেটের মাধ্যমেই অনলাইন ক্লাসগুলোতে অংশ নেন তিনি। মোবাইল সেবার ওপর কর বাড়ানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তিনি বলেন, একদিকে সরকার অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করছে, অন্যদিকে ইন্টারনেটের খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যা আমাদের সাথে তামশা ছাড়া আর কিছুই নয়।

তিনি আরও জানান, এই লকডাউনে পুরো দেশ গৃহবন্দী। শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজন ব্যতিত কেউ বাইরে বের হয় না। সকল প্রকার আড্ডা, বিনোদন এখন সোস্যাল মিডিয়ায় বন্দী। গৃহবন্দীর এই বিরক্তিকর পরিস্থিতি হতে মুক্তি পেতে সবাই বেছে নিয়েছে ইন্টারনেটকে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দেশের বাজেট ঘোষণা করা ছিলো এক বিরাট চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তবুও দেশবাসী আশায় ছিলো সরকার একটা গ্রহণযোগ্য ও সময়োপযোগী বাজেট আমাদের উপহার দিবে যাতে থাকবে এই সময়ের দেশবাসীর ভরসার আশ্রয়স্থল ইন্টারনেট এর মূল্যহ্রাস। এমনকি করোনা পরিস্থিতি শুরু হতেই ইন্টারনেট মূল্যহ্রাস করার নানাভাবে দাবি উঠেছে। কিন্তু সরকার জনগণের এই চাহিদাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ইন্টারনেট মুল্য বাড়িয়ে দেয়। 

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী দ্বীন মুহাম্মাদ ইন্টারনেটের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তুলে ধরেন তাঁর কষ্টের কথা। তিনি বলেন, ইন্টারনেটের মূল্য বৃদ্ধিতে আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে অনলাইনে ক্লাস করার ক্ষেত্রে আমাদের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আমরা অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত না হয় গরীব পরিবারের তাই আমাদের পক্ষে এত মূল্য দিয়ে ইন্টারনেট কিনে অনলাইনে ক্লাস করা সম্ভব না। আর আমরা অধিকাংশ গ্রামে বসবাস করি আমাদের গ্রামে ব্রডব্যান্ড ইন্টানেট নাই। আমাদের এত মূল্য দিয়ে ইন্টারনেট কিনে ক্লাস করা সম্ভাব না। আমরা পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছি। তাই সরকারের কাছে আমরা ইন্টারনেটের মূল্য কমানোর আবেদন জানাচ্ছি।

ইন্টারনেটের দাম বৃদ্ধির ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক পাশ করা সাইফ মনোয়ার জানান, করোনা-কালে আউটসোর্সিং ছাড়াও শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি নারীদের কর্মসংস্থানেও এই ইন্টারনেটভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং ও ব্যবসা অবদান রাখছে। কিন্তু অনলাইন কেনাকাটায় বাড়তি অর্থ গোনা ও তার ওপর যোগাযোগের খরচ বেড়ে যাওয়া সেবাকেন্দ্রিক সবগুলো খাত হুমকির মুখে পড়বে বলে আমি মনে করছি। এছাড়াও এই অতিরিক্ত করের বোঝা দরিদ্র মানুষের জন্য অসহনীয় হয়ে পড়বে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় হয়ে উঠবে। এর ফলে মোবাইল শিল্পখাত আরো দুর্বল হয়ে পড়বে।

রাজধানীর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে সদ্য স্নাতক শেষ করা শিক্ষার্থী আরিফ হাসান। পড়াশোনা শেষ করে তিনি কাঙ্ক্ষিত চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাশাপাশি আউটসোর্সিং করে নিজের খরচ বহন করছেন। এমতাবস্থায় ইন্টারনেটের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, নতুন এই বাজেটে ইন্টারনেটের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, বিষয়টা আমাদের হতাশ করেছে। আমাদের ধারণা ছিল ইন্টারনেট সহজলভ্য হবে কিন্তু হয়েছে তার উল্টােটা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হবার সুবাধে সবাই সবার নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে এবং অধিকাংশই নিজ গ্রামে।

তিনি বলেন, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে-জুম, গুগল মিট, মেসেঞ্জারের সফটওয়ারের মাধ্যমে। গ্রামের প্রায় জায়গায় মোবাইল অপারেটরদের নেট দিয়ে এসব চালাতে হচ্ছে। সরকার মোবাইল সেবার ওপর কর বাড়ানোর ফলে বাড়তি চাপ পড়েছে। তাছাড়া যারা আউটসোর্সিং করে তাদেরও অনেক সমস্যা।

তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসে প্রাদুর্ভাবের সময় মোবাইল ও ইন্টারনেটই যোগাযোগের মূল মাধ্যম হয়ে উঠেছে। একে তো নেটওয়ার্ক দূর্বল তার উপর আবার ইন্টারনেটের দাম বৃদ্ধি। যেন মরার উপর খরার ঘা! শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে সার্বিক বিবেচনায় ইন্টারনেটের দাম সূলভ মূল্য হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।