১৫ মার্চ ২০২০, ১০:৫৩

ক্লাসরুমে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার

  © সংগৃহীত

ডিজিটাল বাংলাদেশ বর্তমানে কোনো স্লোগান নহে, একটি বাস্তবতা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্নক্ষেত্রে আজ ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লাগিয়াছে। আমাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায় ডিজিটালাইজেশনের জ্বলন্ত প্রমাণ হইল মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের ব্যবহার। বিশ্বায়নের যুগে উন্নত দেশের সহিত তাল মিলাইয়া চলিতে ও শিক্ষার গুণমান নিশ্চিতকরণে তথ্যপ্রযুক্তির এই ব্যবহার অপরিহার্য। ইহাতে শিক্ষার প্রচলিত ধ্যানধারণা ও শিখন-শেখানো পদ্ধতিতে আজ ব্যাপক পরিবর্তন আসিয়াছে। ব্ল্যাকবোর্ড ও চক-ডাস্টার যুগের অবসান ঘটাইয়া শ্রেণিকক্ষে জায়গা করিয়া লইতেছে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট মডেম ও স্পিকার। সারাবিশ্বে এই ব্যাপারে ফিনল্যান্ড এবং এশিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া শীর্ষস্থানে রহিয়াছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি বাংলাদেশও এইক্ষেত্রে অগ্রগতি লাভ করিতেছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে সাত সহস্রাধিক মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপিত হইয়াছে। ইহার কল্যাণে তৈরি হইতেছে বিভিন্ন ডিজিটাল কনটেন্ট। পাঠের সহিত যুক্ত হইতেছে ভিডিও ক্লিপস ও ছবি এবং ইহার সহিত থাকিতেছে অ্যানিমেশনের খেলা। ফলে সেই পাঠটি শিক্ষার্থীদের নিকট হইতেছে অধিক বোধগম্য, চিত্তাকর্ষক ও আনন্দদায়ক।

দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের ব্যবহার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়িবার প্রত্যয়ে আশীর্বাদ হিসাবে কাজ করিতেছে। ইহার মাধ্যমে পড়ালেখার প্রতি নূতন প্রজন্মের বাড়িতেছে আগ্রহ-স্পৃহা; কিন্তু কোথাও কোথাও ইহার মধ্যে শুভংকরের ফাঁকিও পরিলক্ষিত হইতেছে। সহযোগী একটি জাতীয় দৈনিকের খবরের শিরোনাম হইল—‘বাক্সবন্দি ল্যাপটপ প্রজেক্টর’। ইহার অর্থ সরকার স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের যাবতীয় সরঞ্জামাদি দিলেও তাহা ব্যবহূত হইতেছে না। অবহেলায় পড়িয়া থাকিয়া নষ্ট হইতেছে। নেত্রকোনার মদন উপজেলার ৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৩টি স্কুলে এই ধরনের সরঞ্জামাদি প্রদান করা হইয়াছে; কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হইলেও সত্য যে, ৯৭ শতাংশ স্কুলেই মাল্টিমিডিয়া ক্লাস হয় না। নেত্রকোনোর মদন উপজেলার ঘটনাটি একটি দৃষ্টান্ত মাত্র। আসলে সারাদেশে অনুসন্ধান চালাইলে কমবেশি একই চিত্র পাওয়া যাইবে। ইহার পিছনে রহিয়াছে বিবিধ কারণ। যেমন—অনেক স্কুলে এখন পর্যন্ত এই ধরনের কোনো সরঞ্জামাদি না দেওয়া, সরঞ্জামাদি দেওয়া হইলেও এই ব্যাপারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক না থাকা, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের সরঞ্জামাদি শিক্ষকদের ব্যক্তিগত বা অন্য কাজে ব্যবহূত হওয়া, বিদ্যুত্ সুবিধা না থাকা, ইন্টারনেট সংযোগ না থাকা, সপ্তাহে নিয়মিত মাল্টিমিডিয়া ক্লাস অনুষ্ঠিত না হওয়া, অবকাঠামোগত সমস্যা থাকা ইত্যাদি। এই সকল সংকট দূরীকরণে শিক্ষা কর্মকর্তাদের নজরদারি বৃদ্ধি করা আবশ্যক।

এখানে উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, ‘তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা নয়, শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার’—এই স্লোগানকে বুকে ধারণ করিয়া ২০১২ সালের ২০ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও শিক্ষক কর্তৃক ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন; কিন্তু উপরোক্ত সীমাবদ্ধতার কারণে গ্রাম-গঞ্জের অনেক শিক্ষার্থী আজও জানেন না—মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম বলিতে আসলে কী বোঝায়! এই সকল সীমাবদ্ধতা দূর করা আবশ্যক। এইজন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম মনিটরিং ও মেইনটেনিংয়ে জেলা-উপজেলা প্রশাসন, শিক্ষা অফিস ও টিচার্স ট্রেনিং কলেজকে সমন্বিতভাবে কাজ করিতে হইবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের একুশ শতকের দক্ষ জনগোষ্ঠী হিসাবে গড়িয়া তুলিতে হইবে। এই বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহার একটি যুগোপযোগী ও সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নিঃসন্দেহে—যাহার সদ্ব্যবহার করা জরুরি।

সূত্র: জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক