ব্যাংকে পথশিশুদের সঞ্চয় সাড়ে ৩৮ লাখ টাকা
সুবিধাবঞ্চিত পথ ও কর্মজীবী শিশুরাও সঞ্চয় করছে ব্যাংকে। তাই বস্তি, রাস্তাঘাট, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট ও ফুটপাতে বসবাসরত পথশিশু এবং কর্মজীবী শিশু-কিশোরদের ব্যাংকিং সেবায় আনার মাধ্যমে তাদের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা তৈরি, কষ্টোপার্জিত অর্থের সুরক্ষা, পথভ্রষ্ট হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করাসহ তাদের বৃহত্তর কল্যাণে ব্যাংক হিসাব খোলার এই মহতী উদ্যোগ নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে সাত হাজার ৬৪৭ জন পথ ও কর্মজীবী শিশুর হিসাব খোলা হয়েছে। এসব হিসাবে জমানো অর্থের স্থিতি দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৩৮ লাখ টাকা। পথশিশুদের পক্ষে দেশের ১৫টি এনজিও এসব ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ১০ টাকার জামানতে পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের নামে সঞ্চয়ী হিসাব খোলা এবং এসব হিসাব থেকে কোনোরূপ চার্জ না নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিকে দেশের প্রত্যেকটি ব্যাংক মানবিক কারণে পথশিশুদের হিসাব খোলার কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য সম্প্রতি দেশের সব ব্যাংকের ফিন্যানশিয়াল ইনক্লুশন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বৈঠকও করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক সাত হাজার ৬৪৭ জন সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছে। এসব হিসাবে পথশিশুদের জমানো অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। আগের প্রান্তিকে সেপ্টেম্বর শেষে চার হাজার ৯০৯ জন পথ ও কর্মজীবী শিশুর হিসাবে জমা করা অর্থের পরিমাণ ছিল ৩৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা। ফলে তিন মাসের ব্যবধানে পথ ও কর্মজীবী শিশুদের হিসাব বেড়েছে দুই হাজার ৭৩৮টি। আর জমানো অর্থের পরিমাণ বেড়েছে তিন লাখ ৩১ হাজার টাকা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পথশিশুদের সবচেয়ে বেশি হিসাব খুলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। এই ব্যাংকটি ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই হাজার ৯১৯ জন পথশিশুর হিসাব খুলেছে। এক হাজার ১৫৮ জন পথশিশুর হিসাব খুলে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বেসরকারি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। ৯৮৩ জন পথশিশুর হিসাব খুলে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক। আর ৫৪৪টি হিসাব খুলে চতুর্থ অবস্থানে আছে পূবালী ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে প্রাথমিকভাবে ১০টি ব্যাংক পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব খোলার দায়িত্ব নেয়। পরে আরো ৯টি ব্যাংক এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এগুলো হলো সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক।
দেশের ১৫টি এনজিও শিশুদের অভিভাবক হয়ে পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করছে। এনজিওগুলো হলো মাসাস, সাফ, উদ্দীপন, অপরাজেয় বাংলাদেশ, ব্র্যাক, নারী মৈত্রী, সিপিডি, প্রদীপন, সাজিদা ফাউন্ডেশন, এএসডি, বাংলার পাঠশালা, ইবিসিআর প্রকল্প, ঘাসফুল, এডুকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন ও পরিবর্তন।
পথশিশু ও কর্মজীবী শিশুদের পক্ষে হিসাবটি এনজিও প্রতিনিধিরা পরিচালনা করলেও হিসাব ফরম ও অর্থ জমার বইয়ে হিসাবধারী শিশু-কিশোরদের অনুস্বাক্ষর নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এ ধরনের হিসাবে কোনো নমিনির দরকার হবে না বলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা আছে।