২০ নভেম্বর ২০১৯, ১৮:৩২

গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতি

ডিজিটাল ওয়েজেস সামিট  © টিডিসি ফটো

২০২১ সালের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ শ্রমিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে তাদের বেতন-ভাতা গ্রহণের সুযোগ পাবেন বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক। বুধবার রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে আইসিটি বিভাগের আওতাধীন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও ইউএনডিপির সহায়তায় বাংলাদেশ ডিজিটাল ওয়েজেস সামিট ২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “ডিজিটালাইজেশন পদ্ধতির সকল উদ্যোগকে একটি প্ল্যাটফর্মে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে শ্রমিকদের আর্থিক ও সামাজিক উন্নতির ধাপে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে। আমরা আশা করছি ২০২১ সালের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ শ্রমিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে তাদের বেতন-ভাতা গ্রহণের সুযোগ পাবে।”

তৈরী পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি ডিজিটালাইজেসনের অগ্রগতি বিবেচনা করে, সকল কারখানা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রদানের ব্যাপারে সব ধরনের সমস্যা সমাধানে সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। বাংলাদেশ ডিজিটাল ওয়েজেস সামিট ২০১৯ এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, “বেতন-ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে গার্মেন্টস সেক্টরে ইতোমধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট শিল্পখাত ব্যাপকহারে সহযোগিতা করেছে। ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতি বাস্তবায়নে এই মূহুর্তে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আর্থিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতির ক্ষেত্রে, আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সকল স্টেক হোল্ডারদের যেকোন ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। ডিজিটাল ফিনানন্সিয়াল ইকোসিস্টেম তৈরি করা ছাড়া আমাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।”

এ সময় ডিজিটাল পেমেন্ট বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা কামনা করেন মন্ত্রী।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “গার্মেন্টস কর্মীদের, বিশেষত নারীদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বেতন-ভাতার ডিজিটাইজেশনের উদ্ভাবনী সমাধানের পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং সমন্বয় সাধন করার জন্য আমরা আমাদের বিভিন্ন সেবাকে কাজে লাগাচ্ছি। সরকারি-বেসরকারি সেবাকে ডিজিটাইজ করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কাজ করছে- যাচাইযোগ্য ডিজিটাল আইডি, ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম এবং ইন্টারঅপারেবল ফ্রেমওয়ার্ক।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল ইকোসিস্টেম গঠনে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। এক্ষেত্রে সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের যে কোনও প্রকারের সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত।”

এ সময় জাতিসংঘ ভিত্তিক বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্স-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রুথ গুডউইন-গ্রোইন বলেন, “বাংলাদেশে মজুরি ডিজিটালাইজেশন করতে এবং এর পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে সরকারি ও বেসরকারী খাতের স্টেকহোল্ডারকে আমরা সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ।”

গ্যাপ ইনকের বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার তামান্না সরোয়ার বলেন, “আমরা ২০২০ সালের মধ্যে নগদ-ভিত্তিক মজুরি প্রদানের ব্যবস্থা থেকে ডিজিটাল ওয়েজ পেমেন্ট সিস্টেমে রূপান্তর করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী আমাদের টিয়ার ১ সরবরাহকারীদের একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি এবং এখন পর্যন্ত, আমাদের সরবরাহকারীদের ৮০ শতাংশ ডিজিটাল মজুরি প্রদান ব্যবহার করছে। এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে, শ্রমিকরা তাদের বেতন-ভাতার উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ অর্জন করবে এবং তাদের অর্থ সাশ্রয়, ব্যয় এবং বিনিয়োগের জন্য একটি নিরাপদ উপায় সরবরাহ করবে। ডিজিটাল মজুরি পোশাক খাত জুড়ে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়তা করবে।”

মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মিজ. স্বপ্না ভৌমিক বলেন, “গার্মেন্টস শিল্পের সকল উপাদানগুলোর সাথে আমরা ডিজিটাল মজুরি বাস্তবায়নে কার্যকর অবদান রাখব এবং ইতোমধ্যে ডিজিটালাইজড মজুরিপ্রাপ্ত শীর্ষস্থানীয় সরবরাহকারীদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবো।”

সম্মেলনে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন নগদে প্রদানের অসুবিধাসমূহ এবং ডিজিটাল পেমেন্টের বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন সুরক্ষা, দক্ষতা, ক্ষমতায়ন, স্বাধীনতার ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গার্মেন্টস শ্রমিক ও উৎপাদক উভয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরা হয়েছে। বেতন পরিশোধের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পেমেন্ট নিয়োগকর্তা এবং শ্রমিক উভয়ের ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নত করতে উপকৃত করবে। পে-রোল ডিজিটালাইজড হওয়ার পর, গার্মেন্টস কারখানাগুলো তাদের প্রশাসন এবং আর্থিক বিভাগের কর্মকর্তাদের শতকরা ৫৩ ভাগ সময় হ্রাস করেছে। মজুরি ডিজিটাইজেশনে নারীদের ব্যয় এবং সঞ্চয় সম্পর্কিত গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোতে অংশ নেয়ার সম্ভাবনাও ১৫% বেড়েছে। তবে এই ইতিবাচক প্রভাবগুলো অনুধাবন করার জন্য, বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেশিরভাগ প্রতিনিধিত্বকারী মহিলাদের চাহিদা বিবেচনা করে মজুরি ডিজিটাইজেশন নিশ্চিত করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলনে ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতি বাস্তবায়নে সরকার এবং বেসরকারি খাতের সমন্বয়ের বিষয়টি উঠে আসে। এছাড়া ভবিষ্যতের ডিজিটাইজেশন প্রতিশ্রুতিগুলো এগিয়ে নিতে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অভিজ্ঞতা গ্রহণ করার পরামর্শ আসে এবং মূল স্টেকহোল্ডারদের সহযোগী মনোভাব নিয়ে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

সম্মেলনে তিনটি পৃথক প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়েছিল। বিএসআর এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মিজ স্মিতা নিমিলিতার সঞ্চালনায় প্রথম আলোচনায় ‘দায়বদ্ধতার সাথে ডিজিটাইজ করার সুবিধা: ব্যবসায়িক পরিস্থিতি এবং মহিলা শ্রমিকদের উপর প্রভাব’ অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে প্যানেল তালিকায় ছিলেন, আইসিটি মিনিস্ট্রি অ্যাডভাইজর টিনা জাবীন, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের এইচআর প্রোপেশনাল আহসানুজ্জামান, এসকিউ গ্রুপের চিফ পিপল অফিসার ওয়ারিসুল আবিদ, যমুনা ডেনিমস লিমিটেডের নিলুফা ইয়াসমিন ও রিমা আকতার এবং এইচএন্ডএম বাংলাদেশের আঞ্চলিক টেকসই পরিচালক কিরণ গোকাথোথি।

দ্বিতীয় আলোচনায় ‘মজুরি ডিজিটালাইজেশন বৃদ্ধির জন্য একটি অন্তর্ভুক্ত ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের গুরুত্ব’, বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন-এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মারিয়া মের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার মো. মেজবাউল হক, ডিবিবিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোঃ শিরিন, গ্যাপ ইনক এর সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মিসেস তামান্না সরোয়ার, বিকাশের সিইও কামাল কাদির এবং ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী।

চূড়ান্ত আলোচনা-‘মজুরির ডিজিটাইজেশন করার রোডম্যাপ: স্টেকহোল্ডারদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী, জাতিসংঘ ভিত্তিক সংস্থা বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্স-এর এশিয়া প্যাসিফিক লিড মিসেস কিজম নগডাপ ম্যাসালি এবং প্রাইভেট সেক্টর লিড মিজ মার্জোলাইন চেইন্ট্রিউয় সঞ্চালনা করেন।

বাংলাদেশ ডিজিটাল ওয়েজেস সামিট ২০১৯ শীর্ষক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, দাতা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক এনজিও-এর প্রতিনিধি, তৈরি পোষাক শিল্পের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।