সবচেয়ে বেশি ধনী চীনে
ধনী ব্যক্তির সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথমবারের মতো ছাড়িয়ে গেল চীন। ক্রেডিট সুইসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর গার্ডিয়ান। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ব্যাংকটির পরিচালিত বার্ষিক সম্পদ জরিপে দেখা গেছে, চীনের ১০ কোটি মানুষ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের ১০ শতাংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এ সংখ্যা ৯ কোটি ৯০ লাখ।
ক্রেডিট সুইসের প্রতিবেদনে বলা হয়, উদীয়মান দেশ থেকে বাজার অর্থনীতিতে দ্রুত রূপান্তরের কারণে দেশটিতে রেকর্ড সংখ্যক ধনী মানুষ তৈরি হয়েছে। সুইস ব্যাংকটির গ্লোবাল হেড অব ইকোনমিকস অ্যান্ড রিসার্চ ন্যানেট হেখলার-ফেইড’হার্বি বলেন, ১২ মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ সত্ত্বেও সম্পদ সৃষ্টিতে উভয় দেশই বেশ ভালো সক্রিয়তা দেখিয়েছে, দেশ দুটির সম্পদ সৃষ্টি হয়েছে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৮০ ট্রিলিয়ন ও ১ দশমিক ৯০ ট্রিলিয়ন ডলার।
বিশ্বের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর তালিকায় জায়গা পেতে হলে কোনো ব্যক্তির অন্তত ১ লাখ ৯ হাজার ৪৩০ ডলারের ব্যক্তিগত সঞ্চয় থাকতে হয়। এ স্তরে যুক্তরাষ্ট্রকে চীন ছাড়িয়ে গেলেও অতি ধনী (সুপার রিচ) সৃষ্টিতে এখনো এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের ৪০ শতাংশ মিলিয়নেয়ারের বসবাস যুক্তরাষ্ট্রে।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ৬ লাখ ৭৫ হাজার বেড়ে ১ কোটি ৮৬ লাখ জনে দাঁড়িয়েছে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে প্রতি ১৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকানের মধ্যে একজন মিলিয়নেয়ার রয়েছে।
বর্তমানে চীনে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ৪৪ লাখ, যা ২০১৮ সাল থেকে ১ লাখ ৫৮ হাজার বেড়েছে। চীনের মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা বিশ্বের প্রায় ১০ শতাংশ। চীনে ১১০ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক রয়েছে।
ব্রেক্সিট সৃষ্ট অনিশ্চয়তায় পাউন্ডের মান কমেছে এবং যুক্তরাজ্যে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ২৭ হাজার কমে ২৪ লাখ ৬০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। মিলিয়নেয়ারের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও জাপানের পরেই যুক্তরাজ্যের অবস্থান এবং বৈশ্বিক মিলিয়নেয়ারের ৫ শতাংশের বসবাস দেশটিতে।
যুক্তরাজ্যের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দেশটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। কীভাবে ব্রেক্সিট হয়, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
এ দেশগুলোর বাইরে মিলিয়নেয়ারের তালিকায় আরো যুক্ত হয়েছে ১১ লাখ। এতে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা বেড়ে ৪ কোটি ৬৮ লাখে দাঁড়িয়েছে। সম্মিলিতভাবে তারা বিশ্বের ১৫৮ দশমিক ৩০ ট্রিলিয়ন ডলার নিট সম্পদের মালিক, যা বৈশ্বিক সম্পদের ৪৪ শতাংশ।
ক্রেডিট সুইসের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অন্তত ১০ কোটি ডলার সম্পদ রয়েছে এমন প্রাপ্তবয়স্কের সংখ্যা ৫৫ হাজার ৯২০-এ দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ৫০ কোটি ডলারের বেশি নিট সম্পদ রয়েছে, এমন ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৩০-এ।
সুইস ব্যাংকটির পূর্বাভাস, গত বছর বৈশ্বিক সম্পদ ২ দশমিক ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও পরবর্তী পাঁচ বছরে তা ২৭ শতাংশ বেড়ে ৪৫৯ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে। একই সময়ে মিলিয়নেয়ারের সংখ্যা বেড়ে ৬ কোটি ৩০ লাখে উন্নীত হবে।
অ্যান্থনি শরকস নামে এক অর্থনীতিবিদ ও প্রতিবেদনটির লেখক বলেন, আমাদের হাতে প্রায় দুই দশকের উপাত্ত রয়েছে এবং সম্পদ প্রবৃদ্ধির দুটি ধাপ স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি আমরা। এ শতাব্দীটি শুরু হয়েছে শক্তিশালী ও সমন্বয়মূলক সম্পদ সৃষ্টির ‘সোনালি যুগের’ মাধ্যমে। কিন্তু সম্পদ প্রবৃদ্ধিটা আর্থিক সংকটের সময় ধসে পড়ে এবং তার পর থেকে আগে যে রকম প্রবৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল, সেই মাত্রার প্রবৃদ্ধি পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, আর্থিক সংকটের সময় আমূল পরিবর্তন চলে আসে যখন চীন ও অন্য উদীয়মান বাজার অর্থনীতিগুলো সম্পদ সৃষ্টির চালিকাশক্তির দায়িত্ব পালন করে। অবশ্য এ সময়ে টানা ১১ বছর প্রাপ্তবয়স্কপ্রতি সম্পদের পরিমাণ বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র। আশি ও নব্বইয়ের দশকে জন্ম নেয়া তরুণরা সবচেয়ে কম বিত্তের অধিকারী।