আদানির সঙ্গে চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে চায় বাংলাদেশ
ভারতের আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি পুনরালোচনা করতে চায় বাংলাদেশ সরকার। ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তি আদালত থেকে বাতিল না হলে যে দামে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে তা অনেকাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্য সরকারের। রোববার বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে এই কথা জানিয়েছেন।
সম্প্রতি আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ। আদানি এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও এরই মধ্যে ভারতের একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি পুনর্বিবেচনা করার ঘোষণা দিয়েছে। সেই সঙ্গে আদানি গ্রুপে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে ফ্রান্সের তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান টোটাল এনার্জি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০১৭ সালে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি করে। ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গত বছর উৎপাদনে আসে, সেখান থেকে বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ হচ্ছে। তবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার উচ্চ দামের কারণে চুক্তি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি হাইকোর্ট বাংলাদেশের এক আইনজীবীর আবেদনের ভিত্তিতে আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা বিদ্যুৎ চুক্তি তদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত শেষ হবে এবং তখন আদালত চূড়ান্ত রায় দেবেন।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘চুক্তিতে অসংগতি পাওয়া গেলে তা নিয়ে পুনরালোচনা করা হবে। দুর্নীতি বা ঘুষের মতো গুরুতর অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে চুক্তি বাতিল করা হবে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, আদালতের নির্দেশে চলমান তদন্তের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিছু সমস্যার বিষয়ে আদানি গোষ্ঠীকে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। যেমন ভারতের বিদ্যুৎকেন্দ্র যে কর–সুবিধা পেয়ে থাকে, তা থেকে বাংলাদেশের উপকৃত না হওয়া। বিষয়টি চুক্তি নিয়ে পুনরালোচনার আংশিক কারণ হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের আদানির বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগের প্রভাব সরাসরি বাংলাদেশের চুক্তিতে পড়বে না বলে জানান তিনি।
তবে আদানির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অবস্থিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ নিরবচ্ছিন্ন, নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাবে। এ ছাড়া এই বিদ্যুতের কল্যাণে ভোক্তাদের গড় বিদ্যুৎ খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমবে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার আদানির চুক্তি ও অন্যান্য ছয়টি বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনা করতে পৃথক কমিটি গঠন করেছে; আন্তর্জাতিক আলোচনা ও সালিসিতে গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে এটা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুসারে, ২০২২–২৩ অর্থবছরে আদানি প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ধরেছে ১৪ টাকা ০২ পয়সা, যেখানে দেশে বিদ্যুতের গড় দাম ৮ টাকা ৭৭ পয়সা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদানি পাওয়ার প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ধরেছে ১২ টাকা। ভারতের অন্যান্য বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের দামের চেয়ে এটা ২৭ শতাংশ বেশি এবং সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে ৬৩ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ইউনিট প্রতি ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। এই দামেই প্রতিবছর সরকারকে ৩২০ বিলিয়ন বা ৩২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশ আদানির বিদ্যুতের দাম পরিশোধ অব্যাহত রাখবে, যদিও আদানি সম্প্রতি অর্থ পরিশোধে দেরি করার কারণে সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে।
ফাওজুল কবির খান বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনসক্ষমতা এখন যথেষ্ট, যদিও কিছু কেন্দ্র গ্যাসের অভাবে বা অন্যান্য কারণে আংশিকভাবে চলছে। তিনি আরও বলেন, ‘আদানি সরবরাহ অর্ধেক কমালেও সমস্যা হয়নি, আমরা কাউকে ব্ল্যাকমেল করতে দেব না।’