ছাঁটাই আতঙ্কে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের কর্মীরা, নেপথ্যে কী

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)  © সংগৃহীত

অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে শীর্ষ পর্যায়ের ৪০ কর্মকর্তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের নির্দেশ দিয়ে সময় বেঁধে দিয়েছে বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। ব্যাংকটির শীর্ষ এই কর্মকর্তাদের প্রায় অর্ধেকেই বিভিন্ন শাখার ব্যবস্থাপক এবং বাকিরা প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বে কর্মরত। প্রতিষ্ঠানের এমন সিদ্ধান্তে অন্য সব কর্মকর্তার মধ্যে ছাঁটাই–আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

শুধু বাড়ি চট্টগ্রামে হওয়ার কারণে পদত্যাগের নির্দেশ পেয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানান পদত্যাগে নির্দেশ পাওয়া ইউসিবির দুই কর্মকর্তা। তারা এ-ও জানান, কোনো ধরনের অনিয়মে তারা সম্পৃক্ত নন। এমনকি অনিয়ম হওয়া বিভাগগুলোতে তারা কখনো কাজ করেননি। তবে তালিকার অনেকেই অনিয়ম হওয়া বিভিন্ন বিভাগে কাজ করেছেন।

ইউসিবির একটি সূত্র জানায়, পদত্যাগে নির্দেশ পাওয়া ৪০ কর্মকর্তার মধ্যে কয়েকজন ইতোমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন এবং বাকিরাও সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পদত্যাগ করবেন। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ কর্মকর্তাকে ছাঁটাইয়ের জন্য তালিকাভুক্ত করেছে ব্যাংকটি।

আওয়ামী নেতা প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরীর পরিবারের হাতে ছিল ইউসিবির নিয়ন্ত্রণ। সূচনালগ্ন থেকেই ব্যাংকটির সঙ্গে যুক্ত ছিল পারটেক্স গ্রুপ। তবে পারটেক্স গ্রুপের প্রতিনিধিদের ব্যাংকটি ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয় ২০১৭ সালে। তারা দায়িত্ব ছেড়ে দিলে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসেন রুকমিলা জামান। তিনিও যুক্তরাজ্যে থাকায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ব্যাংকটি পরিচালনার দায়িত্ব হাতে নেন।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ইউসিবির কিছু শেয়ারধারী ব্যক্তি বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে তারা অভিযোগ করেন, ব্যাংকটির চেয়ারম্যান রুকমিলা জামান হলেও সাইফুজ্জামান চৌধুরী মূলত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন এবং তাঁর ‘স্বেচ্ছাচারিতা ও লুটপাটের কারণে’ ব্যাংকটি দেউলিয়া হওয়ার পথে।

যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ১ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলেও অভিযোগকারীরা চিঠিতে উল্লেখ করেন। তারা দাবি করেন, ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা লুট করে সাইফুজ্জামান বিদেশে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়।

শেয়ারধারীদের লিখিত অভিযোগের পর বাংলাদেশ ব্যাংক আগের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিলে ইউসিবির নতুন চেয়ারম্যান হন অনন্ত গ্রুপের শরীফ জহির। এরপর ব্যাংকটির এমডি আরিফ কাদরী পদত্যাগ করেন। ব্যাংকটির সাবেক ডিএমডি মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ নতুন এমডি হিসেবে যোগ দেন। 

ইউসিবির প্রকৃত আর্থিক পরিস্থিতি যাচাই করে দেখতে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে নিরীক্ষার দায়িত্ব দিয়েছে পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ। কয়েকটি নিরীক্ষা ইতোমধ্যে শেষও হয়েছে। আর্থিক অনিয়মে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, তাদের অনেককে ব্যাংক থেকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি আরও অনেককেই পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের কর্মীদের মধ্যে।


সর্বশেষ সংবাদ