এনআরবিসি ব্যাংক দখলের চেষ্টায় দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্তরা
বেসরকারি এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসি দখলের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক এবং প্রাক্তন কয়েক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বাণিজ্যিক এ প্রতিষ্ঠানটিকে পুনরায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে এ ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। সেজন্য অভিযুক্তরা প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারে চালিয়ে ব্যাংকটিকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে আবার লুটপাটের সুযোগ তৈরির চেষ্টা করছেন।
সম্প্রতি এসব অভিযোগ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট একটি চিঠি প্রদান করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বরাবর পাঠানো ওই চিঠিতে এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসিকে বেদখল হওয়া থেকে রক্ষার উদ্যোগ চাওয়া হয়েছে।
সমস্যায় পড়া ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের স্বার্থ বাংলাদেশ ব্যাংক দেখছে। এসব ব্যাংকের আমানতকারীদের পাশে সরকার আছে। ব্যাংকগুলোর অবস্থা উন্নয়নে এগুলোর পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে—আহসান এইচ মনসুর, গভর্নর।
চিঠিতে জানানো হয়েছে হয়েছে—এই অসাধু চক্রটি বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে এনআরবিসি ব্যাংকের গতি থামাতে নানা অপকৌশলে লিপ্ত রয়েছেন। অভিযোগে করা হয়েছে, বিগত ২০১৩ সালে আওয়ামী শাসনামলে প্রবাসী উদ্যোক্তাদের হাত ধরে এনআরবিসি ব্যাংকের যাত্রা শুরু হলেও ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলী ব্যাংকটির লাইসেন্স নেওয়ার পর থেকেই ব্যাপক চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হন। তখন প্রাথমিক শেয়ার বিক্রিতে দ্বিগুণ দামে শেয়ার বিক্রি এবং ঘুষের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি ব্যাংক পরিচালনা শুরু করেন তিনি।
এসময় তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা—যারা ব্যাংকটিকে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করার মতো কাজও করেছেন তখন। এছাড়াও তখন আইন ভেঙ্গে ফরাসত আলী এবং তার সহযোগীরা এনআরবিসি ব্যাংকের বিভিন্ন শেয়ার বেনামে ক্রয় করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ব্যাংক একাই ব্যাংকিং খাতকে বাঁচাতে পারবে না: ড. সালেহউদ্দিন
এমন নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে বিগত ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তখন ফরাসত আলীসহ ছয় পরিচালককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। পাশাপাশি তখন ফরাসত আলীকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা হয় দেশের আর্থিক খাতে। দেশের আর্থিক খাতের তদারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক এ নিষেধাজ্ঞা দেয়।
এরপর চলতি বছরের শুরুতে আওয়ামী লীগের চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ফরাসত আলী আবারও ব্যাংকটিকে দখলের চেষ্টা শুরু করে। তখন তার সহযোগী হিসেবে যোগ দেন ব্যাংক থেকে দুর্নীতির কারণে চাকরি হারানো কয়েকজন প্রাক্তন কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে রয়েছেন—শাফায়েত ওয়াহেদ, সৈয়দ মো. মহররম হোসেন, মাহফুজুর রহমান এবং রিয়াজ উদ্দিন আসিফ।
বিগত ২০১৩ সালে প্রবাসী উদ্যোক্তাদের হাত ধরে এনআরবিসি ব্যাংকের যাত্রা শুরু হলেও ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলী ব্যাংকটির লাইসেন্স নেওয়ার পর থেকেই ব্যাপক চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হন। তখন তিনি আইন ভেঙ্গে প্রাথমিক শেয়ার দ্বিগুণ দামে বিক্রি করেন তিনি।
চক্রটি বিগত ২০২০ সাল থেকে বিভিন্ন সরকারি দফতর ও গণমাধ্যমে চিঠি পাঠিয়ে এনআরবিসি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপনের অভিযোগ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি চিঠিতে বলা হয়েছে—ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তাদের নামেও স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে বিভিন্ন দফতরে পাঠানো চিঠিগুলোতে। সম্প্রতি আওয়ামী সরকারের পতনের পর অভিযুক্তরা আবারো সক্রিয় এবং ব্যাংকটিকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানো হয়েছে, এনআরবিসি ব্যাংক সবসময় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ঋণ বিতরণ থেকে বিরত থেকেছে—যা তাদের স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহায়ক হয়েছে। ফলে বিগত সাত বছরে ব্যাংকটি সব আর্থিক সূচকে অসামান্য উন্নতি করেছে। নিট মুনাফা দ্বিগুণের পাশাপাশি সাড়ে চার গুণ আমানত সংগ্রহ এবং ঋণ বিতরণ পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বাণিজ্যিক এ প্রতিষ্ঠানটিতে।
অন্যদিকে আগামীকাল রবিবার এনআরবিসি ব্যাংকের বোর্ড মিটিং অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। মিটিংয়ে ব্যাংকের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট রফিকুল ইসলাম মিয়া আরজু জোরপূর্বক প্রেসিডেন্ট হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। বর্তমানে তিনি রাশিয়া শাখা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে দক্ষ ব্যবস্থাপনার ঘাটতি রয়েছে: সাবেক বাণিজ্য সচিব
এদিকে বৈষম্য বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে হুঁশিয়ারি প্রদান করেছেন। তারা বলেছেন, এখনও ছাত্র-জনতার রক্তের দাগ শুকায়নি। এরই মধ্যে এখন তিনি এনআরবিসি ব্যাংক দখল করতে যাচ্ছেন। ফ্যাসিবাদী দোসরের এই অশুভ তৎপরতা ছাত্র-জনতা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে রুখ দিবে।
এর আগে গত বুধবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি জানিয়েছেন, সমস্যায় পড়া ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের স্বার্থ বাংলাদেশ ব্যাংক দেখছে। এসব ব্যাংকের আমানতকারীদের পাশে সরকার আছে। ব্যাংকগুলোর অবস্থা উন্নয়নে এগুলোর পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আন এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় চিঠিতে অভিযুক্তদের সাথে। বক্তব্য জানতে একাধিক মাধ্যমে চেষ্টা করেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।