বরখাস্ত হলেন ইসলামী ব্যাংকের ৮ শীর্ষ কর্মকর্তা
ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় আটজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে ব্যাংকটি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ব্যাংকটির অন্যান্য কর্মকর্তাদের চাপের মুখে তাদের বরখাস্ত করা হয়। তাদের মধ্যে একজন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি), পাঁচজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও বাকী দুজন ব্যাংকের দুটি বিভাগের প্রধান।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের সবাই এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলমের ঘনিষ্ঠ বলে গুঞ্জন আছে। এর মধ্যে সাইফুল আলমের একান্ত সচিব আকিজ উদ্দিন ও ইসলামী ব্যাংকের ঋণের দায়িত্বে থাকা মিফতাহ উদ্দিনও রয়েছেন। তাঁরা দুজনই ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ছিলেন। এই দুই কমকর্তা ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ ও মানবসম্পদ বিষয়গুলোর দায়িত্বে ছিলেন।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জে কিউ এম হাবীবুল্লাহ, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আকিজ উদ্দিন, মোহাম্মদ সাব্বির, মিফতাহ উদ্দিন, কাজী মো. রেজাউল করিম ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। এ ছাড়া প্রধান অর্থ পাচার প্রতিরোধ কর্মকর্তা (ক্যামেলকো) তাহের আহমেদ চৌধুরী ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল মো. নজরুল ইসলামকে বরখাস্ত করেছে ব্যাংকটি।
সূত্র আরও জানায়, বরখাস্তকৃতরা হাতে চিঠি পেয়েছেন। গতকাল রবিবার (১৮ আগস্ট) তারিখে সে চিঠি ইস্যু করা ছিল।
সরকার পতনের পর থেকে ব্যাংকটিকে ‘এস আলম ও পটিয়া মুক্ত’ করার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তারা ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছেন। পাশাপাশি ঋণ বিতরণে অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করছেন। এ ছাড়া গত ৭ বছরে সাইফুল আলমের নিজের এলাকা চট্টগ্রামের পটিয়ার প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তাকে ব্যাংকটিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। সরকার পতনের পর ব্যাংকটিতে যেতে পারছেন না এস আলমপন্থী কর্মকর্তারা। তবে গতকাল রোববার ও আজ সোমবার অফিসে যান ব্যাংকটির এমডি মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। এরপরই তাদের বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।
২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ইসলামী ব্যাংককে ‘জামায়াতমুক্ত’ করার উদ্যোগ হিসেবে এর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়া হয়। সদ্য ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপকে দেয়া হয় সে দায়িত্ব। অভিযোগ আছে, এরপর সাড়ে সাত বছরে নামে-বেনামে ব্যাংকটি থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এস আলম এবং এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ। এই অর্থ ব্যাংকটির মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশ। এই টাকা বের করতে কোনো নিয়মকানুন মানা হয়নি। ঋণের যে তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে, ব্যাংক থেকে পাচার করা অর্থের প্রকৃত পরিমাণ তার চেয়ে বেশি বলেই মনে করেন কর্মকর্তারা।