ডলার পাওয়া যাচ্ছে না মানি চেঞ্জারে, খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়

দুই মাস ধরে ডলারের দাম কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও সাম্প্রতিক সাধারণ ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অস্থিরতায় দেশে খোলাবাজারে হঠাৎ অস্থিরতা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশে রেমিট্যান্স বিরোধী প্রচারণা শুরুর পর থেকে বাড়তে শুরু করেছে এই মুদ্রার দাম।

প্রতি ডলারের দাম ১১৯ টাকায় নির্ধারণ করে দেওয়ার পর রাজধানীর গুলশান ও মতিঝিলের মানি চেঞ্জারে এই দামে কোনো ডলার বিক্রি হচ্ছে না। নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে না পারায় তারা ডলারের আনুষ্ঠানিক বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। তবে খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেট) ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে ডলারের দাম। গতকাল ডলার বিক্রি হয়েছে ১২৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১২৫ টাকা।

বুধবার (৩১ জুলাই) মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমসিএবি) পক্ষ থেকে সব মানি চেঞ্জারকে চিঠি দিয়ে ডলারের দাম ১১৯ টাকায় বেঁধে দেওয়ার তথ্য জানানো হয়। এরপরের দিনই এই চিত্র দেখা গেল।

আইএমএফ’র পরামর্শে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করে গত ৮ই মে ডলারের দর এক লাফে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা মধ্যবর্তী দর ঠিক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ সিদ্ধান্তের পর স্থিতিশীল ছিল বৈদেশিক মুদ্রাবাজার। তবে গত কয়েক দিনে ঢাকার খোলাবাজারে বা মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানে প্রতি ডলারের দাম ৩/৪ টাকা বেড়ে ১২৪-১২৫ টাকায় উঠেছে। দুই সপ্তাহ আগেও ডলারের দাম ১১৮-১১৯ টাকার মধ্যে ছিল। এদিকে ব্যাংকগুলোও বাড়তি দরে রেমিট্যান্স কিনছে। তারা কিনেছে ১১৯ টাকা ৬০ পয়সায়।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণেই মূলত খোলাবাজারে প্রভাব পড়েছে।

মানি চেঞ্জারের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে ফেরার সময় প্রবাসীরা নিজেদের সঙ্গে করে যে ডলার নিয়ে আসেন, সেগুলো খোলাবাজারে বিক্রি হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে মানুষ আসা কমে যাওয়ায় ডলারের সরবরাহও কমেছে। এতেই ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে দাম বেড়ে গেছে।

একটি মানি চেঞ্জারের কর্মকর্তা বলেন, সোমবার তারা ১২১ টাকা ৬০ থেকে ৭০ পয়সায় ডলার কিনে বিক্রি করেছেন ১২২ টাকায়। টানা ৫ দিন পর গত বুধবার অফিস খোলার পর ডলারের বাড়তি চাহিদার কারণে দর বাড়তে শুরু করে। ওইদিন তারা ১২১ টাকা থেকে ১২১ টাকা ১০ পয়সায় কিনে বিক্রি করেন ১২১ টাকা ৫০ পয়সা। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে এ পর্যায়ে উঠেছে।

জানা গেছে, খোলাবাজারে দুই সপ্তাহ আগে প্রতি ডলার ১১৮-১১৯ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হতো। নগদ ডলারের দাম কয়েক মাস ধরে এ রকম ধারাতেই ছিল। তবে ছাত্র আন্দোলনের পর গত সোমবার তা বেড়ে ১২২ টাকায় উঠে, যা এখন ১২৫ টাকায় পৌঁছায়।

একজন ব্যাংকার বলেন, রেমিট্যান্স কমে আসার প্রভাব পড়েছে খোলাবাজারে। ফলে আগের চেয়ে হুন্ডিতে বেশি আয় পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। একশ্রেণির বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বিদেশে বসে বেশি দামে প্রবাসী আয়ের সেই ডলার কিনে নেন। এর বিনিময়ে তারা দেশে প্রবাসীদের পরিবার বা উপকারভোগীকে টাকা দেন। এতে ডলার বিদেশেই থেকে যায়। এ ছাড়া অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নগদ ডলার কিনে রাখছেন বলে জানা গেছে। এটাও বাড়তি চাপ তৈরি করেছে।


সর্বশেষ সংবাদ