০৩ মে ২০২৪, ১২:৪৯

‘বাংলা কমান্ডে’ চলা ড্রোন নিয়ে হাজির একদল স্বপ্নবাজ তরুণ

‘আচার্য’ ড্রোন  © সৌজন্যে প্রাপ্ত

বিশ্বের হালনাগাদ সব প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি দেশে এ পরিবর্তন আসছে তরুণদের নানা উদ্যোগ আর প্রচেষ্টায়। তেমনি একদল তরুণ এবার বাংলা ভাষায় নির্দেশনা গ্রহণ করতে সক্ষম এমন একটি ড্রোন নিয়ে হাজির হয়েছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ‘আচার্য’ নামের ড্রোনটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বাংলায় কথা বলে (ভয়েস কমান্ডে)। বিশ্বের প্রথম ‘বাংলা কমান্ডে’ চলা ড্রোন এটি—দাবি উদ্ভাবক দলটির।

প্রজেক্টটির প্রধান উদ্যোক্তা এসএম ইশতিয়াক ইবনে সালাম ও তার টিম তৈরি করেছে বাংলা ভাষায় চালিত ড্রোনটি। এসএম ইশতিয়াক লালমনিরহাটে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক। তার সাথে এই প্রোজেক্টটিতে রয়েছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ৯ জন বিভিন্ন বর্ষের তরুণ শিক্ষার্থী। তাদের এই টিমের নাম ‘আর-পাস টাস্কফোর্স (RPAS Taskforce)’।

টিম লিডার এসএম ইশতিয়াক ইবনে সালামের সাথে অন্য তরুণ সদস্যরা হলেন—ঝলক ব্যানার্জি, হিমেল ইসহাক, তাসদিদ তাহসিন, সাইফুল ইসলাম রনি, বোরহান উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন সৈকত, মারুফ রায়হান, হলিজিত পাল, খালিদ সাইফুল্লাহ।

অন্য ড্রোন নিয়ন্ত্রণ করতে সাধারণত সেটির ব্যবহার আয়ত্ত করতে হয়—যা একটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু ‘আচার্য’ সিস্টেমটি নিয়ন্ত্রণ করতে এমন কোনও দক্ষতার প্রয়োজন নেই, শুধু বাংলায় কথা বলতে পারলেই হবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় চালিত ড্রোনটির পাইলট সিস্টেমটির নাম ‘আচার্য’। ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে বাংলা কণ্ঠস্বর শুনেই এটি পরিচালিত হয়। আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্কের (artificial neural network-ANN) মাধ্যমে এটিকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। যাকে অনেকে মডেল ট্রেনিং নামেও জানে। ‘আর-পাস টাস্কফোর্স’ টিমের তৈরি এই পাইলট সিস্টেমটি যেকোনো ধরনের ড্রোনে ব্যবহার উপযোগী। অন্য সাধারণ ড্রোনে সিস্টেমটি ইনস্টল করলে বাংলা ভয়েস কমান্ডে চালানো যাবে সেটিও।

ড্রোনটির উদ্ভাবক দলের দলনেতা এসএম ইশতিয়াক ইবনে সালাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে আলাপকালে বলেন, বাংলা ভাষায় সাধারণ মানুষ যেন এমন ধরনের প্রযুক্তি সহজভাবে ব্যবহার করতে পারে এ উদ্দেশ্যেই ড্রোনটি তৈরি করা। আর এই ড্রোনটি পরিচালনার জন্য বিদেশি কোনো ভাষা কিংবা ইংরেজি জানার প্রয়োজন নেই।

আরও পড়ুন: ওপেনএআইয়ের মতো সাইট নিয়ে হাজির বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্র

অন্য ড্রোন নিয়ন্ত্রণ করতে সাধারণত সেটির ব্যবহার আয়ত্ত করতে হয়—যা একটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু ‘আচার্য’ সিস্টেমটি নিয়ন্ত্রণ করতে এমন কোনও দক্ষতার প্রয়োজন নেই, শুধু বাংলায় কথা বলতে পারলেই হবে। এমনকি কথা বলতে পারা ছোট শিশুও চাইলে এটা ওড়াতে পারবে—বলে জানান তিনি।

ড্রোনটি ভয়েস কমান্ডে অপারেট করছেন টিম লিডার এসএম ইশতিয়াক ইবনে সালাম

ড্রোন সিস্টেমটির ‘আচার্য’ নামের বিশেষত্বে ইশতিয়াক ইবনে সালাম বলেন, আচার্য বলতে বুঝায় পণ্ডিত। আমরা ধারণা করি বাজারে অন্যসব ড্রোনের তুলনায় এই ড্রোনটি অ্যাডভান্স প্রযুক্তির তাই এটাকে আমরা নাম দিয়েছি আচার্য বা পণ্ডিত।

ড্রোনটির বানাতে কেমন ব্যয় হয়েছে জানতে চাইলে এ তরুণ জানান, ড্রোনটি তৈরিতে বিভিন্ন দেশ থেকে এর যন্ত্রাংশ আনতে হয়েছে। এছাড়া প্রথমে বেশ কয়েকবার ক্রাশ করে এটি। পরে পুনরায় নতুন করে কোড পাল্টে রান করতে হয়েছে। যার ফলে ড্রোনটির পিছনে হাজার পঞ্চাশের মত টাকা খরচ হয়েছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করলে এর খরচ অর্ধেকের বেশি কমে আসবে বলে জানান তিনি।

‘ম্যাস প্রোডাকশনে এমন ড্রোন তৈরি করা খুব একটা খরচ সাপেক্ষ বিষয় নয়। বাংলাদেশের চিপ লেবার মার্কেট ব্যবহার করে যেকোনো বিদেশি কোম্পানিকে খরচের দিক দিয়ে আমরা টেক্কা দিতে পারব’-ইশতিয়াক ইবনে সালাম

বাজারজাত করার পরিকল্পনা নিয়ে টিম লিডার ইশতিয়াক বলেন, এর মধ্যেই কিছু অর্ডার আসছে ড্রোনটি নেয়ার জন্য। অন্য কেউ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করলে আমরা দিতে পারবো। কারো যদি ড্রোন আগে থেকে থাকে আর সেটাকে বাংলা কমান্ডে চালাতে চায় তাহলে নাম মাত্র খরচে ড্রোন সিস্টেমটি নিতে পারবে।

টিম  ‘আর-পাস টাস্কফোর্স’র সদস্যরা

কোনো কোম্পানি বা ব্যক্তি যদি বড় কোনও ইনভেস্ট করে সেক্ষেত্রে ড্রোনটি তৈরির খরচ অনেক কমে যাবে। তিনি আরও জানান, ‘ম্যাস প্রোডাকশনে এমন ড্রোন তৈরি করা খুব একটা খরচ সাপেক্ষ বিষয় নয়। বাংলাদেশের চিপ লেবার মার্কেট ব্যবহার করে যেকোনো বিদেশি কোম্পানিকে খরচের দিক দিয়ে আমরা টেক্কা দিতে পারব’।