সর্বজনীন পেনশন বিতর্কের যে ব্যাখ্যা দিলো অর্থ মন্ত্রণালয়
আগামী জুলাই থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থায় যোগ দেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন আইনের আওতায় স্কিমটি আকর্ষণীয় এবং আর্থিক নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর। বুধবার (২০ মার্চ) এক বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নতুন চাকরিজীবীদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয় এ ব্যাখ্যা দিল।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আগামী জুলাইয়ের পর স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থার চাকরিতে যারা যোগদান করবেন, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় ‘প্রত্যয়’ স্কিমে যুক্ত করা হবে। গত ১৩ মার্চ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিম চালু হলেও বিদ্যমান কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না বরং তাদের বিদ্যমান পেনশন বা আনুতোষিক সুবিধা অক্ষুণ্ন থাকবে। তবে যাদের ন্যূনতম ১০ বছর চাকরি অবশিষ্ট আছে, তারা চাইলে প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
সরকারের এই নতুন সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা বলছেন, এ প্রজ্ঞাপন কার্যকর হলে বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চরম বৈষম্যের শিকার হবেন। একই বেতন স্কেলের আওতাধীন শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য সরকারের ভিন্ন নীতি সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশনের প্রজ্ঞাপনে চরম হতাশায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা
অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিদ্যমান ব্যবস্থায় খুব কমসংখ্যক স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা ও তাদের অধীন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে পেনশন স্কিম আছে। এ ধরনের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীরা আনুতোষিক স্কিমের আওতাভুক্ত এবং তাদের জন্য প্রদেয় ভবিষ্য তহবিলের (সিপিএফ) ব্যবস্থা প্রযোজ্য। এ ব্যবস্থায় কর্মচারীরা চাকরি শেষে অবসর সুবিধা হিসেবে এককালীন আনুতোষিক পান। কিন্তু মাসিক পেনশন পান না। ফলে অবসরোত্তর জীবনে প্রায় ক্ষেত্রেই আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কর্মচারীদের অবসরোত্তর জীবনের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা দিতে বিদ্যমান ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে সরকার ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রবর্তন করেছে। প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা প্রাপ্ত মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকার মধ্যে যা কম, সেই অঙ্ক তাদের বেতন থেকে কাটা হবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা দেবে। এর পর উভয় অর্থ জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত কর্মকর্তা বা কর্মচারীর পেনশন আইডির বিপরীতে জমা করবে। এ প্রক্রিয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেনশন ফান্ড গঠিত হবে এবং সেই ফান্ড থেকে পেনশন দেওয়া হবে।
এতে বলা হয়, বিদ্যমান সিপিএফ ব্যবস্থায় কর্মচারী মূল বেতনের ১০ শতাংশ এবং প্রতিষ্ঠান মূল বেতনের ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ দেয়। তবে প্রত্যয় স্কিমে প্রতিষ্ঠান মূল বেতনের ১০ শতাংশ দেবে; সিপিএফ ব্যবস্থা থেকে যা ১ দশমিক ৬৭ বেশি। প্রত্যয় স্কিমে একজন ব্যক্তি একটি প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর নিজ বেতন থেকে মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং প্রতিষ্ঠান একই পরিমাণ টাকা ৩০ বছর চাঁদা দিলে অবসরের পর অর্থাৎ ৬০ বছর বয়স থেকে মাসিক ৬২ হাজার ৩৩০ টাকা হারে পেনশন পাবেন। ৩০ বছর ধরে মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা হারে চাঁদা দিলে কর্মচারীর নিজ বেতন থেকে দেওয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়াবে ৯ লাখ টাকা এবং সংস্থা জমা করবে আরও ৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর সর্বমোট চাঁদার পরিমাণ হবে ১৮ লাখ টাকা। তিনি যদি ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন, তবে ১৫ বছরে পেনশন পাবেন ১ কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার ৪০০ টাকা, যা নিজ জমার ১২ দশমিক ৪৭ গুণ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পেনশনের সুবিধা আজীবন মিলবে বলে এ অঙ্ক আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্য মুনাফার হার বাড়লে মাসিক পেনশনের পরিমাণ আরও বাড়বে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের যাবতীয় খরচ সরকার নির্বাহ করবে বলে চাঁদাদাতার আইডিতে জমাকৃত অর্থ এবং বিনিয়োগ থেকে আয় সম্পূর্ণ চাঁদাদাতার অ্যানুইটি হিসাবায়নের মাধ্যমে মাসিক পেনশন নির্ধারণ করা হবে। জমা করা চাঁদার ওপর বিনিয়োগ রেয়াত পাওয়া যাবে এবং প্রাপ্য পেনশন আয়করমুক্ত হবে। স্কিমটি রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিযুক্ত হওয়ায় এটি শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ। এ স্কিমে নিবন্ধিত কর্মচারী পেনশনযোগ্য বয়সে উপনীত হওয়ার পরবর্তী মাস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাঁর ব্যাংক হিসাবে মাসিক পেনশনের অর্থ পাবেন। মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে তাদের এ বিষয়ে অবহিত করা হবে। এ ক্ষেত্রে তাঁকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো দপ্তরে যাওয়ার বা কোনো ধরনের প্রমাণ দেখানোর প্রয়োজন হবে না।