ওপেনএআইয়ের মতো সাইট নিয়ে হাজির বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্র
আর্টিফিশিয়ার ইন্টিলিজেন্ট (এআই) প্ল্যাটফর্মের মতো সম্প্রতি বাংলাদেশের কয়েকজন শিক্ষার্থী নতুন একটি এআই সাইট তৈরি করেছেন। নতুন এ সাইটটিতে এআই চ্যাটবট ছাড়াও অডিও, ভিডিও, কোড, টেক্স—সব ধরনের কাজের সমাধান করা যাবে। তাদের এ সাইটে নাম রাখা হয়েছে ‘ক্রিটো’। প্রতিষ্ঠানটির ফাউন্ডারদের দাবি, তারাই বাংলাদেশে প্রথম মাল্টি মডাল এআই প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে তাঁরা জানায়, দেশের মানুষকে এআই ফ্রেন্ডলি করা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এআই সুবিধার বিস্তার ঘটাতে চান। একটি প্রতিষ্ঠান তাঁদের তৈরি এপিআই দিয়ে অডিও, ভিডিও, কোডসহ সব ধরনের কাজ করতে পারবে।
২০২৩ এর মাঝামাঝি তাঁরা তাদের প্রথম বেটা ভার্সন লঞ্চ করেন। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় ও তাদের পরিচিত মানুষজন এটি ব্যবহার করছিলেন। এরপর গত অক্টোবরে তাঁরা ক্রিটো প্ল্যাটফর্মের আল্টিমেট ভার্সন লঞ্চ করেন। এখন তারা পর্যাপ্ত সংখ্যক ফ্রি এবং পেইড ব্যবহারকারী পাচ্ছেন। তারা জানায়, প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বর্তমানে এক হাজারের মত ব্যবহারকারী রয়েছেন। তবে ক্রিটোর নিয়মিত ব্যবহারকারী ৩০০-৪০০ জনের মতো।
২০২২-এর শুরুর দিকে আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহরুখ জায়েদ আর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আরিফুজ্জামান রায়হান নামের এ দুজন শিক্ষার্থী প্রথম একটি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ শুরু করেন। সে সময় তারা পোর্টফোলিও ক্রিয়েশন ও কন্টেন্ট কপিরাইটের ক্ষেত্রে এআই ইমপ্লিমেন্টেশনের কাজ করছিলেন।
শাহরুখ জায়েদ বলেন, তখন আমরা জেনারেটিভ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে জানতে পারি। তখন থেকে জেনারেটিভ এআই নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করি। জানতে পারি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের অসাধারণ ক্ষমতার ব্যাপারে। তারপর ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মের আইডিয়া ড্রপ করে এআইয়ের দিকে ফোকাস শুরু করি। উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের স্টার্টআপ শুরু করার উদ্দেশ্যেই এই প্লাটফর্মের পরিকল্পনা করেছি।
পরে তাদের সঙ্গে ফাউন্ডার হিসেবে ইন্ডিয়ার পাঞ্জাবের লাভলি প্রোফেশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা করা পার্থ সাহা নামে আরেকজন যুক্ত হন। বর্তমানে ফাউন্ডারদের বাইরে তাদের ১১ জন অফিস স্টাফ রয়েছেন। এর বাইরে আরও ৭-৮ জন ফ্রিল্যান্সার ক্রিটোর রিমোট নিয়ে নিয়মিত কাজ করেন।
প্রথমদিকে তারা শুধু টেক্সট বেজড আউটপুট নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। পরে কয়েক মাসের গবেষণা ও কাজের পর প্ল্যাটফর্মটিকে মোটামুটি একটা পর্যায়ে নিয়ে আসেন তারা। যেখানে এআইকে যেকোনো প্রশ্ন করলে সে উত্তর দিতে পারে, লেখালেখি বিষয়ক যেকোনো সাহায্য করতে পারে। এমনকি বাংলা ভাষায়ও কাজ করা যায় ‘ক্রিটো’র ব্যবহারে।
শাহরুখ জায়েদ বলেন, শুরুর দিকে আমরা টেক্সট ব্যবহার করে আর্টিকেল বানানো, ব্লগ লেখা, ই-মেইল লেখা ইত্যাদি ফিচার তৈরি করতে থাকি। এক পর্যায়ে গিয়ে টেক্সট বেজড আউটপুট ছাড়াও অন্য সকল মডালিটি নিয়ে রিসার্চ করা শুরু করি। তখন টেক্সটের পাশাপাশি টেক্সট দিয়ে ছবি তৈরি করা, লেখা থেকে স্পিচ তৈরি করা, কোড জেনারেট করা এসকল ফিচারও যুক্ত হতে থাকে। প্ল্যাটফর্মটি এক পর্যায়ে একটি জেনারেটিভ মাল্টিমডাল প্ল্যাটফর্মে প্রাথমিক রূপ পায়।
প্রসঙ্গত, ওপেনএআই হলো একটি আমেরিকান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান। এটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই ইনকর্পোরেটেড এবং সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই লিমিটেড পার্টনারশিপ নিয়ে গঠিত। ওপেনএআই বন্ধুত্বপূর্ণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রচার ও বিকাশের জন্য গবেষণা পরিচালনা করে।
সংস্থাটি ২০১৫ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে স্যাম অল্টম্যান, রিড হফম্যান, জেসিকা লিভিংস্টন, ইলন মাস্ক, ইলিয়া সুটস্কেভার, পিটার থিয়েল এবং অন্যান্যদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যারা সম্মিলিতভাবে এই প্রতিষ্ঠানে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেন। মাস্ক ২০১৮ সালে বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেন, তবে তিনি এখনও প্রতিষ্ঠানটির সাথে দাতা হিসেবে যুক্ত আছেন।