ব্যবহৃত ল্যাপটপ কেনার আগে যা জানতে হবে
বর্তমানে ডিজিটালাইজেশনের ফলে ল্যাপটপ-কম্পিউটারের চাহিদা বেড়েছে বহুগুণ। পড়াশোনা থেকে শুরু করে ব্যবসা সবকিছুতে প্রয়োজন এটি কিন্তু বর্তমান বাজার দরে এবং ডলারের মানের উর্ধ্বগতিতে এর দাম বেড়েছে অনেক। যা অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের হাতের নাগালের বাইরে। তাই স্বল্পমূল্যের ব্যবহৃত ল্যাপটপের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে পুরোনো ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে তারেকের মতো অনেকেই বিভিন্ন ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হন। আর তাই পুরোনো ল্যাপটপ কেনার সময় বেশ কিছু বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
দোকান সিলেকশন:
আপনি যখন একটি সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ কিনবেন ভাবছেন কিনা প্রয়োজন হয়তো আপনি ঠকবেন কি জিতবেন, আদৌ টাকা দিয়ে প্রোডাক্ট পাবেন কি না, পেলেও সেটা ভালো হবে না খারাপ তার একটি বড় অংশ নির্ভর করছে আপনি কোন শপ থেকে নিচ্ছেন সেটির উপর এবং আপনার ভাগ্য কতটুকু ভালো। নিরাপদ থাকার জন্য এবং একটি ভাল মানের প্রোডাক্ট কালেকশনের জন্য বা ঝুকি এড়ানোর জন্য যতটুকু সম্ভব খোজ খবর নেওয়া উচিত। যতটুকু সম্ভব আপনার পরিচিত আত্মীয়/বন্ধু/প্রতিবেশীর মধ্যে কেও কিনেছে কি না এরকম ল্যাপটপ সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করুন। এরকম কিছু জানলে বা কেউ কিনে থাকলে, তার ল্যাপটপটি সম্ভব হলে ঘেটে দেখুন। এরপর যদি আপনার পছন্দ হয় তাহলে পছন্দ হলে দোকান সম্পর্কে জানুন।দোকান যত জনপ্রিয়,পুরনো,সেটি তত বিশ্বস্ত ও ভালো হওয়ার কথা। হুট করে নতুন অচেনা কারো থেকে কেনা,ডিল করা,যাচাই বাছাই না করে কেনার মত ভুল কাজ করবেন না। নিজ এলাকার মধ্যে দোকান খোজার চেষ্টা করুন। কেও যদি কোনো পজিটিভ রিভিউ দেয় বা কোনো দোকান সাজেস্ট করলে একবারে বিশ্বাস না করে বরং সে সেই দোকান থেকে কিনেছে কি না, সম্ভব হলে দোকান স্বশরীরে ভিজিট করে যাচাই করুন। মনে রাখবেন এই সেক্টরে আপনি ভালো দোকান/ইম্পোর্টা র এর সন্ধান ও পেতে পারেন, অচেনা অজানা প্রতারক দ্বারা প্রতারিত ও হতে পারেন। আপনারা অবশ্যই পারতপক্ষে এই ফেসবুক ক্রয়-বিক্রয় পেজ গুলো এড়িয়ে চলুন। কেননা এই সমস্ত পেজগুলো থেকে অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন যা খুবই হতাশাজনক।
ওয়ারেন্টি পলিসি- সার্ভিস ওয়ারেন্টি এর আসল কাহিনী:
আপনি যখন এই সমস্ত প্রোডাক্ট কিনবেন তখন অবশ্যই এই ধরনের প্রোডাক্ট কেনার আগে এগুলোর ওয়ারেন্টি পলিসি সম্পর্কেওর্কে ভালোমত ধারণা থাকতে হবে। মোটামুটি বাংলাদেশে যতগুলো সোর্স থেকে,যত গুলো চক্র/সিন্ডিকে ট এর মাধ্যমে এই ল্যাপটপ গুলো আসে বা যতগুলো দোকান সেল করে। এগুলো প্রত্যেকটারই ওয়ারেন্টি পলিসি প্রায় একই রকম। তা হলোঃ এক বছরের সার্ভিসর্ভি ওয়ারেন্টি, ৭ দিনের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি। এক বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি শুনে পাঠক হয়তো খুশি হতে পারেন যে বাহ ভালো তো;পুরাতন ল্যাপটপেও এক বছর ওয়ারেন্টি পাচ্ছি খুবই ভালো কথা। কিন্ত এখানে একটি বিষয় আছে, সার্ভিসর্ভি ওয়ারেন্টিকে অনেকেই যা ভেবে থাকেন, একে রিপ্লেসমেন্ট/পার্টস ওয়ারেন্টি এর সাথে মিলিয়ে ফেলেন। প্রকৃতপক্ষে সার্ভিসর্ভি চার্জ বলতে বোঝানো হয় উক্ত ওয়ারেন্টি পিরিয়ডে প্রোডাক্ট এর কোনো পার্টস নষ্ট হলে ,কোনো পার্টস সারানো দরকার হলে,এসেম্বলি, Disassembly, cleaning, কোনো পার্টস লাগাতে হলে দোকান এই disassembly,সারিয়ে দেওয়া,রিপেয়ার করা, disassembly, cleaning ইত্যাদি বাবদ কোনো টাকা নেবে না, কিন্ত যেকোনো পার্টস নষ্ট হলে/রিপ্লেস,নতুন লাগাতে হলে তার দাম ঠিকই ক্রেতাকেই বহন করতে হবে।
রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টিই মুলত আসল ওয়ারেন্টি:
আপনাদের কি ইতিমধ্যেই বলেছি যে সার্ভিসর্ভি ওয়ারেন্টি মুলত চোখের ধুলো ছাড়া আর কিছু না। সেক্ষেত্রে বোঝা যাচ্ছে এই ল্যাপটপগুলোর মুল ওয়ারেন্টি হচ্ছে সেই ৭ দিন বা ১৫ দিনের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি।। এই সময়ের মধ্যে ল্যাপটপের কোনো সমস্যা হলে,কোনো Faulty parts থাকলে ল্যাপটপ চেঞ্জ করে দেবে দোকান। কিন্ত আসলে তা হয় না। কারণ দেখা যায় এইসব ল্যাপটপের দোকানগুলোতে ৯,১০ টা ল্যাপটপ থাকে, তাও একটি মডেল একটার বেশি আসে না একবারে। সেক্ষেত্রে আপনি ল্যাপটপের সমস্যা হলে ফেরত দিতে গেলে নতুন (অর্থা ৎর্থা একই মডেল এর অন্য ল্যাপটপ) পাবেন না । কারণ তাদের কাছে আপনার ইউনিটটি একটিই ছিল যেটি আপনি কিনে ফেলেছেন। এক্ষেত্রে দেখা যায় দোকা নদার পা র্টসটিই চেঞ্জ করে দেয়। এই ঘটনাও যে রাতারাতি খুবই দ্রুত সম্পন্ন হয় এমন ও নয়, বরং এসব পুরাতন ল্যাপটপের পার্টস খুজে বের করা, অর্ডা র দিয়ে আনার জন্য ও সময় লাগে বেশ। মোটকথা নষ্ট হলে ওয়ারেন্টিতে দিলেও ক্রেতাকে বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয়।সেই পার্টস যে সবসময় পাওয়াই যাবে সে কথাও নিশ্চিতভাবে কখনোই বলা যায় না।
কেনার সময় স্পেসিফিকেশন ও মডেল চেক:
আপনার পছন্দ হওয়া মডেলটির নাম দোকানদার যা বলছে ও প্রকৃতপক্ষে ডিভাইসে কি registration করা আছে কিনা সেটি মিলিয়ে নিন অপরদিকে একই সাথে স্পেসিফিকেশন টাও চেক করে নেবেন। ল্যাপটপটি চালুকরুন, এরপর উইন্ডোজ স্টার্ট থেকে Sysinfo টাইপ করুন। system information সিলেক্ট করুন। এখানে সবকিছুই পেয়ে যাবেন। আপনার সেই ল্যাপটপের মডেল কি, ব্রান্ড কোনটা। components সেকশনে ডিসপ্লে অংশে কোনো discrete গ্রাফিক্স আছে কি না চেক করতে পারবেন। সাধারণত দোকানে আপনাকে শুধুজেনারেশনই বলবে,এক্ষেত্রে প্রসেসর এর exact নামটাও চেক করে নিন কারণ একই জেনারেশনে একাধিক ভ্যারিয়েন্ট এর core i3,i5,i7 হোয়ে থাকে যেগুলোর স্পেসিফিকেশন,স্পিড,পারফর্মেন্সর্মে আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। এছাড়াও ডিসপ্লে রেজুলু জু শন টাও চেক করে নিন।
ব্যাটারি:
আপনি অবশ্যই ওই দোকানে বসে ল্যাপটপটি কিছুক্ষণ চালিয়ে দেখুন। ব্যাটারি কতটুকু, কি পরিমাণ ড্রেইন হচ্ছে, অতিরিক্ত ড্রে ইন হচ্ছে কি না বুঝার চেষ্টা করুন। যদি দেখেন নিমিষেই ব্যাটারি লেভেল নেমে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ব্যাটারিটি ড্যামেজ অবস্থায় থাকার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। এমন কিছু খেয়াল করলে অবশ্যই সেই ল্যাপটপটি নেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
ল্যাপটপের এডাপ্টর ও চার্জিং:
দোকানি আপনাকে ল্যাপটপের সাথে যেই এডাপ্টার দিচ্ছে সেটি ল্যাপটপের সাথে কানেক্ট করুন, দেখুন চার্জ নিচ্ছে কি না। চার্জিং স্লো নাকি নরমাল,সেটিও চেক করুন। এক্ষেত্রে আমি বলবো ব্যাটারির হেলথ ঠিক রাখার জন্য যেহেতু সঠিক এডাপ্টর ব্যবহার করা জরুরি, সেজন্য আপনার ল্যাপটপের মডেলটি ইন্টারনেটে সার্চ করে সেটা র সাথে কত ওয়াটের এডা প্টর রয়েছে ও দোকানদার আপনাকে কত ওয়াটের এডাপ্টর দিচ্ছে সেটি মিলিয়ে নিন। এতে করে আপনার ল্যাপটপের লঙ্গিবিলিটি বেড়ে যাবে। আরেকটি বিষয় ল্যাপটপটিতে যদি দেখেন চার্জার ছাড়া চালু হচ্ছে না ও দোকানদার যদি বলে যে চার্জ নেই, চার্জ দিলেই চালুহবে,সেক্ষেত্রেও এই ল্যাপটপটি না নে ওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
কেননা চার্জার ছাড়া চালুনা হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে যে ল্যাপটপটির ব্যাটারি ড্যামেজ হয়ে গিয়েছে। এটি কনফার্ম করতে চার্জা র লাগিয়ে চালুকরুন, ১০ মিনিট চালিয়ে রাখুন। চার্জ বাড়ছে কি না লক্ষ রাখুন ও একটা সময় গিয়ে কেবলটি খুলে দিন, এতেও যদি ল্যাপটপ চালুথাকে সেক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে ব্যাটারিটি ঠিকই আছে। কিন্ত যদি আপনি দেখেন যে এডাপ্টর খুলে ফেলার সাথে সাথে ল্যাপটপটি অফ হয়ে যাচ্ছে,সেক্ষেত্রে এটা নিশ্চিত হয়ে যাবেন যে এই ল্যাপটপটির ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই এই ল্যাপটপটি আপনাকে না নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ল্যাপটপের ডিসপ্লে, বডি:
ল্যাপটপটির ডিসপ্লে চালুও বন্ধ অবস্থায় ভালো মত inspect করুন। কো নো দাগ আছে কি না, কোনো scratch, damage আছে কি না। ডিসপ্লে তে দাগ, physical damage, scratch থাকলে সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে যে ডিসপ্লে চালুঅবস্থায় incorrect color,color border,pixel missing,color-hole ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাধারণত এরকম সমস্যাগুলো দিনে দিনে বৃদ্ধিবৃ পায়, অর্থাৎ একটি দাগ থেকে অনেকগুলো দাগ, বা color hole এর সাইজ ও বাড়তে থাকে। এজন্য এটি ভালোমত দেখে নেওয়া উচিত। এমনটি যদি আপনার নজরে আসে তাহলে এই ল্যাপটপটি এড়িয়ে চলুন। বডিতে স্ক্র্যা চ,দাগ রয়েছে কি না দেখুন। এই ধরনের ল্যাপটপে বডিতে দাগ থাকা, damage/scratch থাকা খুবই স্বাভাবিক কেননা এগুলো সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ। নিচের অংশে বা পেছনের দিকে কোনো screw মিসিং রয়েছে কি না, Hinge টি ভাঙ্গা/ঢিলা কি না সেটিও ভালো মত দেখে নিন।
কিপ্যাড, টাচপ্যাড:
সেকেন্ডহ্যান্ড ল্যাপটপের ক্ষেত্রে আপনাকে আরও একটি বিষয়ে নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরী এক্ষেত্রে দেখে নিন টাচপ্যাড ভালোমত কাজ করছে কি না, রেস্পন্সিভ কি না। টাচপ্যাড দিয়ে কার্সরর্স মুভমেন্ট smooth,precise কি না। ক্লিক করেও দেখুন। এর পরে আপনি কিবোর্ড চেঞ্জ করার জন্য একটি text document চালুকরে অথবা keyboard tester সাইটে গিয়ে সবগুলো Keys চেক করে নি ন। এই ধরনের ল্যাপটপে এক বা একাধিক Keys নষ্ট/কাজ না করার সম্ভাবনা থাকে। কী বোর্ডেরর্ডে কোন সমস্যা থাকলে আপনি ওখান থেকে বুঝতে পারবেন।
ল্যাপটপের হার্ড ড্রাইভ and DVD Writer:
ল্যাপটপটিতে কতটুকু স্টোরেজ রয়েছে অর্থা ৎর্থা কত গিগাবাইট/টেরাবাইট হার্ড ড্রাইভ রয়েছে তা চেক করুন। অনলাইনে সার্চ করে অফিশিয়াল সাইটের সাথে মিলিয়ে নিন (অনেকক্ষেত্রে রিজিয়ন অনুসারে ব্রান্ডগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্টোরেজ সাপ্লাই করে বিভিন্ন জায়গায়,সেক্ষেত্রেও সাইটে সবগুলোই উল্লেখ থাকে)। আর যে কাজটি অবশ্যই করবেন, সেটি হচ্ছে হেলথ চেকিং। Hard disk sentinel নামক app টি নামিয়ে নিন ঝটপট। চালুকরে দেখে নিন সেই ল্যাপটপটির Hard Drive এর অবস্থা কি, Health কতটুকু ভালো আছে, Bad sectors আছে কি না। হেলথ যদি ৯০+ থাকে, খুবই ভালো। যদি বেশিই কম থাকে, সেক্ষেত্রে সেই ল্যাপটপ নেওয়াটা কিছুটা ঝুকি হয়ে যাবে (তবে এর মানে এই না যে খুব দ্রুতই নষ্ট হয়ে যাবে হেলথ কম থাকলে, তবে বেশি থাকলে অবশ্যই ভালো। আর যেটি চেক করবেন ,সেটি হচ্ছে ডিভিডি রাইটার। রাইটারটি ঠিক আছে কি না,অর্থা তর্থা ডিস্ক রিড করতে পারছে কি না +eject করলে ঠিকমত eject হচ্ছে কি না।
ল্যাপটপের টেম্পারেচার:
প্রয়োজনে আপনার দোকানে বসে ল্যাপটপটি ৫,১০ মিনিট ব্রাউজার/ভিডিও প্লেয়ার/অফিস/ইউটিউব ভিডিও প্লেব্যাক ইত্যাদি সাধারণ টাস্কগুলো টেস্ট করুন আর এ সময়ে speccy/hwmonitor এর মত সফটওয়্যার দিয়ে চেক করুন। যদি অল্পতেই CPU টেম্পারেচার ৮০,৯০ ছুই ছুই হয়ে যায় এসব সফটওয়্যার চালালে তাহলে সেই ল্যাপটপটি দিয়ে ভারি কাজ করা এক প্রকার অসম্ভব ও ঝুকিপুর্ণ হর্ণ য়ে যাবে। তাই আপনি যদি এমন কোন কিছু খেয়াল করে থাকেন তাহলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় অন্য আরেকটি ল্যাপটপ দেখতে পারেন।