‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ইন্টারনেট ‘সংযোগহীন’ জনসংখ্যার দেশ
যুক্তরাজ্যভিত্তিক তথ্য-প্রযুক্তি সেবা ও মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ডেটা রেফারেন্স লাইব্রেরি-র ২০২৩ সালের ‘গ্লোবাল ডিজিটাল ওভারভিউ রিপোর্ট’ বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ ইন্টারনেট সুবিধার ‘বাইরে’ অবস্থান করছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, বিপুল এ সংখ্যার জনগণ ইন্টারনেট সেবা-বঞ্চিত থাকার ফলে সরকারের ২০১০ সালের ঘোষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এখন অবস্থান করছে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ইন্টারনেট ‘সংযোগহীন’ জনসংখ্যা দেশ হিসেবে।
প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে ১০ কোটি ৫১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে রয়েছে। যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬১.১ শতাংশ। ফলে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগহীন জনসংখ্যার দিক থেকে চতুর্থ বৃহৎ জনগোষ্ঠীর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশে।
তবে প্রতিবেদনের তথ্য বলছে বাংলাদেশে বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। দেশে ২০২২ সালের শুরুতে ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে ছিল ১১ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ; যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৮.৫ শতাংশ। এছাড়াও গত বছর দেশে প্রায় ৯৪ লাখের বেশি মানুষ ইন্টারনেট সুবিধার আওতায় এসেছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ ইন্টারনেট সংযোগের বাইরে রয়েছে ভারতে। সেখানে এ বছরের শুরুতে ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে ছিল ৭৩ কোটির বেশি মানুষ। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীন; যেখানে ইন্টারনেট সংযোগের বাইরে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩৭ কোটি মানুষ।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওকলার র্যাঙ্কিং বলছে, ইন্টারনেটের গতিতে পাক-ভারতের সাথেও পারছে না বাংলাদেশ। তারা বলছে, বিগত বছরের নভেম্বরে মোবাইল ইন্টারনেটের গড় গতিতে বিশ্বের ১৪২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১৯তম।
ওকলা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেটের গতি কেমন, তা তুলে ধরে মাসভিত্তিক ‘স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০২১ সালে এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ তালিকার শেষ দিকে ছিল। তালিকায় বাংলাদেশের পেছনে অবস্থান ছিল জিম্বাবুয়ে, ফিলিস্তিন, ভেনেজুয়েলা ও আফগানিস্তানের মতো দেশের।
ওকলার তথ্য বলছে, বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটে গড় ডাউনলোড গতি ছিল ১৩ দশমিক ৯৫ এমবিপিএস (মেগাবিট প্রতি সেকেন্ডে), যা এক বছর আগে একই মাসে ছিল ১০ দশমিক ৪২ এমবিপিএস। দেশে আপলোডের গতি ছিল ৮ এমবিপিএসের নিচে, যা বেড়ে ৯ এমবিপিএস ছাড়িয়েছে। ২০২১ সালের নভেম্বরে ১৩০তম অবস্থান ছিল বাংলাদেশের। নতুন অবস্থানে সেখান থেকে উন্নতি ১১ ধাপ।
তবে দেশের ইন্টারনেট অপারেটররা বলছেন, তারা সেবার মান বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে বড় পদক্ষেপটি হলো তরঙ্গ কেনা। অপারেটরগুলো প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার তরঙ্গ কেনে ২০২১ ও ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত। তারা এই তরঙ্গের বড় অংশ নেটওয়ার্কে বসিয়েছে। পাশাপাশি অপারেটরগুলো টাওয়ার নামে পরিচিত বেজ ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) বাড়িয়েছে। টাওয়ারগুলো অপটিক্যাল ফাইবার কেবল (বিশেষ তার) দিয়ে সংযুক্তও করা হচ্ছে বলেও জানায় তারা।
ওকলার তথ্যমতে, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পেছনে আছে নেপাল (১২১) ও আফগানিস্তান (১৪২তম) মোবাইল ইন্টারনেটে গতির দিক দিয়ে। ভারত ১০৫, পাকিস্তান ১১৪, শ্রীলঙ্কা ১১৮ ও মালদ্বীপ ২২তম অবস্থানে রয়েছে। তালিকার শীর্ষে আছে কাতার, তাদের গড় ডাউনলোড গতি ১৭৬ এমবিপিএস বলেও জানায় তারা।
ওকলার হিসেবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতিতে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০২তম। ব্রডব্যান্ডে বাংলাদেশের গড় ডাউনলোড গতি ৩৪ দশমিক ৮৫ এমবিপিএস এবং আপলোড গতি ৩৭ দশমিক ৪১ এমবিপিএস। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশের পেছনে আছে শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মালদ্বীপ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। আর এগিয়ে আছে ভারত।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য বলছে, দেশে নভেম্বর শেষে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সাড়ে ১২ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ।