০৬ নভেম্বর ২০২২, ১৫:১৩

ঢাকায় বসছে এবারের প্রোগ্রামিংয়ের বিশ্বকাপ, উদ্বোধন মঙ্গলবার

প্রোগ্রামিংয়ের বিশ্বকাপের সব আয়োজন শেষ, এবার উদ্বোধনের পালা  © টিডিসি ফটো

প্রোগ্রামিংয়ের অলিম্পিয়াড খ্যাত ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্টের (আইসিপিসি) এবারের চূড়ান্ত পর্বের (ওয়ার্ল্ড ফাইনাল-২০২২) আয়োজক হয়েছে বাংলাদেশ। ৪৫তম এই আসর আজ ৬ নভেম্বর থেকে আগামী ১১ নভেম্বর ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় অনুষ্ঠিত হবে। 

আগামী ৮ নভেম্বর (মঙ্গলবার) আইসিপিসির ৪৫তম আসরের উদ্বোধন করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এখানেই ১০ নভেম্বর বেলা ১১টায় শুরু হবে মূল প্রতিযোগিতা। ছয় ঘণ্টাব্যাপী এ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন প্রশ্ন বা সমস্যার সমাধান করতে হবে। পরীক্ষা পরিচালনা করবেন আইসিপিসির বিচারক পর্ষদ।

পুরো প্রতিযোগিতা হবে ইন্টারনেটযুক্ত কম্পিউটারে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা সমাধান করা দলকে ওয়ার্ল্ড ফাইনাল বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। পুরস্কার হিসেবে বিজয়ী দল পাবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, সনদ এবং ১৫ হাজার ডলার। অঞ্চলভিত্তিক সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ১২টি দলকে বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হবে। সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া চারটি দলকে স্বর্ণপদক দেওয়া হবে। পঞ্চম থেকে অষ্টম স্থানের জন্য রৌপ্য এবং নবম থেকে দ্বাদশ স্থানের জন্য আছে ব্রোঞ্জ পদক।

প্রোগ্রামিংয়ের বিশ্বকাপের সব আয়োজন শেষ, এবার উদ্বোধনের পালা

১১ ডিসেম্বর সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের পুরস্কার দেবেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এর আগে ৭ নভেম্বর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মহড়ার পাশাপাশি দলগুলোর  নিবন্ধন সম্পন্ন করে কনসার্ট আয়োজন করা হবে। ৮ নভেম্বর হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ৯ নভেম্বর হবে মহড়া। আজ রবিবার (৬ নভেম্বর) আইসিটি টাওয়ারের সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

তরুণ প্রজন্মের জন্য প্রতি বছর বিশেষভাবে আয়োজিত হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (আইসিপিসি)’। বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মর্যাদাপূর্ণ এই প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার গত আসরে (৪৪তম) এশিয়া-ওয়েস্ট রিজিয়নে (পশ্চিমাঞ্চলে) প্রথম স্থানের অর্জনসহ বাংলাদেশের তিন বিশ্ববিদ্যায়ের স্থান হয়েছিল। রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত এই পর্বে বিশ্বের ১১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল অংশ নিয়েছিলেন।

এবার ৪৫তম আসরে স্বাগতিক বাংলাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এবার ৭০টি দেশের ১৩৭টি দল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানজনক একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা হলো আইসিপিসি। আইসিপিসি আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের বেলর বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে এ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে আইসিপিসি ফাউন্ডেশন।

এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ এ ইভেন্টের আয়োজন করছে এবং চীন, জাপান এবং থাইল্যান্ডের পর বাংলাদেশ এশিয়ার মাত্র চতুর্থ দেশ যারা এ ইভেন্টের আয়োজক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।

আইসিপিসির যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সাল থেকে। যদিও ১৯৭৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এ আয়োজনের দায়িত্বে ছিল কম্পিউটারের বৈজ্ঞানিক গবেষণার অন্যতম বৃহৎ ও পুরোনো প্রতিষ্ঠান অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্পিউটিং মেশিনারি (এসিএম)।

আইসিপিসি প্রতি বছর দু’টি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। ১ম পর্বে বিশ্বের ৮টি অঞ্চল থেকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিজয়ীরা চূড়ান্ত (ওয়ার্ল্ড ফাইনাল) পর্বে অংশ নেয়। আইসিপিসি, ঢাকা বিশ্বের ৮টি অঞ্চলের মধ্যে এশিয়া-পশ্চিম অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বের ৮টি অঞ্চল থেকে আঞ্চলিক পর্বে বিজয়ী দলগুলো এবছর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় আইসিপিসি এর চূড়ান্ত পর্বে (ওয়ার্ল্ড ফাইনাল) অংশ নেবে।

এই আয়োজন উপলক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ২০১০ এর আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) পড়ানো হতো না। আমরা ২০১০ এ ৬ষ্ঠ শ্রেণির থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করি। আমরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানাতে শুরু করি, যার ফলাফল আজকের বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, আমরা মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য সারাদেশে ৩০ হাজার আইসিটি ল্যাব স্থাপন করি। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ৩০০ টি স্কুল অব ফিউচার স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন, যার সুফল আগামী দিনে পাওয়া যাবে। যেখানে আমাদের ছেলে-মেয়েরা ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানাতে পারবে বলেও জানান তিনি।

পলক বলেন, বর্তমানে দেশে তথ্য প্রযুক্তি খাতে কাজের সুযোগ অনেক বেড়েছে। সরকার ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানাতে সব ধরনের সহায়তা করছে। তিনি বলেন, বর্তমানে যার ফলে আমাদের দুই হাজার সফটওয়্যার কোম্পানি রয়েছে। তিন শতাধিকেরও অধিক বিপিও কোম্পানি হয়েছে এবং আমাদের দেশে বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ২ মিলিয়নেরও অধিক মানুষের। এছাড়াও, আমাদের হাজারেরও উপরে ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে তথ্য প্রযুক্তি খাতে। 

আরও পড়ুন: স্নাতকোত্তরে ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ দিচ্ছে সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়

তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য তথ্য প্রযুক্তি খাত থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি খাতে দেশে ৩ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। পাশাপাশি সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে আইসিটি খাত থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য নিয়েছে। সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইনোভেটিভ আইটি ল্যাব স্থাপন করছে। তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবেলায় মেধার কোন বিকল্প নেই, মেধাকে কাজে লাগিয়ে জয় করতে হবে এ বিপ্লব। দেশের উদ্যোক্তাদের সরকার সবসময়ই সহায়তা করতে প্রস্তুত। তাদের আইডিয়াকে ব্যবসায়িক রূপ দিতে সরকার সহায়তা করছে বলেও জানান তিনি। 

আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৪৫তম ‘আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস ঢাকা’ উপলক্ষে বাংলাদেশে ২০০ জন আইসিপিসি রিজিওনাল কনটেন্ট ডিরেক্টর ছাড়াও আসবে দেশি বিদেশি এক হাজারের বেশি অতিথি। তারা জানিয়েছে, সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের নেতৃত্বে আইসিপিসি’র ৪৫তম আসরের নির্বাহক এজেন্সি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এবং বাংলাদেশের থেকে হোস্ট ইউনিভার্সিটি ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি)।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আয়োজনে প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন আইসিপিসি ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং আইসিপিসি নির্বাহী পরিচালক ড. উইলিয়াম বি. পাউচার। এছাড়াও প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ, আইসিপিসির উপনির্বাহী পরিচালক ও আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস কনটেস্ট এর পরিচালক ড. মাইকেল জে. ডোনাহ্, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য ও আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস ঢাকার পরিচালক অধ্যাপক কামরুল আহসান।

পাশাপাশি, হুয়াওয়ের কর্পোরেট কমিউনিকেশনস বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিকি ঝ্যাং, জেট ব্রেইন এর বিনিয়োগ বিভাগের এসভিপি এবং গবেষণা ও শিক্ষা বিষয়ক বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট অভে ইভ্যানও এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এর নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমারও উপস্থিত ছিলেন প্রেস ব্রিফিংয়ে।

আরও পড়ুন: আগামী বছর থেকে ৩০০টি স্কুলে চালু হবে কুমন শিক্ষাক্রম: পলক

এবারের আসরে বাংলাদেশ থেকে মোট ৮টি দল অংশগ্রহণ করবে। চূড়ান্ত পর্বকে লক্ষ্য করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ চলতি বছরের অক্টোবরে আয়োজন করে বিশেষ প্রশিক্ষণের। তাদের লক্ষ্য, এবারের আয়োজনেও বাংলাদেশ থেকে ভালো অর্জন করবে দেশের হয়ে অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীরা।