কালি: ৩ হাজার কোটি টাকার বাজার, পুরোটাই আমদানি নির্ভর

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © ফাইল ফটো

ছাপাখানা, কম্পিউটার ও ইঙ্কজেট প্রিন্টার এবং কলম তৈরি, দেশে এই চার খাতেই বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার কালির ব্যবহার হয়। আর এর সিংহভাগ আসে আমদানি থেকে। দীর্ঘ দিন ধরে বিদেশি উৎসেই নির্ভর করে আছে এত বড় একটি খাত। সরকারি কোনো বেসরকারি বড় বিনিয়োগ হয়নি এখন পর্যন্ত।

আমদানিকৃত কালির বিরাট অংশ ব্যবহার হয় ছাপাখানায়। রাজধানী ঢাকার দুই হাজারসহ দেশের প্রায় ১৫ হাজার ছাপাখানায় অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার কালি প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ বই, সংবাদপত্র, পোস্টার, পণ্যের মোড়ক, ব্যানার, ক্যাশমেমো ছাপতে এই কালির ব্যবহার হয়। বাংলাদেশ কালি প্রস্তুতকারক মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানায়।

দেশের সবচেয়ে বড় ছাপাখানা ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের। বছরে কোম্পানিটির ১০০ কোটি টাকার কালি দরকার পড়ে যার পুরোটাই দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি ও চীন থেক আমদানি করে তারা।

আরও পড়ুন: পড়াশোনায় মন নেই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুদে

বাংলাদেশ কালি প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি ও দেশের একমাত্র কালি উৎপাদক কোম্পানি টোকা ইংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মোমেন জানান, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপসহ ৮০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা নিজেদের ছাপাখানার জন্য বিদেশ থেকে কালি আমদানি করে থাকে। দেশে একটিমাত্র কালি উৎপাদনকারী কোম্পানি রয়েছে যারা বছরে মাত্র ১০ কোটি টাকার কালি উৎপাদন করতে সক্ষম।

সমিতির তথ্য মতে, ফুজি ইংক, আকিজ গ্রুপের নেবুলা ইংক লিমিটেড, এআর ট্রেডিং কোং, মাস্টারপ্যাক লিমিটেড, খান ডাইটেক, নিউ রেসুলি স্ক্রিন প্রিন্টিং, প্রাইমটেক্স, পিলক্রো গ্লোবাল, কিউরে প্রোডাক্ট, রোসাফি সিম্বল বিসনেস কোং,স্বচ্ছ ট্রেড হাউস বাংলাদেশ, এসকে ট্রেড লিংক, রয়্যাল ইংক, নিশান ইংক-নিশান পেইন্ট অ্যান্ড অটোলাকিউর কোং এবং এভারটেক্স ইংক ইন্টারন্যাশনালসহ বহু প্রতিষ্ঠান ছাপাখানার কালি আমদানি করে থাকে।

আরও পড়ুন: অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা অনলাইনে নিতে চায় গাহর্স্থ্য অর্থনীতি কলেজগুলো

কালির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার হয় কম্পিউটার প্রিন্টিংয়ে। বছরে এই কাজের জন্য প্রায় ৮৫০ কোটি টাকার কালি আমদানি করতে হয়। কম্পিউটার প্রিন্টিংয়ের কালি আমদানিতে প্রায় ৭০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের মধ্যে আকিজ গ্রুপের নেবুলা ইংক লিমিটেড, নিউ রেসুলি স্ক্রিন প্রিন্টিং, পিলক্রো গ্লোবাল, এসকে ট্রেড লিংক, রয়্যাল ইংক, নিশান ইংক-নিশান পেইন্ট, এভারটেক্স ইংক ইন্টারন্যাশনাল এবং সোভিয়েত মেশিনারিজ লিমিটেড অন্যতম। ব্যবসায়ীদের মতে, কম্পিউটার প্রিন্টিংয়ে জাপানের ফুজি ইংকের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

কলম তৈরি

কলম প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো বছরে ১০০ কোটি টাকার কালি আমদানি করে। দেশের ৪০টি কলম প্রস্তুতকারক কোম্পানির মধ্য সর্ববৃহৎ ম্যাটাডোর ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডেরই বছরে ৫০ কোটি টাকার কালির প্রয়োজন হয়।

ম্যাটাডোর ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শাহ আলম জানান, তাঁর কোম্পানি দেশের ও আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য মোট ২৩ ধরনের কলম তৈরি করে।

ম্যাটাডোর বছরে দেশে ও দেশের বাইরের বাজারে ৩০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করে থাকে।

অন্য কলম উৎপাদনকারীদের মধ্য রয়েছে এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় ইকোনো বলপেনের উৎপাদনকারী জিকিউ গ্রুপ, ক্যাপটেন পেন, মেরিট বলপেন, টপ-টেন বলপেন, জননী বলপেন, উইনার, গুড লাক পেন, রোজ পেন, আইডিয়াল বলপেন, চকো চকো বলপেন এবং আইকন বলপেন।

একমাত্র উৎপাদক টোকা ইংক বাংলাদেশ লিমিটেড দেশের মাটিতে কালি উৎপাদন করলেও কাঁচামাল সব আমদানিই করতে হয়। তাদের কালি ছাপাখানা ও কলম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

অন্যদিকে জার্মানির কোম্পানি সিইগওয়ের্ক বিদেশ থেকে সব কাঁচামাল এনে শুধুমাত্র সংমিশ্রণের কাজটি বাংলাদেশে করে। ১৯৯০ সাল থেকে কোম্পানিটি দেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে।

এ ছাড়া ২০১৯ সালে জাপানভিত্তিক কোম্পানি সাকাতা ইংক্স মেঘনা ইনডাস্ট্রিয়াল জোনে ১৫ বিঘা জায়গার ওপর তাদের কারখানা করছে। অবকাঠামোর কাজ প্রায় শেষের পর্যায়ে। দেশে কালি উৎপাদনের লক্ষ্যে তারা এক কোটি মার্কিন ডলারের মতো বিনিয়োগ করেছে।

১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠিত পুরান ঢাকার বৈশাখী প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোবারক হোসাইনের মতে, প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি কালি ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কারণ, এতে বেশি ছাপা হয় এবং ছাপার মানও ভাল হয়।

এদিকে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন জানিয়েছেন এখন পর্যন্ত তিনি তাঁর আমলে দেশের কোনো কালি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণের প্রস্তাব পাননি। তবে কয়েকটি বিদেশি কয়েকটি কোম্পানি এই খাতে কারখানা করার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ