দেশে কোটিপতি ব্যাংক হিসাব নম্বরধারী বেড়েছে
কয়েক মাস ধরেই মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি। শুরুতে আমানতে কিছু ভাটার টান থাকলেও ধীরে ধীরে আমানত বাড়ছে ব্যাংকগুলোতে। ব্যাংকখাতে গ্রাহকদের আস্থা ফিরছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে গত এপ্রিল মাসে আমানত বেড়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, এপ্রিল মাস শেষে ব্যাংক খাতের আমানত দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৪৮ লাখ কোটি টাকা। মার্চ মাসে এটি ছিল ১৫ দশমিক ২৩ লাখ কোটি টাকা। মূল্যস্ফিতির মধ্যেও জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে কোটি টাকার বেশি ডিপোজিট (আমানত) থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় ২৪৬টি বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ শেষে ১ লাখ ১০ হাজার ১৯২টি অ্যাকাউন্টে এক কোটি টাকার বেশি জমা রয়েছে। এরমধ্যে ৭৬ হাজার ৭৯০টি বা ৭০ শতাংশই আছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩ হাজার ৮০১টি অ্যাকাউন্ট রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোতে রয়েছে। বাকিগুলো বিশেষায়িত ও বিদেশি ব্যাংকগুলোতে আছে। ডিসেম্বরে কোটি টাকার বেশি ডিপোজিট থাকা অ্যাকাউন্ট ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, মার্চ মাস শেষে ব্যাংকখাতে ১৪ কোটি ১১ কোটি অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ডিপোজিট জমা আছে ১৬ দশমিক ১৩ লাখ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৬ দশমিক ৯১ লাখ কোটি টাকাই জমা আছে কোটিপতি অ্যাকাউন্টগুলোতে, যা মোট ডিপোজিটের ৪২ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
মার্চ শেষে এসব অ্যাকাউন্টগুলোতে মোট জমার পরিমাণ ডিসেম্বরের তুলনায় বেড়েছে ১৩ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। এ সময়ে পুরো ব্যাংকখাতে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। সে হিসেবে নতুন ডিপোজিটের ৫৩ শতাংশই গিয়েছে কোটিপতি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।
ব্যাংকাররা বলেছেন, মূল্যস্ফীতির মধ্যে ব্যবসায়ে উচ্চ মুনাফা হওয়ার কারণে এ ধরনের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্টগুলোতে ডিপোজিটের পরিমাণ বেড়েছে। এদিকে অ্যাকাউন্টে অন্তত এক কোটি টাকা আছে, অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকায় নেই, এমন ব্যক্তির সংখ্যা আরও বেশি।
২০২০ সালের শুরুর দিকে দেশে কোভিড-১৯ মাহামরির পর থেকেই এ ধরনের কোটিপতি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 'তফসিলি ব্যাংক পরিসংখ্যান' প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এ ধরনের অ্যাকাউন্ট সংখ্যায় ২ হাজার কমে ১ লাখ ৬ হাজারে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কোটি টাকার অ্যাকাউন্টধারী ব্যক্তিদের কোনো পরিসংখ্যান নেই। বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, এ ধরনের ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশ; আর বাকিগুলো দেশি-বিদেশি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট বাড়া মানে কোটিপতির সংখ্যা বাড়া, সেটি কেমন আমরা জানি না। প্রাতিষ্ঠানিক কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু আমাদের ঋণও বেড়েছে। ফলে কোটিপতি অ্যাকাউন্টগুলোর বিপরীতে কেমন ঋণ আছে, সেটি পাওয়া গেলে পুরো চিত্রটি পরিষ্কার হবে।