১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২০:১৬

অলংকার ছাড়াও যেসব খাতে রয়েছে সোনার ব্যাপক চাহিদা

সোনার বার  © সংগৃহীত

সোনা মানেই যেন গহনা অনেকের কাছে বিষয়টি এখানেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সোনার ব্যবহার গহনার বাইরে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিস্তৃত। প্রযুক্তি শিল্প থেকে শুরু করে চিকিৎসা, মহাকাশ গবেষণা, এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ব্যবস্থাপনাতেও সোনার ভূমিকা অপরিহার্য। কারণ সোনা শুধু টেকসই নয়, এটি বিদ্যুতের অন্যতম সেরা পরিবাহী এবং রাসায়নিকভাবে স্থিতিশীল। ফলে বহু শিল্পক্ষেত্রে এর বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন।

অলংকার ছাড়াও যেসব সেক্টরে সোনার চাহিদা সবচেয়ে বেশি-

ইলেকট্রনিকস শিল্প
আজকের বিশ্বে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, টেলিভিশন যেকোনো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসেই সোনার উপস্থিতি রয়েছে। কেননা সোনা দ্রুত ও স্থিতিশীলভাবে বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে, মরিচা ধরে না এবং দীর্ঘদিনেও কর্মক্ষমতা কমে না। মাইক্রোচিপ, সিম কার্ড, ক্যামেরা সেন্সর, প্রসেসর, কানেক্টর, সার্কিট বোর্ড প্রভৃতিতে এটি ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে বিশ্বের মোট সোনা ব্যবহারের প্রায় ১০–১২% যায় ইলেকট্রনিক্স শিল্পে।

চিকিৎসা ও ডেন্টাল সায়েন্স
চিকিৎসা প্রযুক্তিতে সোনা ব্যবহার করা হয় এর শরীর বান্ধব বৈশিষ্ট্যের কারণে। ডেন্টাল ক্রাউন ও ব্রিজ, ইমপ্ল্যান্ট, পেসমেকার ও অন্যান্য মেডিকেল ডিভাইস, ক্যানসার চিকিৎসায় ন্যানো গোল্ড থেরাপি এবং উচ্চ-সংবেদনশীল ডায়গনস্টিক টেস্টের ক্ষেত্রে সোনা ব্যবহৃত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সোনা শরীরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না এটাই চিকিৎসা খাতে এর চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে।

ফাইন্যান্স ও রিজার্ভ
শত শত বছর ধরে সোনা অর্থনৈতিক নিরাপত্তার প্রতীক। আজও বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো রিজার্ভ হিসেবে সোনা ধরে রাখে। কেননা সংকটকালে সোনার দাম বাড়ে, মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলায় সোনা নিরাপদ এবং ডলারের বিকল্প হিসেবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সোনার গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সোনা রিজার্ভ আছে, যা জাতীয় অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখে।

মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা শিল্প
মহাকাশযানে তাপ নিয়ন্ত্রণে সোনা অপরিহার্য। সেটেলাইট, রকেট ও স্পেসক্রাফট, রেডিয়েশন প্রতিরোধ, অতিরিক্ত তাপ প্রতিরোধকারী আবরণ হিসেবে, সংবেদনশীল যন্ত্রপাতিকে সুরক্ষায় সোনা ব্যবহার হয়। এছাড়া উচ্চক্ষমতার প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও সোনা ব্যবহৃত হয়।

উচ্চমানের গ্লাস, সিরামিক ও ডেকোরেশন শিল্প
সোনার দ্রবণ ব্যবহার করে বিশেষ ধরনের লাল বা রুবি রঙের কাচ, তাপ প্রতিরোধী কাচ, প্রিমিয়াম মানের থালা বাসন ও সেরামিক প্রলেপে সোনা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি দেখতে আকর্ষণীয় এবং দীর্ঘস্থায়ী।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও আধুনিক গবেষণায় সোনা
সোলার প্যানেল, ফুয়েল সেল বা হাই-এফিসিয়েন্সি এনার্জি ডিভাইসে সোনার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। একই সঙ্গে গবেষণাগারে ন্যানোটেকনোলজি, কেমিক্যাল সেন্সর ও বায়োসেন্সরে সোনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ও বিলাসী পণ্য
যদিও এটি অলংকার নয়, তবুও বিলাসসামগ্রীর বাজারে সোনার ব্যবহার রয়েছে। প্রিমিয়াম ঘড়ি, বিলাসবহুল কলম, ডেকোরেটিভ অ্যাকসেসরি, স্পেশাল এডিশন ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ইত্যাদিতেও সোনার বহুল ব্যবহার রয়েছে।