মৌসুমের শুরুতেই পর্যটকের ঢল, পদে পদে প্রতারণার ফাঁদ!
বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তের কক্সবাজার আবারও প্রস্তুত হচ্ছে পর্যটনের রঙে রাঙাতে নিজেকে। অক্টোবর থেকে মার্চ এই সময়টাই দেশের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে শুরু হয় পর্যটন মৌসুম। ইতোমধ্যে ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজারো পর্যটক ভিড় করতে শুরু করেছেন এই সাগরনগরীতে। হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট—সবখানেই জমে উঠেছে ব্যবসার আমেজ। আনুমানিক হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে এ মৌসুমে, এমনটাই আশা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
তবে আনন্দের এ মৌসুমে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল। কারণ, পর্যটনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রতারণার নতুন নতুন কৌশল। অসাধু চক্রেরা নানা স্ক্যামের ফাঁদ পেতে বসে আছে পর্যটকদের টার্গেট করে।
বীচ বাইক থেকে টমটম সবখানেই অতিরিক্ত ভাড়া
পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাতায়াত খাতে। টমটম, সিএনজি, এমনকি ব্যাটারি চালিত বাইক—সবকিছুর ভাড়াই বেড়ে যায় কয়েকগুণ। অনেক সময় নির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে মুখে বলা হয় ‘দেখে দাম’—ফলে পর্যটকদের কাছ থেকে গলাধঃকরণ করা হয় অতিরিক্ত টাকা।
বীচের স্ক্যাম: ছবি, পণ্যের কেনাকাটায় ফাঁদ
সৈকতের বালুচরে দাঁড়িয়ে থাকা তথাকথিত ‘ফটোগ্রাফাররা’ অনেক সময় নির্ধারিত ছবির চেয়ে বেশি অর্থ দাবি করেন। পর্যটকদের অনভিজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে তারা পরে টাকা না দিলে তর্কে জড়ান বা বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেন।
একইভাবে বীচের ধারে বিক্রি হওয়া সামুদ্রিক শাঁস, মুক্তা, বা উপহার সামগ্রীর দোকানগুলোতেও চলে চড়া দামে বিক্রির প্রতিযোগিতা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব দোকানের অধিকাংশই মৌসুমি দোকানদারদের দখলে, যাদের মূল উদ্দেশ্য দ্রুত মুনাফা অর্জন।
হোটেল বুকিং ও অনলাইন প্রতারণা
প্রতি মৌসুমেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া হোটেল বুকিং পেজ খুলে প্রতারণার ঘটনা বাড়ে। অনেক পর্যটক অগ্রিম টাকা পাঠানোর পর খুঁজে পান না সেই হোটেল বা রুম। কক্সবাজার পর্যটন ব্যবসায়ী সমিতি জানিয়েছে, ‘এই মৌসুমেও এ ধরনের প্রতারণা রোধে তারা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তার মতে, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত সক্রিয় থাকবে। যেকোনো ভাড়া বা মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে তালিকা প্রকাশ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পর্যটকরা যেন হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য সৈকত এলাকায় সিসিটিভি নজরদারি ও মোবাইল পেট্রল টিম মোতায়েন করা হচ্ছে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আপেল মাহমুদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এখন বছরের প্রায় সবসময়ই কক্সবাজার সৈকত পর্যটকে মুখরিত হয়ে থাকে। আর সারাবছর ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের চাপ বাড়লে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা লাগে, যার জন্য যথেষ্ট জনবল নিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রস্তুত আছে।’
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, কোনো সেবা গ্রহণের আগে স্পষ্টভাবে মূল্য জেনে নেওয়া, অচেনা ব্যক্তিকে টাকা না দেওয়া, এবং জরুরি প্রয়োজনে পর্যটন পুলিশের সংশ্লিষ্ট হেল্পলাইনে যোগাযোগ করাই নিরাপত্তার সেরা উপায়।
কক্সবাজারের সমুদ্র এখন প্রস্তুত তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ করতে, কিন্তু সেই মুগ্ধতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা ফাঁদগুলো থেকেও সচেতন থাকা জরুরি। কারণ, আনন্দের ভ্রমণ যেন না হয়ে ওঠে তিক্ত অভিজ্ঞতা।