৩২ হাজার টাকা সর্বনিম্ন বেতনের প্রস্তাব
সর্বনিম্ন বেতন ৩২ হাজার টাকা নির্ধারণসহ বেশকিছু প্রস্তাবনা জাতীয় বেতন কমিশন–২০২৫ এর কাছে জমা দিয়েছে ‘১১–২০ গ্রেড সরকারি চাকরিজীবী ফোরাম’। বুধবার (২২ অক্টোবর) সচিবালয়ে বেতন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সংগঠনটির ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল এ প্রস্তাবনা জমা দেয়। ফোরামের সভাপতি লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি সভায় অংশ নেয়। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে, আশা করি ইতিবাচক ন্যায়সঙ্গত পে স্কেল পাবো’
ফোরামটি জানায়, একজন নিম্ন গ্রেডভুক্ত কর্মচারীর পরিবারে গড়ে ছয়জন সদস্য থাকে। বর্তমান বাজারদরের প্রেক্ষিতে প্রতিজনের দৈনিক খাদ্য ব্যয় ১৭৫ টাকা হিসেবে হিসাব করলে, একটি পরিবারের মাসিক খাদ্য ও পথ্য ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ৩১ হাজার ৫০০ টাকা। তাই বর্তমান বেতন কাঠামোতে এ ব্যয় মেটানো সম্ভব নয় বলে সংগঠনটি উল্লেখ করেছে।
প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোয় সর্বোচ্চ ১ম গ্রেডে বেতন ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন ১৩তম গ্রেডে ৩২ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ২য় গ্রেডে ১ লাখ ৩০ হাজার, ৩য় গ্রেডে ১ লাখ, ৪র্থ গ্রেডে ৯০ হাজার, ৫ম গ্রেডে ৮০ হাজার, ৬ষ্ঠ গ্রেডে ৭০ হাজার, ৭ম গ্রেডে ৬০ হাজার, ৮ম গ্রেডে ৫০ হাজার, ৯ম গ্রেডে ৪৫ হাজার, ১০ম গ্রেডে ৪১ হাজার, ১১তম গ্রেডে ৩৮ হাজার এবং ১২তম গ্রেডে ৩৫ হাজার টাকা বেতন নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
ফোরামের দাবি, বর্তমান বেতন কাঠামো নিম্ন ও মধ্যম পর্যায়ের কর্মচারীদের প্রতি অযৌক্তিকভাবে বৈষম্যপূর্ণ। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেতনের ব্যবধান দিন দিন বাড়ছে। যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। তাই কমিশনের প্রতি আহ্বান জানানো হয় ২০২৫ সালের নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের সময় নিম্ন ও মধ্য গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাস্তব জীবনের ব্যয়, বাজারদর ও মানবিক চাহিদার বিষয়গুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হোক।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, নিম্ন ও মধ্যম গ্রেডের সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার ব্যয় সামাল দিতে আবাসন, চিকিৎসা, শিক্ষা ও যাতায়াত ভাতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে হবে। ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় কর্মরতদের জন্য মাসিক বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৮০ শতাংশ, অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও সাভার ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা পর্যায়ে ৭০ শতাংশ এবং অন্যান্য এলাকায় ৬০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া চিকিৎসা ভাতা ৬ হাজার টাকা, শিক্ষা ভাতা (প্রতি সন্তান) ৩ হাজার টাকা, ধোলাই ভাতা ৬০০ টাকা এবং যাতায়াত ভাতা ১ হাজার ৭৫০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় কর্মরতদের জন্য ২ হাজার টাকা, ইউনিয়ন পর্যায়ে ২ হাজার টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা ২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিশেষ ক্ষেত্রে পাহাড়ি, দুর্গম বা উপকূলীয় অঞ্চলের কর্মচারীদের জন্য ৮০ শতাংশ হারে বাড়তি ভাতা এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিতদের জন্য অতিরিক্ত ২ হাজার টাকার ঝুঁকি ভাতা প্রস্তাব করা হয়।
সংগঠনটি আরও দাবি করেছে, পেনশন সুবিধা বর্তমান ৯০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ এবং আনুতোষিকের হার ২৩০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা করা হোক। পাশাপাশি পূর্বের মতো দুটি টাইমস্কেল ও দুটি সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল এবং সরকারি কর্মচারীদের জন্য নামমাত্র সুদে আবাসন ঋণ প্রবর্তনের দাবি জানানো হয়।
প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, সরকারি কর্মচারিদের ন্যায় স্বায়াত্তশাসিত কর্মচারিদের মতো অন্যান্য দপ্তরের কর্মচারীদেরও ৮০ শতাংশ সরকারি অনুদানসহ সহজ শর্তে আবাসন ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
ফোরাম আরও দাবি জানায়, ৯ থেকে ১৩ গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হোক। একইসঙ্গে শ্রম ভাতা, প্রশিক্ষণ ভাতা, পদোন্নতি ও অবসরকালীন ডিজিটাল সনদ প্রদানের সময় অতিরিক্ত এক মাসের বেতন প্রদানেরও দাবি জানানো হয়।
এছাড়া ৯ থেকে ১৩ গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সুযোগ বাড়ানো, সব দপ্তরে অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রবর্তন, কর্মচারীদের জন্য সরকারি পরিবহন সুবিধা চালু এবং প্রতিটি জেলার কেন্দ্রীয় শহরে সরকারি আবাসন প্রকল্প হাতে নেওয়ার প্রস্তাব জানানো হয়েছে।