৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:৩৭

নিজেদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উদ্যোক্তাদেরও ঋণ দিতে অনীহা ব্যাংকগুলোর 

এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে অনীহা দেখাচ্ছে ব্যাংকগুলো  © সংগৃহীত

এশিয়ার দেশ শ্রীংলকা, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ার জিডিপির অর্ধেক অবদান তাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই)। বাংলাদেশে এ চিত্র ভিন্ন। জিডিপিতে দেশের এসএমইদের অবদান মাত্র ২৮ শতাংশ। প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা না পাওয়া, সরকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা, অপ্রতুল অবকাঠামো, দক্ষতার স্বল্পতা, নীতি সহায়তা না পাওয়ার পাশাপাশি কঠিন শর্তাবলী, স্থানীয় ও বৈশ্বিক বাজার বুঝার সীমাবদ্ধতা এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকায় এ শিল্প পিছিয়ে রয়েছে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, আয় বৈষম্য হ্রাস, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উদ্যোক্তা তৈরির জন্য প্রায় এক যুগ আগে ব্যাংক কর্তৃক প্রশিক্ষণ প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সমন্বয়ে, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত সিসিপ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টে গঠিত প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন ইউনিট কর্তৃক তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সহায়তায় উদ্যোক্তা উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

এ প্রকল্পের আওতায় উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের প্রদানের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করে ৩১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কার্যক্রম শুরুর পর এখন পর্যন্ত ব‍্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ‍্যে উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ দিয়েছে মাত্র ১৬টি ব‍্যাংক এবং একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ১৮টি ব্যাচে ৪৪৭ জন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে তারা। তবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের মধ্যে সিএমএসএমই ঋণ দেওয়া হয়েছে মাত্র ২৬ জন উদ্যোক্তাকে। পরিসংখ্যানে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরও উদ্যোক্তাদের ঋণ দিয়ে ব্যাংকগুলোর অনীহার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।

উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের প্রদানের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করে ৩১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কার্যক্রম শুরুর পর এখন পর্যন্ত ব‍্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ‍্যে উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ দিয়েছে মাত্র ১৬টি ব‍্যাংক এবং একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ১৮টি ব্যাচে ৪৪৭ জন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে তারা। তবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের মধ্যে সিএমএসএমই ঋণ দেওয়া হয়েছে মাত্র ২৬ জন উদ্যোক্তাকে। পরিসংখ্যানে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরও উদ্যোক্তাদের ঋণ দিয়ে ব্যাংকগুলোর অনীহার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।

বিষয়টি হতাশাজনক বলে মনে করছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, এটি বেশ হতাশাজনক, যা বাংলাদেশে উদ্যোক্তা উন্নয়নে ব্যাংকিং খাতের কার্যকর ভূমিকার অভাবকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। এটি স্পষ্ট যে শুধু প্রশিক্ষণ দেওয়াই যথেষ্ট নয়। সুতরাং ঋণের আবেদন প্রক্রিয়া সরলীকরণ, জামানতের শর্ত শিথিল করা এবং খাত ভিত্তিক বিশেষায়িত ঋণ চালু করা অত্যন্ত জরুরি।

পাশাপাশি চেম্বার, ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবিলম্বে একযোগে কাজ করে উপযুক্ত উদ্যোক্তা বাছাই প্রক্রিয়াকে আধুনিক করা প্রয়োজন বলে মত তার। অন্যথায়, এ ধরনের উদ্যোগ কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থেকে যাবে এবং বাস্তব অর্থনৈতিক কোনো প্রভাব থাকবে না বলে তিনি মনে করেন।

আরও পড়ুন: বুটেক্সে এডিবির অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে ১৩ তলা বিশিষ্ট ভবন

ডিসিসিআই সভাপতি জানান, দেশের শিল্পখাতের প্রায় ৯০ শতাংশ সিএমএসএমই, যেখানে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ কর্মরত। তবে জিডিপিতে এ খাতের অবদান ২৮ শতাংশ। তিনি বলেন, আমাদের এসএমইরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঋণ সহায়তা পান না। এছাড়া অবকাঠামোর অভাব, দক্ষতার স্বল্পতা, নীতি সহায়তা না পাওয়ার পাশাপাশি কঠিন শর্তাবলী, বাজারে অভিগম্যতার সীমাবদ্ধতা এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকার মুখোমুখি হয়ে থাকেন। পাশাপাশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের জটিলতা, পণ্য মূল্যের উচ্চ হার, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার দক্ষতার অভাবও উদ্যোক্তাদের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করছে।

ব্যাংকের উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিয়ে সন্তুষ্ট নয় বাংলাদেশ ব্যাংকও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, এসএমই ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে আগে ব্যাংকগুলো বলতো, তারা ঋণ দেয়ার জন্য সত্যিকার উদ্যোক্তা পাচ্ছেন না। কিন্তু এ ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করার পরও ঋণ না দেয়ার বিষয়টি সন্তোষজনক নয়। তার কথায়, এ খাতে ঋণ দেয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি মানে বৈষম্য কমানো। এছাড়া কর্পোরেটের বড় ঋণের তুলনায় একই অঙ্কের টাকা অনেক উদ্যোক্তাদের দেয়া সম্ভব।

তিনি বলেন, যে সংখ্যক উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে তা কাঙ্ক্ষিত মনে হচ্ছে না। তার চেয়ে বড় আক্ষেপের বিষয় হলো- ব্যাংকগুলো যাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে তাদের ওপরই ভরসা করতে পাচ্ছে না। তাদের নিজেদের প্রশিক্ষণ দেয়া উদ্যোক্তাদের তারা ঋণ দিচ্ছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জোর দেয়া হচ্ছে, ব্যাংকগুলোর ঋণের চার ভাগের একভাগ যেন অবশ্যই এসএমই খাতের উদ্যোক্তা হতে হবে।