বাজেট উপস্থাপন শুরু, দেখুন সরাসরি
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন শুরু হয়েছে। সোমবার (২ জুন) বিকেল ৩টায় অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারে পূর্বে ধারণকৃত বাজেট বক্তৃতা তুলে ধরেন।
এটি বাংলাদেশের ৫৪তম বাজেট এবং অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে প্রণীত প্রথম বাজেট, যার নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এই বাজেটে কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি, রাজস্ব আহরণে দক্ষতা বৃদ্ধি, স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, ভ্যাট ও কর পরিশোধ ব্যবস্থা সরলীকরণ এবং ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ তৈরিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সরকার ভ্যাট আদায়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সম্পূরক শুল্ক কাঠামো সহজ ও যৌক্তিক করার লক্ষ্যে কিছু আইনি বিধান পরিবর্তনের কথাও ভাবছে।
গত বছরের তুলনায় এবার বাজেটের আকার ৭ হাজার কোটি টাকা কম, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঘোষিত বাজেট ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।
এবারের বাজেট বাস্তবায়নে কার্যকর আর্থিক পরিকল্পনার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতি, সামাজিক প্রভাব এবং বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রেখে একীকৃত ও সুষম পরিকল্পনার মাধ্যমে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমি এই বাজেটকে ছোট বলি না, তবে এটি বাস্তবায়নযোগ্য ও সময়োপযোগী। মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক বাণিজ্য, রিজার্ভ এবং রাজস্ব আহরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আমরা বিবেচনায় রেখেছি।”
নতুন বাজেটের আকার বর্তমান অর্থবছরের তুলনায় ০.৮৭ শতাংশ কম। উন্নয়ন খাতে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে, রাজস্ব বাজেট ২৮ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকায়।
রাজস্ব নীতিতে মুদ্রানীতির সঙ্গে কঠোর সমন্বয় সাধনের পাশাপাশি সংস্কার কমিশন ও টাস্কফোর্সের সুপারিশগুলো বাজেটে প্রতিফলিত হওয়ার কথা রয়েছে।
রাজস্ব বাজেটের ৫৭ শতাংশ ব্যয় হবে বেতন-ভাতা, ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ পরিশোধে। শুধু বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় ৮২ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে। সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতারও প্রস্তাব রাখা হতে পারে।
ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা হতে পারে, যার মধ্যে সুদ পরিশোধেই ব্যয় হবে রাজস্ব বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৪ শতাংশের নিচে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্ভাব্য ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় কম। এই ঘাটতি পূরণে সরকার বিদেশি ঋণ, ব্যাংক ঋণ এবং সঞ্চয়পত্রে নির্ভর করবে।
জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫.৫ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত ৫.২৫ শতাংশ থেকে কিছুটা বেশি। মুদ্রাস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ভাতাভোগীর সংখ্যা ও বরাদ্দ বাড়ানো হবে। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) বরাদ্দ ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় কম হলেও বিনিয়োগের গুণগত মানে জোর দেওয়া হবে।
বাজেটে ব্যবসা সহজীকরণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক করনীতি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা।
অনুন্নয়ন বাজেট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। এর বড় অংশই যাবে ঋণ পরিষেবা, খাদ্য ভর্তুকি এবং ব্যাংক খাত সংস্কারে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে আলাদা বরাদ্দ রাখা হবে।
বিদ্যুৎ, কৃষি ও সার খাতে ভর্তুকি অব্যাহত থাকবে। করনীতিতে এমন কিছু পরিবর্তন আসতে পারে, যা ব্যবসার ব্যয় হ্রাস করবে এবং উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উত্তরণে সহায়ক হবে।
সরকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখবে। বাজেটে কোনো জনসন্তুষ্টিমূলক অস্থায়ী ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর চাপ না পড়ে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, নতুন কোনো মেগা প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। শুধু মাতারবাড়ি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকবে, যা জাপানি ঋণে দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে। স্বল্পমেয়াদি বা উচ্চ সুদের ঋণ গ্রহণ করা হবে না।