শিক্ষা ক্যাডারে বড় পদোন্নতি শিগগির
পদোন্নতির সকল শর্ত পূরণ করেও বছরের পর বছর পদোন্নতি বঞ্চিত ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা’ ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে কোনো কোনো ব্যাচের কর্মকর্তারা দেড় যুগ ধরে একই পদে কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিন একই পদে কর্মরত থাকায় শিক্ষা ক্যাডারের মূল পদ সরকারি কলেজ শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ প্রেক্ষিত আসন্ন ঈদের আগেই দুই স্তরেই বড় ধরনের পদোন্নতি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আগামীকাল রবিবার (৯ মে) বিভাগীয় পদোন্নতির কমিটির (ডিপিসি) সভা বসছে। ওইদিন বেলা ১১টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন পদোন্নতি কমিটির সভাপতি ও মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
জানা গেছে, ঈদের আগেই ৩ হাজার ২৫৪ জন সহকারী অধ্যাপক পদোন্নতির খুশির সংবাদ পেতে পারেন। আর ঈদের পরে প্রভাষকদের পদোন্নতি দেয়া হবে। এ সংখ্যাও প্রায় তিন হাজারের মতো। সবমিলে দুই স্তরে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি কর্মকর্তার পদোন্নতির আশা করছে শিক্ষা ক্যাডার পরিবার।
সূত্র জানায়, অন্য ক্যাডারে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দেয়া হলেও শিক্ষা ক্যাডারে বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতি দেয়া হয়। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস জ্যেষ্ঠতা বিধিমালা ১৯৮৩ অনুসারে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিযোগ্য সহযোগী অধ্যাপকদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।
সহযোগী অধ্যাপকদের বিষয়ভিত্তিক শুন্য পদের বিপরীতে পদোন্নতির জন্য সরকারি কলেজ ও সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের সহকারী অধ্যাপকের তিন হাজার ৩০৩ জন কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে তিন হাজার ২৫৪ জন পদোন্নতিযোগ্য। পদোন্নতি দিতে আদালতের কোন বিধি নিষেধ নেই। সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিযোগ্য শিক্ষকের মধ্যে ৯৫ জন বেসরকারি থেকে আত্তীকৃত। আর বাকিরা সরসরি বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত।
২২ থেকে ২৬তম বিসিএস পর্যন্ত শিক্ষা ক্যাডারের সহকারী অধ্যাপক সবাইকে পদোন্নতির প্রস্তাব করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। ২৬তম ব্যাচ পর্যন্ত সবাইকে পদোন্নতি দিতে সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হবে না। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী প্রতি বছর ৫ শতাংশ ইনিক্রিমেন্ট পেয়ে বর্তমানে পঞ্চম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন তারা। এই সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজারের মতো।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে ৬৩৪ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর পদে আর কোনো পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। তবে গত বছর অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল।
জানা গেছে ২২তম ব্যাচের শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা ১৭ বছর, ২৩ থেকে ২৬তম ব্যাচের কর্মকর্তারা দীর্ঘ ১৫ বছর চাকরি করে মাত্র এক বার পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ ২২ থেকে ২৬তম ব্যাচেরর কর্মকর্তাদের ফিডার পূর্ণ হওয়া সত্বেও তারা পদোন্নতি পাচ্ছেন না। এরইমধ্যে ২৬তম ব্যাচের কর্মকর্তারা ৫ম গ্রেডের সমান স্কেলে বেতন ভাতা পাচ্ছেন। যে কারণে তাদের পদোন্নতি দিলেও সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যায় করতে হবে না। শুধু শিক্ষকদের পদ মর্যাদা বাড়বে।
২০০৮ সালে ২৭তম বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপসচিব (পঞ্চম গ্রেড) পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারাও নিয়মিত পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ একই ব্যাচের শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্তরা এখনও প্রভাষক। তারা ১৩ বছর ধরে একই পদে কর্মরত আছেন। অন্য ক্যাডারে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দেওয়া হলেও শিক্ষা ক্যাডারে বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতি দেওয়া হয়। এছাড়া নিয়মিত পদোন্নতি দেয়া হয় না। যে কারণে তারা বঞ্চিত হয়েছেন। নিয়মিত পদোন্নতি না হওয়ার কারণে পদোন্নতির জট সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
মাউশি প্রভাষকদের পদোন্নতির তালিকাও করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। ৩৩তম ব্যাচ পর্যন্ত ২ হাজার ৫২৮জন প্রভাষককে পদোন্নতি দিতে মাউশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এর মধ্যে সরাসরি ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক হলেন ২ হাজার ৪৩৭ আর আত্তীকৃত ৯১জন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি সূত্র জানায়, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সহযোগী অধ্যাপক ও সমমানের পদে (জাতীয় বেতন স্কেল,২০১৫ অনুযায়ী ৪৩,০০০/--৬৯,৮৫০/) যথাক্রমে মাউশির নয়টি, বিষয়ভিত্তিক ২ হাজার ২৬০, অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ ৭১টিসহ মোট ২ হাজার ৩৪০টি পদ রয়েছে। বর্তমানে উল্লেখিত পদসমূহের মধ্যে প্রশাসনিক, অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ ও বিষয়ভিত্তিক পদসহ মোট ২ হাজার ৩৪০টি পদ পূরণকৃত। বাকি ৩৬৪টি শূন্যপদ রয়েছে।
এছাড়া আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত আরো ২০ জন পিআরএলে যাবেন। এসব পদ শুন্য ধরেও অধ্যাপক পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৬০৯টি পদ শূন্যসহ মোট ৯৯৩টি পদ শূন্য রয়েছে। সহযোগী অধ্যাপক/সমমানের উক্ত ২ হাজার ২৬০টি পদের ১০ শতাংশ হিসেবে ২২৬টি রিজার্ভ পদের মধ্যে ১২৮টি শূন্য রিজার্ভ পদের বিপরীতেও পদোন্নতি প্রদানের সুযোগ রয়েছে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের প্রস্তাবিত সমন্বিত পদ সৃজনের ১২ হাজার ৪৭৯টি পদের মধ্যে সহযোগী অধ্যাপক পদ রয়েছে ৩৩০৮টি। সব মিলিয়ে মাউশির প্রস্তাব অনুযায়ী পদোন্নতি দিতে কোন সমস্যা নেই।
শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তারা জানান, বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতি দেয়ার কারণে এই ক্যাডারে পদোন্নতি প্রক্রিয়া খুব ধীর। কর্মকর্তাদের দাবি, এ ক্যাডারেও ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি চালু হোক। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে বর্তমানে ১৫ হাজার ৬৩৪ কর্মকর্তা কর্মরত। এই ক্যাডারে মোট পদ ১৭ হাজারের বেশি। এর মধ্যে প্রায় দুই হাজার ৮৯২টি পদ বর্তমানে। এই ক্যাডারে নতুন করে আরো প্রায় দুই হাজার পদ সৃজনের প্রক্রিয়া চলছে।
মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, আমরা চেষ্টা করছি অনেকটা ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে বিভাগীয় পদোন্নতির কমিটির মিটিং এর উপর। তারা রবিবারের মধ্যে ডিপিসি শেষ করলে খুব শিগগির পদায়নের আদেশ জারি হবে।