ইউটিউবে অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর, নকলে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা
করোনার কারণে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চলমান পরিস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পূর্বে ছাত্র-ছাত্রীদের যতটুকু পড়ানো হয়েছিল এর বাইরের বিষয়ে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, স্কুল বন্ধ হওয়ার পর সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান অব্যাহত রাখা হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থীর বাড়িতেই টিভি নেই। ফলে তারা কোনো ক্লাস করতে পারেনি। তাদের যতটুকু পড়ানো হয়েছিল তার মধ্য থেকেই অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে মূল্যায়ন করা দরকার ছিল। পাঠ্যসূচীর বাইরের বিষয়ে অ্যাসাইমেন্ট দেয়ায় গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষার্থী অসদুপায় অবলম্বন করে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে বগুড়া পুলিশ লাইন্স হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম ঝুনু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শহর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট করতে কোনো সমস্যা হবে না। কেননা তাদের সবার বাসাতেই টিভি ছিল। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের নিয়েই মূল সমস্যা হবে। তারা অ্যাসাইনমেন্ট করার জন্য নানা উপায় বের করবে। শুনেছি ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে শিক্ষার্থীরা উত্তরপত্র সংগ্রহ করছেন। এভাবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। কেননা সবার উত্তর একই রকম হলে তাদের মূল্যায়নও একই রকম হবে। ফলে পরবর্তী শ্রেণিতে কার কোন বিষয়ে সমস্যা সেটি বের করাই মুশকিল হয়ে যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশর প্রায় সব প্রত্যন্ত অঞ্চলেই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাসাইনমেন্টর উত্তর পেয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো ইউটিউব। শিক্ষার্থীদের অসহায়ত্বকে পূঁজি করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ইউটিউব চ্যানেল খুলে সেখানে প্রতি সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা সেখান থেকেই উত্তর নকল করে সেটিই জমা দিচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দ্যা স্টাডি হেল্পার বিডি (The Study Helper BD), মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Mechanical Engeneering), তালুকদার একাডেমি (Talukder Academy), দ্যা বেস্ট টিউটর (The Best Tutor), মি. গোল্ড লিফ হাসান, (Mr. Gold Leaf Hassan), বুস্টার ৪ইউ (Boster 4u) বাংলা মুভি ভিশন (Bangla Movie Vision) সহ প্রায় অর্ধশত ইউটিউব চ্যানেলে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর আপলোড দেয়া হচ্ছে। আর এখান থেকেই উত্তর লিখে তা জমা দিচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, সংসদ টিভিতে ক্লাস হলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তারা টিভিতে ক্লাস করতে পারেননি। ফলে গত মার্চ পর্যন্ত তাদের যে বিষয়গুলো পড়ানো হয়েছিল এর মধ্যে অ্যাসাইনমেন্ট দিলে তাদের প্রকৃত মূল্যায়ন করা হতো। তবে পড়ানো বাইরেরে বিষয়ে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়ায় তারা এখন বিভিন্ন মাধ্যম থেকে উত্তরপত্র সংগ্রহ করে সেটি লিখেই জমা দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার হাজী আমিনুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানান, করোনার বন্ধে সংসদ টিভিতে যে ক্লাস নেয়া হয়েছে, পরিবারের অন্য সদস্যদের টিভি দেখার কারণে আমি ক্লাসের সময় কাজে লাগাতে পারিনি। আমাদের ষষ্ঠ সপ্তাহে যে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছে তার অধিকাংশই আমরা ক্লাসে পড়িনি। তাই উত্তরগুলো ইউটিউব থেকে নিয়ে লিখে জমা দিবো।
আরেক শিক্ষার্থী জানান, বাসায় টিভি না থাকায় সংসদ টিভির ক্লাস করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া কোচিং ও প্রাইভেট বন্ধ থাকায় সোশ্যাল মিডিয়াই একমাত্র মাধ্যম। অ্যাসাইনমেনন্টের জন্য এক বন্ধুর স্মার্টফোনে ইউটিউব ব্যবহার করে তা লিখে জমা দিচ্ছি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কেউ যদি ইউটিউব কিংবা ফেসবুক থেকে উত্তর লিখে জমা দেয় তাহলে সেটি অনৈতিক হবে। আমরা শিক্ষার্থীদের কোন কোন বিষয়ে পড়ালেখায় গ্যাপ রয়েছে সেটি যাচাইয়ের জন্যই এই অ্যাসাইমেন্টের ব্যবস্থা করেছি।
সবাই যদি সব প্রশ্নের উত্তর সঠিক দেয় তাহলে সবাইকেই তো ‘অতি উত্তম’ দিতে হবে। তখন শিক্ষার্থীদের কোন বিষয়ে সমস্যা সেটি বুঝবেন কীভাবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব ছাত্র-ছাত্রীর মূল্যায়ন এক হবার সম্ভাবনা নেই। কেননা কেই কপি করে উত্তর দিলে শিক্ষকরা সেটি বুঝতে পারেন। ফলে ওই শিক্ষার্থীকে আবারও অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হয়। আর অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়নে কোনো শিক্ষক যদি গাফিলতি করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।