ক্লাসে প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় রোল থাকছে না!

বই দেখছেন শিক্ষার্থীরা
বই দেখছেন শিক্ষার্থীরা  © ফাইল ফটো

চলমান করোনা ভাইরাসের কারণে এ বছর মাধ্যমিকে বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করার কথা বলা হলেও মূল্যায়নের জন্য রাখা হয়নি কোনো নম্বর। বিদ্যালয় প্রধানরা বলছেন, ক্লাসে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয়সহ অন্যদের রোল নম্বর কীভাবে নির্ধারণ হবে, সে বিষয়ে তাদেরকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। সে হিসেবে পরবর্তী শ্রেণিতে মেধার ভিত্তিতে রোল নম্বর দেয়া ছাড়াই শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ করার চিন্তা-ভাবনা করছেন তারা।

তথ্যমতে, করোনার কারণে চলতি বছর মাধ্যমিকের বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ছাত্র-ছাত্রীদের অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়নের লক্ষে গত ৩১ অক্টোবর প্রথম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়নের কথা বলা হলেও মূল্যায়নের জন্য কোনো নম্বর রাখা হয়নি। চারটি পদ্ধতিতে মূল্যায়নের সূচক ধরা হয়েছে। ‘অতি উত্তম’, ‘উত্তম’, ‘ভালো’ এবং ‘অগ্রগতি প্রয়োজন’। যদিও মাউশি বলছে, করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় যে গ্যাপ পড়েছে সেটি খুঁজে বের করতেই অ্যাসাইমেন্ট দেয়া হয়েছে। যেন পরবর্তী শ্রেণিতে সেই বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্যাপ পূরণ করা যায়। অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়নের কোনো মাপকাঠি নয়।

এদিকে পরবর্তী শ্রেণিতে ছাত্র-ছাত্রীদের রোল নম্বর নির্ধারণ করা নিয়ে বিপাকে রয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা বলছেন, মূল্যায়নের জন্য যে চারটি সূচক নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, সেখানে একটি সূচকে একাধিক শিক্ষার্থীর নাম আসলে তাদের সবার রোল নম্বর নির্ধারণ করা নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে। কেননা একই সূচকে একাধিক শিক্ষার্থী থাকলে তাদের সবার রোল নম্বর এক রাখা সম্ভব না। এছাড়া মাউশি থেকে এখনো কোনো দিক নির্দেশনা না আসায় এই বিষয়ে তারা কোনো সিদ্ধান্তও নিতে পারছেন না।

এ প্রসঙ্গ মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আমাদের যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা নিয়ে আমরা নিজেরাও সংশয়ের মধ্যে আছি। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের যে চারটি সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে; তার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের পরবর্তী শ্রেণিতে রোল নম্বর নির্ধারণ করা সম্ভব হবে না।

রোল নম্বর নির্ধারণে আমাদের কোনো দিক নির্দেশনা দেয়া হয়নি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, একটি সূচকে যদি ১৫ জন শিক্ষার্থী মূল্যায়িত হয়, তাহলে তাদের সবার রোল নম্বর এক দিতে হবে। যা অসম্ভব। ফলে মূল্যায়নের সূচকে রোল নম্বর দেয়া যাবে না। হয়তো পূর্ববর্তী রোল নম্বরই থাকবে অথবা রোল নম্বর ছাড়াই পরবর্তী শ্রেণিতে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতে হবে।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাউশি থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়নের যে সূচক বেধে দেয়া হয়েছে সেভাবে মূল্যায়ন করা হলে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের রোল নম্বর দেয়া সম্ভব হবে না। কেননা একটি সূচকে একের অধিক শিক্ষার্থী থাকতে পরেন। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পূর্বের শ্রেণির রোল পরবর্তী শ্রেণিতেও অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক শাখা) অধ্যাপক মো. বেলাল হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের রোল নম্বরের বিষয়টি তুলে দেয়ার বিষয়ে কাজ করছি। ভবিষ্যতে রোল নম্বর দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়ন করা হবে না। তবে এ বছর এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

অধ্যাপক মো. বেলাল হোসাইন আরও বলেন, আমরা অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কাজ করছি। রোল নম্বরের বিষয়টি নিয়ে মাউশিতে এখনো আলোচনা হয়নি। তবে যে বিষয়গুলো সামনে এসেছে সেগুলো বিবেচনা করলে ছাত্র-ছাত্রীদের পরবর্তী শ্রেণিতে রোল নম্বর ছাড়াই উত্তীর্ণ করা লাগতেও পারে। অথবা পূর্বের শ্রেণির রোল নম্বর পরবর্তী শ্রেণিতেও বিদ্যমান থাকতে পারে। এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।


সর্বশেষ সংবাদ