শোলোক: একটি ডিজিটাল দেয়ালিকার গল্প
ছোটবেলায় যখন ঘুম আসতো না, আমাদের মায়েরা শোলোক বলা কাজলা দিদির কথা শুনাতেন। শুনাতেন রাজা-প্রজাদের হারিয়ে যাওয়া সাম্রাজ্যের কল্পকাহিনী। মূলত ‘শোলোক’ শব্দটির সাথে তখন থেকেই আমরা সবাই পরিচিত। কেনই বা হবোনা, এমন কেউ নেই যে সেই শোলোক বলা কাজলা দিদির কথা শুনিনি।
সেখানে ‘শোলোক’ এর অর্থ গল্প শোনানো বা বলা। আবার ‘শোলোক’ বা ‘শ্লোকের’ আভিধানিক অর্থ হলো স্তবক। তেমনি ভাবে কাব্যিক বিন্যাসের মাধ্যমে জনপ্রিয় সৃজনশীল ম্যাগাজিন শোলক শুরু থেকেই শুনিয়ে যাচ্ছে সেই না বলা মানুষের ছোট গল্পগুলো।
শোলোক মূলত একটি ডিজিটাল ওয়াল ম্যাগাজিন বা দেয়ালিকা। যেকোনো প্রান্তের মানুষ যুক্ত হতে পারে ভার্চুয়াল এই জ্ঞান চর্চাকেন্দ্রে। যে কেউ চাইলেই তুলে ধরতে পারে তার লেখা ও তার সুপ্ত প্রতিভা।
শোলোকের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয় ০১ অক্টোবর, ২০২০ তারিখে। শুন্য থেকে শুরু করা এই প্লাটফর্ম ইতোমধ্যে প্রকাশ করে ফেলেছে ১০০টি পর্ব। এসব পর্বের মূখ্য বিষয়বস্তু ছিলো কবিতা, ছোটগল্প, সংক্ষিপ্ত জীবনী, বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা, ফটোগ্রাফি, বই রিভিউ, সিরিজ গল্প ইত্যাদি। এসব বিষয়বস্তুর মাধ্যমে শোলক সবার মাঝে বৈজ্ঞানিক তথ্যাদি ও সাহিত্যের রস পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করে। তুলে ধরে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে যারা প্রকাশ্যে আসতে ইতস্ততবোধ করেন। বিনোদনের জন্য বিভিন্ন ধরণের শব্দজট ও কার্টুন কমিক্স-ও প্রকাশ করা হয় এই ডিজিটাল দেয়ালিকায়।
বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মকান্ডকে তুলে ধরার জন্য শোলক নিয়মিত প্রকাশিত পর্বের পাশাপাশি কিছু বিশেষ পর্বের আয়োজনও করে। এ পর্যন্ত মোট ৪টি বিশেষ পর্বের আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে তুলে ধরা হয়েছে কিছু তরুণ-তরুণীর গল্প যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে মূর্খতার গন্ডি থেকে বেরিয়ে শিক্ষার আলো দেখার সুযোগ পেয়েছেন কিছু মানুষ। তেমনি ভাবে শোলক ‘আমরা শুনবো’, ‘অদৃক’, ‘রুমখা বড়বিল শান্তি সংঘ’ - এর মত কিছু সামাজিক সংগঠনের কথা তুলে ধরেছে এবং প্রতিনিয়ত খোজ করে যাচ্ছে তাদের যারা নিজেকে নিগড়ে দিয়েছে আমাদের সমাজের পারিপার্শ্বিক উন্নয়নে।
শোলোকের প্রথম অনলাইন ইভেন্ট ‘ছয়মিশালি ১.০’ এর বিষয়বস্তু ছিলো- ধারাবাহিক গল্প (বাংলা), ছোটগল্প (ইংরেজি), বিজ্ঞান বিষয়ক পোস্টার, ফটোগ্রাফি, কমিক স্ট্রিপ, ডিজিটাল ডিজাইন। প্রথম ইভেন্ট হলেও ব্যাপক সাড়া পড়েছিল। শোলোক আয়োজিত দ্বিতীয় অনলাইন প্রতিযোগিতা ‘চতুরঙ্গ’ ভরপুর ছিল কবিতা লেখন, বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা লিখন এবং আবৃত্তি ও বিজ্ঞান সংলাপ দ্বারা। প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগী নিজের লেখা কবিতা সবার মাঝে তুলে ধরে। শোলোক আয়োজন করে ভিন্নধর্মী অনলাইন ইভেন্ট চা-সমাচার। সকল চা পাগলদের চা-নিয়ে বিভিন্ন গল্প প্রকাশের মুক্তমঞ্চ ছিলো চা-সমাচার।
এভাবেই শোলকের যাত্রা শুরু হয়ে এখনও চলছে। সকল পাঠকের প্রতি শোলোকের আহবান স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায়, ‘ওঠো, জাগো, নিজে জেগে অপরকে জাগাও’। অর্থাৎ- পড়ুন, জানুন এবং নিজে অন্যকে জানিয়ে জ্ঞানের পরিসীমা বাড়ান।
সপ্তাহে ৩ দিন (বৃহস্পতিবার, শুক্রবার এবং শনিবার) সন্ধ্যায় শোলোকের ছন্দে ছন্দিত হতে পারে সব উৎসুক মানুষ। শোলোক যেনো প্রত্যেকটি সৃজনশীল মানুষ এর জন্য একটি অসাধারণ মঞ্চ হয়ে উঠতে পারে সে লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে শোলোকের প্রতিষ্ঠাতা ও চিফ এডিটোরিয়াল অফিসার রাফিয়াতুন ফেরদৌস খান লুবাবা এবং পুরো টিম। চলতে হবে অনেক পথ, শিখতে হবে নতুন কিছু এবং ছড়িয়ে দিতে হবে সবার মাঝে- শোলক চলবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ