ঢাবি ছাত্রী সুমাইয়াকে হত্যার অভিযোগে ননদ গ্রেফতার

  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী সুমাইয়া খাতুনকে হত্যার অভিযোগে তার বড় ননদকে গ্রেফতার করেছে নাটোর সদর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় সুমাইয়ার মা নুজহাত বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এতে চারজনকে আসামি করা হলেও বাকিরা পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সোমবার (২২ জুন) দিবাগত রাত ১২টার পর নাটোর জেলা এসপি লিটন কুমার সাহাসহ পুলিশ ফোর্স সুমাইয়াদের বাসায় যান। সুমাইয়ার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে গতকালই তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সুমাইয়ার ননদকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সুমাইয়ার পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার ননদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট এখনও হাতে পায়নি পুলিশ। তবে গ্রেফতার এবং এ ব্যাপারে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে তথ্য দিতে রাজি হননি তিনি।

জানা গেছে, ঢাবি ছাত্রী সুমাইয়া নাটোর সদরের হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকার মোস্তাক হোসাইনের স্ত্রী। সোমবার (২২ জুন) সকালে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর নিহতের শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের এ শিক্ষার্থী মাস্টার্স পরীক্ষা শেষে ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলেন।তিনি বিসিএস ও সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।

সুমাইয়ার বাবার বাড়ির লোকজন জানান, সোমবার সকালে সুমাইয়ার শ্বশুর জাকির হোসেন ফোন করে সুমাইয়ার মা নুজহাতকে বলেন, তাঁর মেয়ে অসুস্থ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে এসে দেখে যেতে। তখন পরিবারের লোকজন সবাই মিলে হাসপাতালে গিয়ে তার নিথর মরদেহ দেখতে পায়। এ সময় সুমাইয়ার স্বামী মোস্তাক বা শ্বশুরবাড়ির কোনো সদস্যকে সেখানে দেখা যায়নি।

এ সময় তাদের সন্দেহ হলে তারা ঘটনাটি সদর থানা পুলিশকে জানায়। পুলিশ এসে মরদেহটির সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। পুলিশ জানায়, সুমাইয়ার দেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার পরিবারের লোকজন মামলা দায়ের করলেই তদন্ত শেষে বলা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা। পুলিশ তদন্তের জন্য সুমাইয়ার শ্বশুরবাড়ি হরিশপুরের বাগানবাড়ি এলাকায় গেলেও সেখানে গিয়ে পরিবারের কোনো সদস্যকে পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ।

সুমাইয়ার চাচা মোহাম্মদ আলী জানান, ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল পরিণয় সূত্রে মোস্তাক হোসাইনের সাথে সুমাইয়ার বিয়ে হয়। সুমাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করে বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন এতে বাঁধা দেয়। তারা সুমাইয়ার পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে চায় এবং বাড়িতে ঘর-গৃহস্থালির কাজে মনোযোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সুমাইয়া স্বপ্ন সে বিসিএস ক্যাডার হবে। তাই সে থেমে না থেকে তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়।

তিনি আরও জানান, ৬ মাস আগেও সুমাইয়াকে মারধর করে ঘরে বন্ধ করে রেখেছিল তার শশুরবাড়ির লোকজন। ইতিপূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়া অবস্থায় সুমাইয়ার সমস্ত লেখাপড়ার খরচ তার বাবা সিদ্দিকুর রহমান যশোরী চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু, হঠাৎ করেই গত বছরে সেপ্টেম্বরে সুমাইয়ার বাবা মারা যান। এরপর থেকে লেখা পড়ার খরচ চালানো নিয়ে নানারকম লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করতে হতো সুমাইয়াকে।

সুমাইয়ার মা নুজহাত জানান, ‘আমার মেয়ে আত্মহত্যা করার মত মেয়ে নয়। জীবনে প্রথম ছাড়া কখনো দ্বিতীয় হয়নি। জেডিসি, দাখিল, আলিম, অনার্স ও মাস্টার্সের সকল পরীক্ষাতেই সুমাইয়া প্রথম বিভাগ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। সেই মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘বিষয়টি আমরা শুনেছি। এটি খুবই দুঃখজনক। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং একই সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’


সর্বশেষ সংবাদ