২২ জুন ২০২০, ২২:৫৯

হত্যা নাকি আত্মহত্যা: ঢাবি ছাত্রীর মৃত্যুতে তোলপাড়

  © সংগৃহীত

সুমাইয়া খাতুনের মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশের পাশাপাশি জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। তবে ওই ছাত্রী খুন হয়েছেন নাকি আত্মহত্যা করেছেন— তাঁর মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তোলপাড়।

ওই ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে, সুমাইয়াকে হত্যা করা হয়েছে। আর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবি, সে আত্মহত্যা করেছেন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, সুমাইয়ার দেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা যাবে এটি হত্যাকাণ্ড নাকি আত্মহত্যা। সুমাইয়া নাটোর সদরের হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকার মোস্তাক হোসাইনের স্ত্রী। আজ সোমবার (২২ জুন) সকালে এই ঘটনা ঘটে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের এ শিক্ষার্থী মাস্টার্স পরীক্ষা শেষে ফলাফলের অপেক্ষমান ছিলেন। এসময়ের মধ্যে তিনি বিসিএস ও সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।

ডাকসুর সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আসিফ তালুকদার ফেসবুকে লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুমাইয়া নামের একজন শিক্ষার্থী নাটোরে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে মৃত্যুবরণ করেছে। শ্বশুরবাড়ির মানুষ বলছে সে আত্মহত্যা করেছে৷ কিন্তু সুমাইয়ার পরিবার এটিকে হত্যাকাণ্ড বলছে৷ আমার সাথে সুমাইয়ার ভাই সালাউদ্দিন ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে। তারা নাটোর সদর থানায় মামলা করতে গিয়েছিল৷ থানা থেকে বলা হয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের উপর নির্ভর করবে মামলা হবে কি না৷ কারণ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বোঝা যাবে এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যাকাণ্ড। যদি এটি আত্মহত্যা হয় তাহলে তা দুঃখজনক। কিন্তু যদি ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এটি হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হয়, তাহলে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার সুমাইয়ার পরিবারের পাশে থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রাব্বানী বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। এটি খুবই দুঃখজনক। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং একই সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী মিসকাত কবির ফেসবুকে লিখেছেন, ঝরে গেল আরো একটি মেধাবী প্রাণ। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুন হত্যার বিচার চাই। শ্বশুরবাড়ির লোকজন নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করে আত্যহত্যা করছে বলে হত্যার দায় আড়াল করতে চাচ্ছে। অবিলম্বে ঘাতক খুনিদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।

সুমাইয়ার বাবার বাড়ির লোকজন জানান, সোমবার সকালে সুমাইয়ার শ্বশুর জাকির হোসেন ফোন করে সুমাইয়ার মা নুজহাতকে বলেন তাঁর মেয়ে অসুস্থ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে এসে দেখে যেতে। তখন পরিবারের লোকজন সবাই মিলে হাসপাতালে গিয়ে তার নিথর মরদেহ দেখতে পায়। এ সময় সুমাইয়ার স্বামী মোস্তাক বা শ্বশুরবাড়ির কোনো সদস্যকে সেখানে দেখা যায়নি।

এ সময় তাদের সন্দেহ হলে তারা ঘটনাটি সদর থানা পুলিশকে জানায়। পুলিশ এসে মরদেহটির সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। পুলিশ জানায়, সুমাইয়ার দেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার পরিবারের লোকজন মামলা দায়ের করলেই তদন্ত শেষে বলা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা। পুলিশ তদন্তের জন্য সুমাইয়ার শ্বশুরবাড়ি হরিশপুরের বাগানবাড়ি এলাকায় গেলেও সেখানে গিয়ে পরিবারের কোনো সদস্যকে পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ। তারা পালিয়ে গেছে বলে পুলিশের ধারণা।

সুমাইয়ার চাচা মোহাম্মদ আলী জানান, ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল পরিণয় সূত্রে মোস্তাক হোসাইনের সাথে সুমাইয়ার বিয়ে হয়। সুমাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করে বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন এতে বাঁধা দেয়। তারা সুমাইয়ার পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে চায় এবং বাড়িতে ঘর-গৃহস্থালির কাজে মনোযোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সুমাইয়া স্বপ্ন সে বিসিএস ক্যাডার হবে। তাই সে থেমে না থেকে তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়।

তিনি আরও জানান, ৬ মাস আগেও সুমাইয়াকে মারধর করে ঘরে বন্ধ করে রেখেছিল তার শশুরবাড়ির লোকজন। ইতিপূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়া অবস্থায় সুমাইয়ার সমস্ত লেখাপড়ার খরচ তার বাবা সিদ্দিকুর রহমান যশোরী চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু, হঠাৎ করেই গত বছরে সেপ্টেম্বরে সুমাইয়ার বাবা মারা যান। এরপর থেকে লেখা পড়ার খরচ চালানো নিয়ে নানারকম লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য করতে হতো সুমাইয়াকে।

সুমাইয়ার মা নুজহাত জানান, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করার মত মেয়ে নয়। জীবনে প্রথম ছাড়া কখনো দ্বিতীয় হয়নি। জেডিসি, দাখিল, আলিম, অনার্স এবং মাস্টার্সের সকল পরীক্ষাতেই সুমাইয়া প্রথম বিভাগ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। সেই মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এলাকাবাসী অনেকেই জানান, সুমাইয়া শুধু মেধাবী ছাত্রী নয়। সে খুবই শান্ত এবং ভদ্র স্বভাবের মেয়ে। এমন ঘটনা সবাইকে বিস্মিত করেছে। তারাও দাবি করেছে পুলিশ যাতে সুষ্ঠু তদন্ত করে এবং এর হত্যাকারীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সুমাইয়ার শ্বশুরবাড়ির কাউকে পাওয়া যায়নি। এলাকার লোকজন জানান সকাল থেকেই তারা লাপাত্তা। গৃহবধু গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলেও প্রচার করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, বড় হরিশপুর ইউনিয়নের হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকার গৃহবধূ সুমাইয়া খাতুন স্বামীর সাথে কলহের জেরে সোমবার সকালে নিজ কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।