নুর-রাব্বানীর মুখে এক সুর, অগণতান্ত্রিক বললেন সাদ্দাম
দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ। তবে মেয়াদ শেষ হলেও করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর বন্ধের এই সময়টুকু অতিরিক্ত সময় হিসাবে থাকতে চান ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর আর জিএস গোলাম রাব্বানী। তবে নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে অতিরিক্ত সময় থাকতে চাওয়াকে অগণতান্ত্রিক ও অনৈতিক বলে মন্তব্য করেছেন এজিএস সাদ্দাম হোসেন। এ বিষয়টি নিয়ে এখন চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গত বছরের ২৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বগ্রহণ করেন। এই সংসদের মেয়াদ চলতি বছরের ২২ মার্চ এক বছর পূর্ণ হয়। তবে এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় মেয়াদ আরো ৯০ দিন বৃদ্ধি করা হয়। সেই মেয়াদ বৃদ্ধির সময় আজ শেষ হচ্ছে।
ডাকসুর গঠনতন্ত্রের ৬ এর (গ) ধারায় বলা আছে, সংসদে নির্বাচিত কার্যনির্বাহী পদাধিকারীগণ ৩৬৫ দিনের জন্য কার্যালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন না করা যায়, তাহলে কার্যনির্বাহী পদাধিকারীরা অতিরিক্ত ৯০ দিন দায়িত্ব পালন করবেন। ওই ৯০ দিনের আগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্ব পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া মাত্র পূর্বতন সংসদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।সে হিসাবে বর্তমান সংসদ আজ বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। তবে নির্বাচনের মেয়াদ শেষ হলেও অতিরিক্ত সময় থাকতে চান ভিপি নুরুল হক নুর ও জিএস গোলাম রব্বানী।
এ বিষয়ে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক বলেন, আমাদের ডাকসুর মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। কারণ করোনার কারণে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। আমরা এক বছরও দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। এ সময়টা ওয়ার্কিং ডে হিসাবে কাউন্ট করার কথা না। ক্যাম্পাস যতক্ষণ পর্যন্ত খোলা না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এ সংসদ দায়িত্ব পালন করবে।
নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের সাথে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনকে অবহিত করলেও প্রশাসন এ ব্যাপারে আমাদের কিছু জানায়নি। আরেকটা নির্বাচন খুব দ্রুতই হওয়া দরকার। তবে এ সময়তো নির্বাচন করা সম্ভব নয় কাজেই যতদিন না পর্যন্ত নির্বাচন হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এই সংসদ দায়িত্ব পালন করবে। পরবর্তী সময়ে দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হলে ক্যাম্পাস খুললে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কথা বলবো।
তিনি আরও বলেন, তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চায়না নির্বাচনটা হোক। এই উপাচার্যের সময়ে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। তিনি সহজে ডাকসু নির্বাচন করতে পারেন। সেখানে তিনি ওইভাবে আগ্রহ দেখান না। তার সাথে আমি একাধিকবার কথা বলেছি আমি দেখেছি তার কোন আগ্রহ নেই নির্বাচনের ব্যাপারে। ডাকসু হলে তাদের কর্তৃত্বে টান পড়ে। এবছর ডাকসুতে যে বাজেট হয়েছে যদি ডাকসু না থাকতো তাহলে তারা এই টাকাটা নয় ছয় করে বিভিন্নভাবে খরচ করতে পারতো।
জিএস রাব্বানী বলেন, যেহেতু আমরা এই করোনার কারণে ডাকসুর পুরো মেয়াদ কাজ করতে পারিনি তাই আমাদের যে পেন্ডিং কাজ গুলো রয়েছে সেগুলো সমাধান করার জন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমাদের অতিরিক্ত সময় দিতে হবে। এটি আমাদের প্রাপ্য পাওনা।
তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনকে বলেছি ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে। আমরা ডাকছো চাই। আমরা কোন অপূর্ণ সিনেট দেখতে চাই না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন নির্বাচন দিতে হবে। তবে নতুন নির্বাচন নিয়ে প্রশাসন আমাকে কিছু বলেনি। আমার মনে হয় প্রশাসন চায়না নতুন করে নির্বাচন হোক।
এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেন তাদের রায় দিতে পারে তাদের ইচ্ছামত তারা যেন তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি বেছে নিতে পারে নির্বাচনের ধারা যেন অব্যাহত থাকে আমরা এ ব্যাপারো সোচ্চার থাকবো। এটি নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
তিনি বলেন, আজকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্ধারিত সময় শেষ হচ্ছে। আমি মনে করি, নির্ধারিত সময়ের বাইরে থাকতে চাওয়া অগণতান্ত্রিক ও অনৈতিক। আমরা যদি নির্ধারিত সময়ের বাইরে দায়িত্ব পালন করার কথা ভেবে থাকি তাহলে সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সামনে কোন ইতিবাচক বার্তা দেবে না। নির্ধারিত সময়ের বাইরে থাকতে চাওয়া এক ধরনের ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রবণতা। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনের কর্মী হিসেবে আমরা সব সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে থাকার চেষ্টা করব তাদের ভাবনাগুলো প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। প্রশাসন যেন ডাকসু নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় সে ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ সজাগ থাকবো।
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি, একটি ডাকসুর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কাজ সম্পন্ন হবে সেটি আসলে নয়। এখানে ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা সঠিক নয়। এখানে প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ। ডাকসুর সক্রিয়তা গুরুত্বপূর্ণ। আগামীতে যারা নেতৃত্তে আসবে আমাদের যে সকল অপূর্ণাঙ্গ কাজ রয়েছে সেসব পূর্ণাঙ্গ করবে বলে আমরা মনে করি। এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির বিষয়। এটি কোন ব্যক্তি কেন্দ্রিক রাজনীতির ধারাবাহিকতা নয়।