করোনা ঠেকাতে বন্ধ ঢাবি, তবুও শহীদ মিনার-টিএসসিতে মানুষের ঢল!
চীন থেকে ছড়ানো করোনাভাইরাসে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে গোটা বিশ্ব। সাত হাজারের অধিক মানুষের প্রাণ গেছে ইতিমধ্যে। আক্রান্তের সংখ্যাও দুই লাখের কাছাকাছি। বাংলাদেশেও আক্রান্তের সংখ্যা ১০ জন। যদিও কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ক্লাস-পরীক্ষা ও লাইব্রেরি বন্ধ করে দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে রাজধানীর গণজমায়েতের জনপ্রিয় ক্যাম্পাসটিতে মানুষের আগমণ বন্ধ করা যায়নি।
জানা গেছে, ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও মঙ্গলবার রাতে বিপুল সংখ্যক মানুষের আগমণ ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, শহীদ মিনারসহ কয়েকটি স্থানে। ওইসব স্থানে অবস্থান করাদের অধিকাংশই ছিলেন বহিরাগত। এতে করোনা ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতে হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের সুরক্ষাও হুমকির মুখে পড়ছে বলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফোরকান মাহমুদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি স্পটে মানুষের জমায়ের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘সব দোষ সরকারের, সরকারের উচিত ছিল টিএসসসি ভেঙ্গে ফেলা, সরকারের উচিত ছিল সমুদ্র শুকিয়ে ফেলা। করোনার বিস্তার ঠেকানোর দায়িত্ব শুধুমাত্র সরকারের। আপনারা শুধু কোলাকুলি করে যান। আর ফেইসবুকে সরকারের গুষ্টি উদ্ধার করেন....।’
ফোরকান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘যে করোনাভাইরাস ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করা হলো, তাতে লাভ হচ্ছে কই? বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হচ্ছে। এভাবে চললে করোনার ঝুঁকি আরও বাড়বে। সত্যিকার অর্থে করোনা ঠেকাতে হলে টিএসসি, শহীদ মিনারের মতো সব স্থানে জমায়েত বন্ধ করতে হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষের আগমণ ঘটে। পরিস্থিতি এমন দাড়ায়, সেখানে বসার জায়গাও ছিলো না। করোনায় যেখানে মানুষের জমায়েত পুরোপুরি বন্ধের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে এমন পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন অনেকে। বেড়াতে আসা মানুষের বিবেক ও দায়িত্ববোধ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
শহীদ মিনার এলাকার একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন সাংবাদিক পিন্টু রঞ্জন অর্ক । সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আইইডিসিআর বারবার বলছে, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে। কিন্তু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে দেখলাম, যেন প্রায় ১৬ কোটি মানুষ! সেখান থেকে টিএসসিতে এসে মনে হল প্রায় ৩২ কোটি জনতা উপস্থিত। যেন উৎসব চলছে, হায়!’
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের না। আমরা অনেকবার না করেছি, তারপরও যদি কেউ নিজের নিরাপত্তা চিন্তা না করে, তাহলে আমাদের কি আর করার আছে। ক্যাম্পাস বন্ধ। সবাইকে অনুরোধ করবো, সবাই যেন সতর্ক থাকে। সবাই যেন পারিবারিক সংস্পর্শে থাকে। তবে, যদি আমরা কোন বহিরাগত ক্যাম্পাসে পাই, তাহলে ব্যবস্থা নেবো।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেভাবে লকডাউন করছে সেভাবে আমাদের দেশেও জাতীয়ভাবে ব্যবস্থা নিলে এভাবে জমায়েত কমানো যাবে। তবে আমরা চেষ্টা করছি জমায়েত যতটুকু নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’ শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় সবকিছু করা হবে বলেও জানান তিনি।