১০ মার্চ ২০২০, ১১:২৩

রিকশা ভাড়া নির্ধারণে ক্রেডিটবাজি ডাকসু নেতাদের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রিক্সা ভাড়া নির্ধারণ নিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়েছে ডাকসুতে ছাত্রলীগ মনোনীত সম্মিলিত শিক্ষার্থী পরিষদের সদস্যরা। দুই পক্ষে ভাগ হয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। দুটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরপরই ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধি ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এদিকে ডাকসু নির্বাচনের ইশতিহারে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, নির্বাচনের পরপরই ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে রিক্সা ভাড়া নির্ধারণ করতে উদ্যোগী হয়েছিল ছাত্রলীগ মনোনীত নির্বাচিত সদস্যরা। কিন্তু এক বছরও আলোরমুখ দেখেনি সেই প্রতিশ্রুতি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শুক্রবার ডাকসুর সদস্য মো. তানভীর হাসান সৈকত ও নজরুল ইসলাম ক্যাম্পাসে রিকশা ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়। তার দুইদিন পর রবিবার ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন ও ছাত্র পরিবহন বিষয়ক সম্পাদক শামস-ঈ নোমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত ও নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের সমস্যা ক্যাম্পাসে পরিবহন শৃঙ্খলা ও ভাড়া নির্ধারণ। অনেক আশা-হতাশার মধ্যে এই সমস্যা সমাধানের দীর্ঘদিনের দাবি শিক্ষার্থীদের। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ডাকসুর পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে যানবাহন শৃংখলা ও ভাড়া নির্ধারণ করা হবে এবং আগামী ১৫ই মার্চ থেকে নতুন নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর হবে। শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় একটি শৃঙ্খলা টিম গঠন করা হবে।’ বিজ্ঞপ্তিতে তারা শিক্ষার্থীদের সহযোগীতা প্রত্যাশা করেন।

ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ২ দিনের মধ্যে ৯ মার্চ ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন ও ছাত্র পরিবহন সম্পাদক শামস-ঈ নোমান স্বাক্ষরিত আরেকটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এ বিবৃতিতে আগামী ১২ তারিখ মুক্ত আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

এ বিষয়ে ডাকসুর সদস্য মো. তানভীর হাসান সৈকত গণমাধ্যমকে বলেন, এর আগে ছাত্র পরিবহন সম্পাদক দুইবার মতবিনিময় সভা করেছে। সভা শেষে তিনি কোন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন নি, এমনকি সিদ্ধান্তও নিতে পারেনি। এরপর দীর্ঘদিন ধরে তার কোন কাজও আমরা দেখিনি। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কাজটি করতে উদ্যোগ নেই।

ভাড়ার বিষয়ে ডাকসু সদস্য মো. তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘আমরা অনেক কষ্ট করে রিকশা ভাড়া নির্ধারণ করেছি। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই ডাকসু এজিএস ও পরিবহন সম্পাদক একটি আলোচনা সভার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আমাদের এ কাজের কৃতিত্ব নিতে চান। আমরা তাদের অনেক সময় দিয়েছি, তারা আমাদের কথার কর্ণপাত করেননি। যখন আমরা প্রক্টর, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত করেছি, তখন তারা এখানে আলোচনা সভার ডাক দিয়েছেন।

এ ঘটনাকে ক্রেডিটবাজি আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, যারা কাজ করবে তাদের কাজকে নস্যাৎ করে দিয়ে নিজেরা ক্রেডিট নেয়ার জন্য এসব কাজ করছে। এসব ক্রেডিটবাজি ছাত্ররা বুঝে গেছে। এর আগেও অনেক প্রেস রিলিজ দিয়েছে কিন্তু কোন কাজ হয়নি। শিক্ষার্থীরা অচিরেই তাদের মুখোশ উন্মোচন করবে।

তবে বিষয়টি অন্যভাবে দেখছেন ডাকসুর পরিবহন সম্পাদক শামস-ই-নোমান। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেছি। আমরা ৮ মাস ধরে রিকশা ভাড়া নির্ধারণ নিয়ে স্টাডি করেছি। নগর পরিকল্পনাবিদ ও পারদর্শীদেরে সাথে কথা বলেছি। আমাদের আলোচনা সভা কোনোভাবেই সদস্যদের বিজ্ঞপ্তির সাথে সাংঘর্ষিক নয়। কষ্ট হলেও আমরা একটা করবো। এর আগে দুইবার আলোচনা সভা করেছিলেন এখন আবার কেন এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেননি তিনি।

বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, পরিবহন বিষয়ের কাজ করে ছাত্র পরিবহন বিষয়ক সম্পাদক। রিক্সার ভাড়া নিধারণের কাজটা তার। বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোন অবকাশ নেই। যদিও কোন সমন্বয়হীনতার সৃষ্টি হয়েছে। তারা যদি করতে চায় তাহলে আমি সমন্বয় করে দেবো।