সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা রাজনৈতিক এজেন্ডা: নুর
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে (সমন্বিত) ভর্তি পরীক্ষা রাজনৈতিক এজেন্ডা বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর। একইসঙ্গে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছাত্র-শিক্ষককে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
রবিবার বিকালে ডাকসু ভবনে ‘সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা: ছাত্র-শিক্ষকের ভাবনা ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় একথা বলেন তিনি।
নুর বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে (সমন্বিত) ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে যারা কাজ (প্রস্তাব) করছে তাদের এ ব্যাপারে কোন চিন্তাধারা নেই। রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে এবং উপরের মহলকে খুশি করার প্রত্যয়ে এমন অযৌক্তিক নীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন তারা।
তিনি বলেন, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু সেখানে সমন্বিত পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজস্ব কিছু লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষা নিয়ে থাকে। আমাদের দেশের সাথে তো অন্যান্য দেশের তুলনা করলে হবে না।
দেশের বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীলদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, বিদেশে কাজের যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা রয়েছে এটা আমাদের দেশে নেই। তাই মেনে নিতেই হবে যে অন্য দেশের মান আর আমাদের দেশের মান কখনোই এক রকম নয়৷
সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে সেখানে স্থানীয় একটা প্রভাব-প্রতিপত্তি চলবে। সেক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সঠিক মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হবে বলে মনে করেন ভিপি নুর।
সভায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী বলেন, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বাস্তবায়ন করতে নানাবিধ সমস্যা রয়েছে৷ এখন আমাদের বড় দাবি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বাতিল নয় বরং কর্তৃপক্ষের কাছে সবচেয়ে বড় দাবি হওয়া উচিত ভর্তি পরীক্ষা কিভাবে পরিচালিত করবে। এ নিয়ে মানদণ্ড দাড় করিয়ে সেটা নিয়ে মুক্ত আলোচনা করা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন-ইউজিসি’র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি বলেন, একের পর এক সিদ্ধান্ত আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে তাই কি আমরা সব মেনে নেব? তাই আমাদের এখন জানতে চাইতে হবে যে কীসের ভিত্তিতে আপনারা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় যেতে চাচ্ছেন? তার মানদণ্ড উপস্থাপন করে মুক্ত আলোচনা করুন। এক ঘন্টার পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবে কিনা তা নির্ধারণ করবে এটা তো ঠিক না।
ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবুল হাসনাত বলেন, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিলে যে সমস্যা হবে তা হলো– প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণত পাস করে ১০-১২%। এ পরিমাণ পাস করতে পারলে সকল বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা শিক্ষার্থী খুঁজে পাবে না। ফলে তাদের ফেল করা শিক্ষার্থী নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রশ্নের মান কমিয়ে অধিক শিক্ষার্থীকে পাস করানোর ব্যবস্থা করতে হবে৷ ফলে সমস্যা কমানোর পরিবর্তে বৃদ্ধি পাবে।
আইন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী সাইদ আব্দুল্লাহ বলেন, বহিঃর্বিশ্বে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হয় সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটা র্যাংক থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তেমন কোন র্যাংক নেই। তাহলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কোন ক্যাটাগরিতে ভর্তি করানো হবে? প্রশ্ন প্রত্রের মান সঠিক থাকবে কি-না সন্দেহ থেকে যায়।
ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নাফিস ইবরাহিম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।