ক্যাম্পাসে ফের সরব ডাকসু হামলার আসামি বুলবুল
গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগ যৌথভাবে হামলা চালায়। এতে ভিপি নুরুল হক এবং তাঁর সহযোগীসহ প্রায় ৩০ জনের মতো আহত হয়েছিল। এর দুদিন পরে পুলিশ নিজে বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টার মামলা করে। এদিকে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল প্রকাশ্যে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
আজ বৃহস্পতিবার টিএসসি এলাকাসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঘুরতে ফিরতে দেখা যায় বুলবুলকে। বিকেল ৪টার দিকে রাজু ভাস্কর্যে ঢাকার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পেছাতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের পাশেও অবস্থান করে তিনি। ফলে ক্যাম্পাসে ডাকসু হামলার আসামি বুলবুল ফের সরব হচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাসে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে প্রকাশ্যে বিচরণ করতে দেখে শিক্ষার্থীদের মাঝে নানা কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। ডাকসু হামলার আসামি শাহবাগ থানার অদূরে কেমনে দিব্য ঘুরে বেড়ায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না— এমনই নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে। এদিকে দেশের প্রচলিত আইনে অপরাধ করেও পার পাওয়ার নজির হিসেবে বুলবুলকে উপস্থাপন করছে ডাকসু ভিপি নুরুল হক।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নিজে জামিন রয়েছেন বলে দাবি করেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ১৩ জানুয়ারি ওই মামলায় জামিন হয়েছি আমি একা। আর ৭ তারিখে অন্য আসামি সনেটসহ ৪ জন জামিন হয়েছে। বাকী ৩ জন হল কমিটির নেতা। এছাড়া কারাগারে থাকা তূর্যসহ বাকিদের জামিনও দ্রুত হয়ে যাবে বলে জানান বুলবুল।
তিনি আরো বলেন, নুরদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। কিন্তু নুর আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। আর ওইদিন যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা হামলা নয়, দুই পক্ষের সংঘর্ষ।
ডাকসু হামলার ওই ঘটনায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে পুলিশ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলাটি করেছিল। বুলবুলের প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার সাব-ইন্সপেক্টর রইচ উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মামলার দুদিন পর আমরা সেটা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হস্তান্তর করি। এই ব্যাপারে উনারাই তদন্ত করছেন।
রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) আহসান হাবিব দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মামলাটা রমনা থানার ডিবির কাছে। আমি এই ব্যাপারে বলতে পারছি না।
এর আগে হামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের তিনজনকে আটক করা হয়। পরে তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন। ওই তিনজন হলেন— মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত তূর্য এবং দপ্তর সম্পাদক মেহেদী হাসান শান্ত।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানী এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ নয় বলে জানান। তিনি বলেন, মামলা যেহেতু থানায় হয়েছে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করার কিছু নেই। এটি পুলিশ ভালো জানবে। কোন আসামি ক্যাম্পাসে আছে, নাই এটা পুলিশের ব্যাপার।
ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় ডাকসুতে হামলা করেছে এবং আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক। তিনি বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রের প্রশাসক যারা আছেন তারা চাচ্ছে ফ্যাসিবাদ রাষ্ট্র কায়েম করতে। এরই লক্ষ্যে পৌঁছতে সাধারণ ছাত্রছাত্রী এবং মানুষের উপর হামলা চালিয়ে ভয়-ভীতি দেখানোর জন্য কিছু পেটুয়া এবং লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি করেছে। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের একটি অংশ। ডাকসুতে হামলার পর শিক্ষার্থীরা যখন প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছিল। তখনই তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এটি শুধু একটা নাটক মঞ্চায়িত করা হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, সরকার যদি প্রকৃতপক্ষে ডাকসুতে হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে চাইতো তবে তাদের গ্রেফতার করতো। বরং তাদেরকে রক্ষা করার জন্য পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এই দেশে কোন ঘটনার তদন্ত চললে সেটা ২০ বছরেও আসল ঘটনা উদঘাটন হয় না। রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো মামলার আজ পর্যন্ত সুষ্ঠু বিচার হয়নি। সরকার মদদ না দিলে তাদেরকে ধরার ব্যবস্থা নিত। আমরা এরকম সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য পরিষদের কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছি। সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করলে এরা পরাজিত হবে।
ডাকসু হামলার ঘটনায় পুলিশের মামলার এজাহারে মোট আটজনের নাম উল্লেথ করা হয়েছিল। তাছাড়া আরো ২০-২৫ জন অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছিল৷ তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সঙ্গে জড়িত। হামলায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও পুলিশের মামলায় ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতার নাম নেই।
তবে ওইসময় ডাকসু ভিপি নুরুল হক মামলার জন্য শাহবাগ থানায় আলাদা একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিল। ওই আবেদনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসু এজিএস সাদ্দাম হোসেন ও নাম পরিচয়সহ ৩৭ জনের নাম ছিল। তখন অভিযোগটি আলাদা মামলা নয়, বরং পুলিশের করা মামলার সঙ্গে যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছিল পুলিশ।