পূজার দিনে সিটি নির্বাচন, ক্ষোভ বাড়ছে ঢাবিতে
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২০, ১২:০৮ PM , আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২০, ১২:২০ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রতন চন্দ্র ঘোষ বলেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অসাম্প্রদায়িকতার পরিচয়। আমার বিশ্বাস, তিনি এই দিনে নির্বাচন দিয়ে কখনো সাম্প্রদায়িক হবেন না।’ ৩০ জানুয়ারি সরস্বতী পূজার দিন হওয়ায় নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এই কথা বলেন।
আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। ওই দিনে চলতি বছরের সরস্বতী পূজার পঞ্চমী তিথি। এই ধর্মীয় উৎসবের দিনে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন।
আজ সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বেলা ১১ টায় প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী রাজু ভাস্কর্য থেকে মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু করেন। এই মানববন্ধনে সব ধর্মের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
অধ্যাপক রতন চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘৩০ জানুয়ারি ছুটির দিন। এই দিনে আমরা পূজা করব নাকি ভোট দেব? পূজার জন্য অনেক আয়োজন থাকে। সেগুলো আগের দিন থেকে করতে হয়। কিন্তু নির্বাচন হলে তা সম্ভব না। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূজার আয়োজন করা হয়। তাহলে কেমনে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। আমরা চাই এই দিন পরিবর্তন হোক।’
পরে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, পূজার দিনে নির্বাচন মানিনা মানব না’, ‘ডাকসু মানে না,পূজার দিনে নির্বাচন’, ‘পরিবর্তন করো, পূজার দিনে নির্বাচন’ স্লোগান দিয়ে বের করা বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং প্রশাসনিক ভবন প্রদক্ষিণ করে।
এ ব্যাপারে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেছেন, আগামী ৩০ জানুয়ারি শাস্ত্র অনুসারে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী শ্রী শ্রী সরস্বতী মায়ের পূজা উদযাপিত হবে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, একইদিনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সরস্বতী পূজা উদযাপিত হয়।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, স্কুল-কলেজ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিদ্যার দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত পূজায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষ অংশগ্রহণ করেন যা বাংলাদেশের আবহমানকাল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের ভোটাধিকার প্রয়োগ, গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বী এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এমতাবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ এই তারিখে সরস্বতী পূজার দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক পক্ষপাতিত্বমূলক নির্যাতনমূলক বলে অভিহিত করেছেন তারা।
বিষয়টি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধান অনুচ্ছেদ নাম্বার ৪১ অনুযায়ী ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন বলে প্রতিপন্ন হচ্ছে। সরস্বতী পূজার দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বেশ কিছু সমস্যা উদ্ভব হবে বলে তারা মনে করেন।
তার মধ্যে রয়েছে, বিভিন্ন স্কুল-কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হলে নিরাপত্তার স্বার্থে আগের দিন থেকে ভোটকেন্দ্রগুলোতে সকল ধরণের জমায়েত নিষিদ্ধ থাকবে। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে পূজা আয়োজন করা সম্ভব হবে না, দেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করে, সেখানে পূজার আনন্দমুখর পরিবেশ এর মাঝেও নিরাপত্তা ঝুঁকি কাজ করবে।
পূজারিণী সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে পূজায় পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে পারবে না। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ বা বন্ধ রাখা হয় সেক্ষেত্রে কেউ আনন্দ উদযাপন করতে পারবেনা।
এসময় তারা দুই দফা দাবি জানিয়েছেন। প্রথমত, অনতিবিলম্বে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আগামীতে এরকম বিষয়ের যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মানববন্ধন থেকে অভিযোগ তোলা হয়, ‘এটা কি নির্বাচন নাকি পূজা বন্ধ করার পায়তারা? আমরা সংখ্যালঘু সেটাই কি আমাদের অপরাধ? আমরা এই নির্বাচনের সময় পরিবর্তনের জোর দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে আমরা ধরে নিব যে বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র।’