মজনু আসল ধর্ষক না ‘জজ মিয়া’ নাটক—সন্দিহান জনগণ: নুর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের অভিযোগে আটক মজনু আসল ধর্ষক নাকি এটি ‘জজ মিয়া নাটক’ তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে। জনগনের এই সন্দেহ একদিনে জন্মেনি। দেশের বিচার ব্যবস্থা এবং সরকারের প্রতি মানুষের অনিহা থেকেই এমন প্রশ্নের জন্ম হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ধর্ষণ ও নিপীড়নের প্রতিবাদে আয়োজিত গণপদযাত্রা কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন ডাকসুর ভিপি। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে বিকেল তিনটায় রাজু ভাস্কর্যে এই কর্মসূচি শুরু হয়।
নুরুল হক নুর বলেন, একটা দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর কতটা অনাস্থা থাকলে এমন প্রশ্নের জন্ম হয় সেটি আপনারাই ভাল বলতে পারবেন। ধর্ষককে গ্রেপ্তারের পর মানুষের মনে স্বস্তি আসার পরিবর্তে তাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যেই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন যে মজনু আসল ধর্ষক নাকি এটি ‘জজ মিয়া’র মতোই আরেকটি নাটক। আমরাও আসলে জানি না কোনটি সত্য।জনগনের মনে সৃষ্টি হওয়া এই অবিশ্বাস সরকারকেই দূর করতে হবে।
নুর বলেন, ধর্ষককে গ্রেপ্তার করায় আমরা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি আমরা ধিক্কার জানাই প্রশাসনকে কেন তনু হত্যার ৩ বছর পরেও ধর্ষককে গ্রেফতার করতে পারেনি, সুবর্ণচরের মা-মেয়ে ধর্ষণের ঘটনায় কোন ধর্ষককে কেন বিচারের আওতায় আনতে পারেনি।
ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক বিপ্লব গড়ে তুলতে আহবান জানিয়েছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ঘর্ষণের ঘটনায় জড়িত অপরাধী গ্রেফতার হওয়ায় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে অন্যান্য ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদেরও বিচারের আওতায় আনার আহবান জানান তিনি।
তিনি ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ছাত্রলীগ নেত্রীদের দ্বারা নারী অধ্যাপক লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বুয়েটের আবরার হত্যার ঘটনার প্রসঙ্গে টেনে বলেন, আপনারা বুয়েটে আবরার হত্যার ঘটনার কথা জানেন। অপরাধীদের গ্রেফতার করে কারাগারে নেওয়া হয়েছে কিন্তু পরবর্তীতে হাইকোর্ট অপরাধীদের কে পরীক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এটা আমাদের ভাববার বিষয়।
গণপদযাত্রা কর্মসূচিতে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুন, যগ্ম আহবায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান, মশিউর রহমানসহ সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
মজনুর সাত দিনের রিমান্ড আবেদনে যা বলেছে ডিবি:
মজনুর রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ৫ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী রাজধানীর কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে গলফ ক্লাবসংলগ্ন স্থানে পৌঁছান। এ সময় আসামি মজনু তাঁকে পেছন থেকে গলা ধরে মাটিতে ফেলে দেন। তাঁর গলা চিপে ধরেন। ছাত্রী চিৎকার করতে গেলে মজনু তাঁকে কিলঘুষি মারেন। ভয়ভীতি দেখান। ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে গেলে তাঁকে ধর্ষণ করেন আসামি মজনু।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, মজনুকে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১। আসামির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, তাঁর কাছ থেকে ভুক্তভোগী ছাত্রীর খোয়া যাওয়া সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। আসামি মজনু একজন অভ্যাসগত ধর্ষক। প্রতিবন্ধী ও ভ্রাম্যমাণ নারীদের ধর্ষণ করে আসছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় আর কেউ জড়িত কি না, তা জানতে এই আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
বৃহস্পতিবার আদালত বক্তব্য শুনে মজনুকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সরকারি কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবু। রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তা করে বাংলাদেশ আইন সমিতি। ধর্ষণের এই ঘটনায় ছাত্রীর বাবা রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেছেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে আছে ঢাকা মহানগর ডিবি।