ধর্ষণ করা হয় অচেতন অবস্থায়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। বর্তমানে ওই ছাত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রবিবার রাতে রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নামার পর এ ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী জানিয়েছেন, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল হাই জানান, ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী বর্তমানে ঢামেকের ওএসসিসিতে চিকিৎসাধীন। ঢাবি রোকেয়া হলের ওই শিক্ষার্থী প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। ওই ছাত্রীর বয়স ২০ থেকে ২২-এর মধ্যে বলে জানা গেছে। ধর্ষণের সময় তাকে মারধরও করা হয়। তার শরীরের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী জানিয়েছেন, কুর্মিটোলা এলাকায় নামার পর অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন তাঁর মুখ চেপে ধরে। এ সময় তাকে মারধরও করা হয়। এক পর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। অচেতন অবস্থায়ই তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। পরে রাত ১০টার দিকে চেতনা ফেরার পর তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বান্ধবীর বাসায় যান। বান্ধবীকে ঘটনা জানান। এরপর সহপাঠীরা তাঁকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
কয়েক দফায় বিক্ষোভ হবে আজ: এদিকে ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার ক্যাম্পাসে বিভিন্ন প্রতিবাদী কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। সকাল সাড়ে ১০টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদী মানববন্ধন করবে ছাত্রলীগ। এ কর্মসূচীতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে ডাকসুর এজিএস ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন জানান, ‘ধর্ষণ কিংবা নারীর উপর যে কোন নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি রয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সাথে যা হয়েছে তার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ, সকল নারীর উপর পুরুষতান্ত্রিক নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধেরই অংশ। আজকের ঘটনার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জেগে থাকবে- এ আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।’
সকাল ১১টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন শামসুন্নাহার হলের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। ফেসবুকের একটি ইভেন্টের মাধ্যমে তিনি এ ডাক দেন। ইমির ডাকা এ প্রতিবাদী কর্মসূচীতে অংশ নেবে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এই প্রতিবাদ কর্মসূচী থেকে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহবায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান।
রাজধানীর কুর্মিটোলায় এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর গতকাল রাতেই শিক্ষার্থী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে রবিবার দিবাগত রাতে ক্যাম্পাসে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেছে ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীর। এ ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা যায়, সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে শেওড়া যাওয়ার উদ্দেশে ঢাবির বাসে ওঠেন ওই শিক্ষার্থী। সন্ধ্যা ৭টার দিকে কুর্মিটোলায় বাস থেকে নামার পর অজ্ঞাত কয়েকজন ব্যক্তি তার মুখ চেপে তাকে পার্শ্ববর্তী একটি স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে অজ্ঞান করে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। পরে ১০টার দিকে তার জ্ঞান ফিরলে তিনি নিজেকে নির্জন স্থানে অবিষ্কার করেন। পরে সেখান থেকে সিএনজি যোগে নিজ গন্তব্যে পৌঁছান। পরে রাত ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থীকে ঢামেক হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করান তার সহপাঠীরা।