০৫ জানুয়ারি ২০২০, ১৩:৪৪

ককটেল রাজনীতিতে ঢাবি, চলতে-ফিরতে ভয় পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

  © টিডিসি ফটো

নিয়মিত বিরতিতে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেই চলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এসব ঘটনা ঘটছে দিন দুপুরে; তাও আবার মধুর ক্যান্টিন, ডাকসু ও কলা ভবনের মতো ক্যাম্পাসের ব্যস্ততম এলাকায়। সর্বশেষ আজ রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ ও মধুর ক্যান্টিনের সামনে পরপর মোট চারটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে এতে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে ককটেল বিস্ফোরণের এমন ঘটনায় কারা জড়িত— তার কোনো কূল-কিনারা বের করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল একে অপরকে সন্দেহ করছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের ভাষ্য, ককটেল বিস্ফোরণ করে কেউ রেহাই পাবে না।

তবে প্রশাসনের মাথাব্যাথা নেই উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ছাত্র সংগঠনের নেতাদের প্রশ্ন— ক্যাম্পাসে ২৪ ঘন্টায় সিসিটিভি মনিটরিং, প্রক্টরিয়াল টিমের সার্বক্ষণিক টহল, গোয়েন্দা নজরদারি প্রভৃতি নিরাপত্তার চাঁদরে থাকা সত্ত্বেও কেন এমন ঘটনা অপ্রত্যাশিত? তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে।

গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে কয়েক দফা ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ওইদিন ছোট একটি বিস্ফোরণের পর মধুর ক্যান্টিন ও আইবিএ ভবনের গেইটের মাঝামাঝি জায়গায় একটি অবিস্ফোরিত ককটেল পাওয়া যায়। পরে পুলিশ ককটেলটির নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটায়।

এর তিনদিন পর ২৯ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় মধুর ক্যান্টিনের সামনে তিনটি এবং বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ডাকসু ভবনের পাশে ককটেল ফাটানো হয়। পরদিন ফের মধুর ক্যান্টিনের সামনে দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হলে হৃদয় নামের এক ক্যান্টিনবয়ের কোমরে স্প্লিন্টার লাগে।

এদিকে, রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে একটি ককটেল বিস্ফোরণর ঘটনা ঘটে। ঠিক ওই সময়ে তারপাশেই ছাত্রদলের কর্মসূচি চলেছিল। একই সময়ে মধুর ক্যান্টিনেরও পাশেও দুটি ককটেল বিস্ফোরণর ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। তবে এ ঘটনায় কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে পদবঞ্চিততের ক্ষোভের কারণে এসব ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করেন ঢাবি ছাত্রলীগের নেতারা। তাদের বক্তব্য, কয়েকদিন ধরে ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এর জের ধরে এ ধরনের ঘটনা তারা ঘটাতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রায়ই অনিয়মিত ছাত্র বলে অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১০ বছর কোনো ধরনের ককটেল বিস্ফোরণ হয়নি, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বাধা হয় এমন কাজ ছাত্রলীগ কখনো করেনি। ছাত্রদলের কেউ নিয়মিত ছাত্র নয়, শিক্ষার পরিবেশ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই সেজন্য তারা এ ধরনের কাজ করার চেষ্টা করছে।

তবে ছাত্রদল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য, দীর্ঘদিন পর তারা ক্যাম্পাসে তাদের সক্রিয়তা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসে তাদেরকে বিতর্কিত করতে এ ধরনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমান বলেন, মধুর ক্যান্টিনের মতো জায়গায় যেখানে সারাক্ষণ সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠনের নেতৃস্থানীয় ছাত্রদের আনাগোনা, গোয়েন্দা সংস্থা সব সময় আমাদের ট্রেইস করছে সেখানে কিভাবে আমরা এ ধরণের ঘটনা ঘটাব? যেখানে ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে, সে স্থানে সিসিটিভি রয়েছে। তা দেখে প্রশাসন শনাক্ত করতে পারবে। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাবির চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, এসব ঘটনায় দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি প্রশাসন। বরং রাজনৈতিক দলীয় কোন্দলের কারণে এসব ঘটনা ঘটছে বলে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অন্যদিকে, আমাদের মতো সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে কুচক্রীমহল এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি, মামলা হয়েছে। আমরা যাচাই করে দেখছি কারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী সুনির্দিষ্ট কোন গোষ্ঠী বা দলকে অভিযুক্ত করেননি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ককটেল বিস্ফোরণ করে কেউ রেহাই পাবে না। আমাদের প্রক্টরিয়াল বডি সর্বদা সজাগ রয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের সচেতনতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় আমরা সকল ষড়যন্ত্রকে নস্যাত্ করে দিতে পারব।