‘দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ’ প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি ঢাবি শিক্ষার্থীদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ভবনে ডাকসুর ভিপি (সহ-সভাপতি) নুরুল হক নুরসহ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা-মামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল শেষে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সেখানে স্মারকলিপি পাঠ করে শুনিয়েছেন স্বতন্ত্র জোটের মেহেদি হাসান। এসময় ঢাবি প্রশাসনকে আগামী ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। এরমধ্যে চার দফা দাবি মেনে না নেওয়া হলে বৃহৎ কর্মসুচি পালনের ঘোষণা দেন তারা।
সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে উপাচার্য বরাবর দেয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা অত্যন্ত উদ্বেগ ও ক্ষোভের সাথে জানাচ্ছি যে, ডাকসু ভবনে নৃশংস হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরসহ আহত শিক্ষার্থীদের নামে মামলা করা হয়েছে, যার বিরুদ্ধেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো বক্তব্য আমরা পাইনি। উপরন্ত আহতদেরকেই দোষারোপ করার চেষ্টা করা হয়েছে যা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত।’
আরো বলা হয়েছে, ‘গত ১৭ ডিসেম্বর রাজু ভাস্কর্যের সামনে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরসহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে, এসএম হলে, বিজয় ৭১ হলসহ ক্যাম্পাসে বারংবার নুরের ওপর সন্ত্রাসী হামলা করা হচ্ছে। কিন্তু হামলাকারীরা বারবার ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। যার ফলে সহিংসতা বেড়েই চলেছে, যার দায়ভার প্রশাসন কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।’
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাস-সহিংসতায় আবুবকর, হাফিজুর মোল্লাসহ অনেক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে প্রতিদিন অসংখ্য শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। হলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানে হল প্রশাসন বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। সন্ত্রাসীদখলদারদের কাছে জিম্মি সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অনেক ঘটনা প্রতিদিন ঘটে যা তারা প্রশাসনের কাছে প্রকাশ করার মতো নিশ্চয়তাও পায় না। সরকারের মদদপুষ্ট ছাত্রলীগের পক্ষ নিতে গিয়ে প্রতিটি ঘটনায় প্রক্টর শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।’
তারা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি আবাসিক হলে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব জারি রেখে, ছাত্রদেরকে গেস্টরুমে ম্যানার শেখানোর নামে ভয় দেখিয়ে গেস্টরুমগুলোকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত করেছে। গেস্টরুম নির্যাতনে ছাত্র নিহত হবার ঘটনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশকে দীর্ঘস্থায়ী আতঙ্কের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
শিক্ষাঙ্গনের এমন দমবদ্ধ ও অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতি উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য একেবারেই অনুপযোগী উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘ছাত্রদের মতপ্রকাশের অধিকার ভূলুণ্ঠিত। মতপ্রকাশ করা একজন ছাত্রের স্বাভাবিক অধিকার হলেও বুয়েটের আবরার ফাহাদকে স্বাধীন মতপ্রকাশের কারণে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হতে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখির কারণে বেশ কিছু শিক্ষার্থী নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে।’
ডাকসু ভবনে ঢুকে ভিপি নূরুল হক নূরসহ শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা করা হলেও প্রক্টরকে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নৃশংসতা বন্ধ করতে উদ্যোগী হবার কথা বললে তিনি যথাসময়ে সেখানে উপস্থিত হননি, দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন বলেও অভিযোগ তাদের। তারা বলেন, ‘তিনি ইনিয়ে বিনিয়ে হামলাকারীদের পক্ষে কথা বলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাঁর এই আচরণ স্পষ্ট করে যে, তিনি হামলাকারী মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের মদদদাতা এবং হামলার সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছে।’
তারা আরো বলেন, ‘ছাত্রদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত প্রক্টর দায়িত্ব পালনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এরকম পক্ষপাতদুষ্টু নির্লজ্জ একজন ব্যক্তি কোনোভাবেই প্রক্টরের পদে বহাল থাকতে পারেনা। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য সিসি টিভি লাগানো হয়েছে অথচ সেই সিসিটিভির ফুটেজ গায়েব করা হয়েছে। প্রক্টরিয়াল প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব নয়।’
এমতাবস্থায় অবিলম্বে চার দফা দাবির বাস্তবায়ন চেয়ে আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘আমরা আমাদের অধিকার আদায়ে ছাত্রসমাজকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলবো। ক্যাম্পাসে চলমান সন্ত্রাস দখলদারিত্ব ও সহিংসতার অবসানের জন্য গণতান্ত্রিক শিক্ষাঙ্গন ও ছাত্রসমাজের স্বার্থে আন্দোলনকারী গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল ১২টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য গঠন করছি। যেকোনো সন্ত্রাসী, সাম্প্রদায়িক ও স্বৈরাচারী শক্তির বিরুদ্ধে আমরা আমাদের লড়াই-সংগ্রাম পরিচালনা করবো।’
বিক্ষোভকারীদের চার দাবির মধ্যে রয়েছে, নূরুল হক নূরসহ সকল শিক্ষার্থীর ওপর হামলাকারীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও আইনানুগ বিচার করতে হবে; শির্ক্ষাথীদের নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতার দায়ে প্রক্টরকে অপসারণ করতে হবে; ডাকসুতে হামলায় আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার প্রশাসনকে বহন করতে হবে, হামলায় আহতদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া হলে হলে দখলদারিত্ব, গেস্টরুম-গণরুম নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
এর আগে রাজু ভাস্কর্য থেকে বের করা বিক্ষোভ মিছিলটি উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হবে। সেখানে চারদফা দাবি আদায়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন জোটের নেতারা। কর্মসূচিতে ছাত্র পরিষদ ছাড়াও বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিক্ষোভ থেকে তার স্লোগান দেন, ‘শিক্ষা সন্ত্রাস একসাথে চলে না, শিক্ষা ছাত্রলীগ একসাথে চলনা’, ‘পেশ পেশ পেশ হবে, স্মারকলিপি পেশ হবে’, ‘দিয়েছি তো রক্ত আরো দেবো রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’ ‘নূরের ওপর হামলা কেন প্রশাসন বিচার চাই’ ইত্যাদি।
প্রসঙ্গত, গত ২২ ডিসেম্বর দুপুরে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর ও তার অনুসারীদের ওপর হামলা চালায়- মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীরা। তবে হামলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও জড়িত বলে অভিযোগ করেন ভিপি নুরসহ হামলায় আহত সাধারণ ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা।
হামলায় নুরসহ অন্তত ৩৪ জন আহত হন। হামলায় আহত ভিপি নুরসহ অন্যরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হন। ঘটনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।