০৭ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:৪১

ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির শৃংখল ভাঙতে হবে: ভিপি নুর

  © টিডিসি ফটো

বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকাণ্ড দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিক দুবৃত্তায়নের চরম প্রতিফলন বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুর। এ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্বত্তায়নের রাজনীতির শৃংখল ভাঙার জন্য সারা বাংলার ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান। 

সোমবার (১০ অক্টোবর) আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বুয়েট ক্যাম্পাস অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী দেয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন নুর। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এর আয়োজন করে।

নুরুল হক নুর বলেন, ‘আজকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কি হচ্ছে? প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দলদাস প্রশাসনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়ার্ত পরিবেশ কায়েম করা হয়েছে। যেখানে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের ভয়ে অন্যরা কথা বলতে ভয় পাচ্ছে, একটা প্রতিবাদ করতে ভয় পাচ্ছে। আপনারা জানের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে হল রয়েছে সেখানে নিয়মানুযায়ী প্রশাসনে সিট দেয়ার কথা। কিন্তু আজকে আপনারা যদি ঢাবির দিকে তাকান, সেখানে মেয়েদের হলগুলোতে সিট দেয়া হয় প্রশাসনিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে। ছেলেদের বিজয় একাত্তর হল ব্যতীত অন্যান্য প্রতিটি হলে ক্ষমতাসীন দলের ছাতছাত্রসংগঠন শিক্ষার্থীদের হলে থাকতেও দেয় তাদের দিয়ে প্রোগ্রাম মিছিল-মিটিং করায়। তার বিনিময়ে তারা হলে থাকে। যদি তারা প্রোগ্রম না করে তাহলে তাদের হলে থাকতে দেয়না ’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনগুলোকে শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের সহযোগী দাবি করে ডাকসুুর ভিপি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দলকানা প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের এই অপকর্মের অন্যতম সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। যেই কারণে আপনারা দেখেছেন এই বুয়েটে কিছুদিন আগে যখন নিরাপদ সড়ক আন্দোলন হয়েছিল তখন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে তখনকার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে ওই ছেলেকে বেদম প্রহার করেছিলেন পরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। আমরা একটা কথা বলতে চাই কোনো শিক্ষার্থী যদি অন্যায় অপরাধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন রয়েছে তাদের হাতে তুলে দেবেন তারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু ছাত্রলীগকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গায়ে আঘাত করার অধিকারটা কে দিল?’

তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন রাখতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যিনি এক সময় ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন, ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বেও ছিলেন কিন্ত তখন এ ছাত্রলীগ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিভিন্ন বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে তখন তিনি ছাত্রলীগের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। আমরা বলতে চাই যে আজকে ছাত্রলীগ কারা চালাচ্ছে? যে ছাত্রলীগ ছাত্রদের প্রতিনিধি হয়ে আজকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে জিম্মি করে জোর করে মিছিল মিটিং করাচ্ছে। তাদের কথা না শুনলে শিক্ষার্থীদেরকে হল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে, শিক্ষার্থীদেরকে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং সর্বশেষ পরিণিতি আমরা দেখেছি বাংলাদেশের সেরা প্রতিষ্ঠান বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে একজন ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করে সিঁড়িতে তার লাশ রাখা হয়েছিল। আপনারা চিন্তা করেন একবার বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে প্রশাসন রয়েছে আবার সিসিটিভি ফুটেজ ইতোমধ্যেই সরিয়ে ফেলেছে।


আরবার হত্যার বিচার নিয়ে প্রশাসনের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে ভিপি বলেন, ‘আমরা একটা কথা বলতে চাই আপনারা বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস পড়ুন। এই ছাত্রসমাজ জেগেছে। আপনার সিসিটিভি ফুটেজ যতই সরিয়ে ফেলুন আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচার অতি দ্রুত সমেয়ের মধ্যে হতে হবে। অন্যথায় আবরার হত্যাকাণ্ড সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিস্ফূলিঙাগ হয়ে জ্বলে উঠবে।’

বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসগুলোতে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলন-সংগ্রামে সোচ্চার থাকাদের উৎসাহ প্রদান করে ভিপি বলেন,  আমরা অভিন্দন জানাতে চাই সংগ্রামী ছাত্রসমাজকে যারা প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যায়-অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। আপনারা দেখেছেন যে গোপালঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে যে দলদাস প্রশাসন তাদেরকে জিম্মি করে নির্যাতন করেছিল তার প্রতিবাদ করেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করছে।

দুর্বত্তায়নের রাজনীতির শৃংখল ভাঙার আহ্বান জানিয়ে নুর বলেন, সারা বাংলার ছাত্র সমাজের প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের একজন প্রতিনিধি হিসেবে আহ্বান জানাবো আজকের ছাত্রসমাজ দুবৃত্তায়নের রাজনীতিতে জিম্মি। সুতরাং আপনাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই দুবৃত্তায়নের রাজনীতির শৃংখল ভাঙতে হবে। যদি তারা ভাঙতে না পারেন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে না।

সন্ত্রসীদের বিচারের আওতায় শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা ২০১৯ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে এসে আমরা দেখি সেই আইয়ুবি আমলের, তার শাসনামলের বৈশিষ্ট্য। আইয়ুব খানের সময় তার সন্ত্রাসী ছাত্রসংগঠন ছিলো এনএসএফ। সেই এনএসএফ একজন কুখ্যাত ছাত্রনেতা ছিলেন তিনি সাপ হাতে নিয়ে ঘুরতেন। মধুর কেন্টিনে, কলাভবনের সামনে নানানভাবে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করতেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাকে প্রতিহত করেছে, ক্যাম্পাসছাড়া করেছে। সুতরাং আমরা আজকে বলতে চাই, আমরা ছাত্রলীগের ভালো কাজের বিরোধী নই, কিন্তু ছাত্রলীগের মধ্যে যারা সন্ত্রাসী রয়েছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে। আমরা সেই সন্ত্রাসীদের বিচার চাই।’

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিথ ছিলেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল ফারুক হাসান, রাশেদ খাঁন, মাহফুজুর রহমান প্রমুখ।