ঢাবিতে চান্স পেয়ে খুশি হয়েছিলাম, তবে টাকার চিন্তায় সব এলোমেলো
হাজারো বাধা পেরিয়ে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘গ’ ইউনিটে চান্স পেয়েছেন মেধাবি ছাত্রী সুবর্ণা খাতুন। মেধা তালিকায় তার অবস্থান ৯২৭ নম্বরে। তবে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েও তার ভর্তি নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়ার কবি আজিজুর রহমান সড়কের সুবর্ণা খাতুনের বাড়ী। জানা গেছে, দিনমজুর মায়ের মেধাবী সন্তান সুবর্ণার ভর্তির টাকা জোগাড় হয়নি। ভর্তি ছাড়াও কিভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ চালাবে, দুশ্চিন্তা সেটা নিয়েও। চোখে অশ্রু নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন সুবর্ণার মা আরজিনা বেগম।
ছোট্ট খুপড়ি ঘরে মা আর মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে থাকেন আরজিনা বেগম। মেয়ে আক্ষেপ করে বলেন, শোবার ঘরই নেই, আবার পড়ার ঘর থাকবে কেমন করে? মামার ঘরের মধ্যে চৌকির ওপর বসেই পড়ালেখা করেন তিনি।
২০১৬ সালে এসএসসি তে জিপিএ-৫ পান সুবর্ণা। পরে অর্থের অভাবে আর কলেজে ভর্তি হতে পারেননি। তবে পরের বছর অনেকটাই জেদ করেই কলেজে ভর্তি হন তিনি।
সুবর্ণার মা আরজিনা খাতুন শহরের বটতৈল এলাকায় তুলা মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তিনি জানান, মেয়ে সুবর্ণা খাতুনের জন্মের পর তার বাবা মারা যান। অন্যের হোটেলে এবং তুলা মিলের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে মেয়েকে খুব কষ্টে বড় করেছেন।
সুবর্ণা বলেন, মায়ের পক্ষে ভর্তির এতগুলো টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। টিউশনি করে যা জুগিয়েছিলাম, তা ভর্তি পরীক্ষার ফরম আর ঢাকা আসা-যাওয়ার খরচ মেটাতেই শেষ হয়ে গেছে।
তিনি জানান, ‘খুশি হয়েছিলাম চান্স পেয়ে। কিন্তু ভর্তি বা টাকার চিন্তায় সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায় আমার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার স্বপ্ন মনে হয় আমার পূরণ হবে না।’
সুবর্ণা বলেন, ‘মামার রুমের চৌকির ওপর বসেই পড়ে পড়ে আমি এতদূর এসেছি। এ পর্যন্ত কোনো ক্লাসের সব বই কিনতে পারিনি। সহপাঠীদের কাছ থেকে ধার করে বই নিয়ে পড়েছি। শিক্ষকরাও সহযোগিতা করতেন।’
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. সাইফুল আলম জানান, ‘সুবর্ণা অসম্ভব মেধাবী। কিন্তু মেয়েটার বাবা নেই, খুব দরিদ্র। ওর একজন স্কুল শিক্ষক এ বিষয়ে জানান। আমরা যতটুকু পেরেছি সাহায্য করেছি। আমার কাছে ইংরেজি পড়ত। ইংরেজিতেও সে খুবই ভালো।’