ঘটনাচক্রে মুক্তিযোদ্ধা হন জিয়াউর রহমান: বারকাত
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় জিয়াউর রহমানকে ‘ঘটনাচক্রে মুক্তিযোদ্ধা’ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। তিনি বলেছেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন দু’ধরণের। এক হল বাই চয়েস মানে স্বেচ্ছায় যারা যুদ্ধে গিয়েছিলেন আর দ্বিতীয়টি হল বাই চান্স বা ঘটনাচক্রে মুক্তিযোদ্ধা। জিয়াউর রহমান ছিলেন ঘটনাচক্রে মুক্তিযোদ্ধা। আর আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছি তারা মৃত্যুকে জেনে নিয়েই গিয়েছি।’’
শুক্রবার বিকালে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারাস অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
‘আসুন দুর্নীতিবাজ মুখোশধারীদেরকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “আমার ভয় হয়। কারণ বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ২৬শে মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমার কৃষক দুর্নীতি করে না, আমার শ্রমিক দুর্নীতি করে না, দুর্নীতি করে ‘শিক্ষিত্’ লোক। তিনি তাদের ‘শিক্ষিত’ বলেন নাই, বলেছেন ‘শিক্ষিত্’। ২০% শিক্ষিত লোকের মধ্যে ৫% লোক দুর্নীতি করে। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। তারপর আর তাঁকে বাঁচতে দেওয়া হয়নি। আজকে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাও যখন দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু করেছেন তখন ষড়যন্ত্রকারীরা কিন্তু বসে নেই। ষড়যন্ত্র যে হচ্ছে না- এ কথা আমরা কেউ বলতে পারব না। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা সতর্ক থাকুন। নেত্রীকে বাঁচাতে হবে।”
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন বলেন, “নানামুখী ষড়যন্ত্র করে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তিরা কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছিলো। কোটা বিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তিকে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কখনোই দাঁড়াতে দিবো না। আগামীতে বাংলাদেশের কোথাও আমরা তাদের দাঁড়াতে দেবো না।”
দুর্নীতিবিরোধী অভিযান বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা এতোদিন দুর্নীতিবাজদের কুশপুত্তলিকা বানিয়ে তাদেরকে ডাস্টবিনে ফেলেছি। আমরা আর দুর্নীতিবাজদের কুশপুত্তলিকা বানাব না। আমরা তাদের ঘর থেকে ধরে এনে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেব। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধকে আমরা দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে নিলাম।”
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, “সম্প্রতি সরকারের দুর্নীতি এবং মাদক নির্মূল অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল অন্যায়-অনিয়ম-অবিচার-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যাচ্ছে যার প্রমাণ আপনারা ইতিমধ্যে দেখেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সর্বদা কাজ করে যাবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানের জন্য প্রয়োজনে পিতাদের ন্যায় আমরা আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ করতে প্রস্তুত আছি।”
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর উক্ত আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কোষাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঢাবি শাখার সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি আহমেদ হাসনাইন, সাধারণ সম্পাদক সোহেল মিয়া, দক্ষিণের সভাপতি রেজাউল করিম ভুইয়া, সাধারণ সম্পাদক তানভীর মল্লিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি তানভীর মাহতাব সৈকত।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আবদুল গাফফার দেওয়ান রাজীব, মিজানুর রহমান লিটন, শরীফুল হাসান শুভ, আমিনুল ইসলাম, অাফ্রিন তুলি, লামিয়া দীপা, শুভ্র মাহমুদ, মতিউর রহমান বাবু, শাহীন মাতবর, এফ রহমান হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন, শেখ সাঈদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
বক্তব্যে ঢাবি শাখার সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “দলের নাম ব্যবহার ও বিক্রি করে যারা কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে, বিদেশে পাচার করেছে তাদেরকে অবিলম্বে দল থেকে বহিস্কার করে দিতে হবে। দুর্নীতিবাজ আমলা এবং নেতাদের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করে আইনের আওতায় আনা হোক।”
সকাল ৯ টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচি পালন শুরু হয়। বিকাল ৩ টায় দুর্নীতি বিরোধী আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাত ৮ টায় ডাকসু ক্যাফেটেরিয়াতে এক বিশেষ নৈশ ভোজের মধ্য দিয়ে শেষ হয় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ১ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান।