ছাত্রলীগের ইমেজ বাড়ানোই আমার প্রধান লক্ষ্য
নানা বিতর্ক আর সমালোচনার মধ্যে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন এনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আল-নাহিয়ান খান জয়কে সভাপতি ও লেখক ভট্টাচার্যকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছাত্রলীগের দায়িত্ব দেয়া হয়। আগামী দিনে সংকট দূর করে ছাত্রলীগকে কিভাবে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন এ বিষয়ে কথা বলেছেন শীর্ষ দু’নেতা। আজ সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নুর হোসেন ইমন।
লেখক ভট্টাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সমাজকল্যাণ বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী। বাড়ি যশোরের মনিরামপুরে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শেষ করেছেন নিজ এলাকায়। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে। এরপর ২০০৮-০৯ সেশনে ঢাবিতে ভর্তি হন। এরআগে তিনি ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ হল শাখার সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব পাওয়ার আগে তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সাক্ষাৎকারের চম্বুক অংশ পাঠকের জন্য প্রকাশ করা হলো-
প্রশ্ন: কীভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে এসেছেন?
লেখক: ঢাবিতে ভর্তি হওয়ার পর ১ম বর্ষ থেকেই হলে উঠে সাংগঠনিক ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করি। পারিবারিকভাবে আমরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনায় বিশ্বাসী; আমার পরিবারের ৩ সদস্য সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাদের থেকেই যুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনেছি। ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোন রাজনীতির সাথে যুক্ত হওয়ার কোন চিন্তাই কখনও মাথায় আসেনি।
প্রশ্ন: ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে আসবেন এমন স্বপ্ন কখনও দেখেছিলেন?
লেখক: এমন টার্গেট নিয়ে রাজনীতি শুরু করিনি। যখন যে ইউনিটে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সে ইউনিটের সভাপতি-সম্পাদকের দেয়া দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন: ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে এসেও হলে সাধারণ জীবনযাপন করার অনুপ্রেরণা কী?
লেখক: আমি ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে কখনো ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করিনি। আমার মাধ্যমে যদি ১০জন কর্মীরও সুপথে যায় সেটাই হবে সফলতা। বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে একটা দোদুল্যমান অবস্থা লক্ষ্য করেছি। তাই আমি সবসময় চাই তাদের কাছাকাছি থেকে সুষ্ঠু তত্বাবধান করতে। এজন্যই আমি হলে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
প্রশ্ন: বিতর্কিতদের বাদ দিতে কি করবেন?
লেখক: যাদের ব্যাপারে অভিযোগ আছে; আমরা নেত্রীর সাথে দেখা করার পর নির্বাহ কমিটির একটি বৈঠক করবো। এরপর যারা দোষী তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে।
প্রশ্ন: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্মেলন দিবেন কিনা?
লেখক: যেহেতু আমরা এর আগে থেকেই ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করছি; তাই সব ইনফরমেশন আমাদের কাছে আছে। সুতরাং কমিটি দিতে খুব বেশি সমস্যা হবে না।
প্রশ্ন: সংগঠনের চাঁদাবাজ টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিবেন?
লেখক: যে যে ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের বিষয়গুলো এসেছে; সেখানে আমরা সেখানে টিম পাঠাবো। এরপর তদন্ত করে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
প্রশ্ন: আবাসক সমস্যা নিরসনে ছাত্রলীগ কি করবে?
লেখক: নতুন আবাসিক হল নির্মাণ, আসন সংখ্যা বৃদ্ধিসহ ছাত্রবান্ধব কাজগুলো করার জন্য চেষ্টা করে যাব।
প্রশ্ন: গেস্টরুম, জোর করে মিটিং-মিছিল করানো ও প্রচলিত প্রটোকলে সংস্কার আসবে?
লেখক: গেস্টরুমসহ মিছিল মিটিংয়ে যারা অতি উৎসাহী হয়ে এর ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
প্রশ্ন: পদায়নে কি দেখে মূল্যায়ণ করবেন?
লেখক: পদ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত, পারিবারিক রাজনৈতিক আদর্শকে প্রাধান্য দেয়া হবে। শুধুমাত্র আদর্শের বিষয়টিই দেখা হবে। এছাড়া অঞ্চল বা ডিপার্টমেন্ট অন্য আর কিছু বিবেচনায় আসবে না।
প্রশ্ন: সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ছাত্রলীগ কি করবে?
লেখক: সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেব সব ধরণের সচেতনতামূলক কর্মসূচি ছাত্রলীগ গ্রহণ করবে। সামাজিক ও প্রাকৃতিক সব ধরণের দুর্যোগ মোকাবেলায় ছাত্রলীগ স্পেশাল ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
প্রশ্ন: ডাকসুর ধারাবাহিকতা রক্ষায় সহযোগীতা করবেন কিনা?
লেখক: ডাকসুর ধারাবাহিকতা রক্ষায় আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
প্রশ্ন: ডাকসু নির্বাচনের জন্য ছাত্রলীগ কি প্রস্তুতি নিবে?
লেখক: সামনের ডাকসু নির্বাচনে যেন ছাত্রলীগ একটা পদও না হারায় সেজন্য আমরা কাজ করব। আমরা গুজব প্রতিহত করার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে ছাত্রবান্ধব কর্মসূচি পালন করব। আর ছাত্রদের মাজে জনপ্রিয় নেতাদের মধ্য থেকে ডাকসুর প্যানেল নির্বাচন করা হবে।
প্রশ্ন: আপনার রাজনৈতিক পরিকল্পনা কি?
লেখক: এটা আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু মাত্র। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের উপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন এমনভাবে ছাত্রলীগকে উপস্থাপন করতে চাই; যার মাধ্যমে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পাবে। আগামী দিনেও আমি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজের সাথে যুক্ত হবো।
প্রশ্ন: ছাত্রলীগকে ইমেজ সংকট থেকে উত্তরণে কি করবেন
লেখক: শুধুমাত্র এটার জন্যই প্রধানমন্ত্রী আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। ১০ মাসের জন্য আমরা দায়িত্ব পেয়েছি। এ সময়ের মধ্যে সারাদেশের কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করে সম্মেলনের সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরী করাই হচ্ছে আমাদের প্রধান লক্ষ্য। চেইন অব কমান্ডারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে কর্মীদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারলে অনেক সমস্যা কেটে যাবে।
সারাদেশের কর্মীদের উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যে আদর্শিক শক্তির মাধ্যমে ছাত্রলীগ ঐক্যবদ্ধ সে শক্তি বজায় রাখতে হবে। ছাত্রলীগে কোন ধরণের গ্রুপিং, সুপারিশ কিছুই লাগবে না। শুধু বঙ্গবন্ধু কন্যার উন্নয়নের অংশীদার হয়ে আমরা ছাত্রলীগকে এগিয়ে নিতে চাই।