১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০১:২১

ঠিক মতো ম্যানেজ করতে না পারায় নেতৃত্ব খুইয়েছেন শোভন-রাব্বানী

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ  © ফাইল ফটো

‘দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, কমিশন ও চাঁদাবাজিই ছাত্রলীগ নেতাদের দায়িত্ব’ মন্তব্য করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, এটা ঠিকমতো করতে না পারার কারণেই শোভন-রাব্বানী ছাত্রলীগের নেতৃত্ব খুইয়েছেন বলে ধারণা করছেন তিনি। মঙ্গলবার ‘শিক্ষা দিবস’ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে তিনি একথা বলেন।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, দুর্নীতি, কমিশন, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি যেসব অভিযোগ সেগুলো তো আসলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব। সরকারি ছাত্র সংগঠন, সরকারি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, সরকারি শ্রমিক সংগঠন, সরকারি যুব সংগঠন এদের তো দায়িত্বই এটা। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে দেশের সমস্ত জায়গায় যাতে তাদের অপকর্মের কোনো প্রতিবাদ না হয়, সেজন্য ত্রাসের রাজত্বকরণ।’

তিনি বলেন, ‘তাদের দায়িত্ব হচ্ছে টেন্ডার বাক্স ছিনতাই করে তাদের পছন্দমতো ঠিকাদার নিয়োগ করা, উন্নয়ন প্রকল্পে কমিশন যাতে নিশ্চিতভাবে উপরের মহলের মন্ত্রী-এমপি তারা পেতে পারে, সেটার যেন কোনো ধরনের প্রতিবাদ যাতে না হয় সেটা নিশ্চিত করা। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে হাট, বাজার, বন, জঙ্গল, খোলা মাঠ, নদী এগুলো যাতে তাদের যারা বস, তাদের যারা বড় ভাই, তাদের যারা ওস্তাদ তারা যাতে দখল করতে পারে সেজন্য নিজেদের নিয়োজিত করা, নিজেদের সার্ভিস দেওয়া।’

‘তার মানে যে কাজগুলো তাদের দায়িত্ব হিসেবেই দেওয়া হয়, এই কাজগুলো ঠিকমতো করতে পারলে তাদের প্রমোশন হয়। এই কাজগুলো ঠিকমতো করতে পারলেই তাদের চাকরি থাকে, এই কাজগুলো ঠিকমতো করতে পারলেই তারা সভাপতি-সম্পাদক হন। সেই কাজগুলো করার জন্য তাদের চাকরি গেছে, এটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। তাদের এই যে অব্যাহতি সেটা হয়েছে, তারা ঠিকমতো ম্যানেজমেন্ট করতে পারেননি।’

জাবির এই অধ্যাপক বলেন, ‘আন্দোলনের মুখে তারা যেটা করেছে সেটা প্রকাশিত হয়েছে, আন্দোলনের মুখে উন্মোচিত হয়েছে তাদের আসল চরিত্র। এই কারণেই হয়ত তাদের ম্যানেজমেন্টের দুর্বলতার কারণে কিংবা তাদের যারা ওস্তাদ তাদের নির্দেশ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভঙ্গ করার কারণে তাদের চাকরি গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বা কিছু একটা হয়েছে। কী হয়েছে সেটা আমরা পরিষ্কার জানি না, কেন তাদের সরানো হয়েছে সে বিষয়েও আমাদের পরিষ্কার ধারণা নেই। কারণ সরকারের তরফ থেকে সেটার ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি।’

‘ছাত্রলীগ একটা ছাত্র সংগঠন। তার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সম্মেলনের মাধ্যমে একটা প্রক্রিয়ার সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন কিন্তু এটা এমন সংগঠন যেখানে সম্মেলন হয় কিন্তু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ঠিক করেন প্রধানমন্ত্রী। এটা কী ধরনের সাংগঠনিক প্রক্রিয়া এটা আমরা জানি না। এবং সেই সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাদের অব্যাহতিও দেন প্রধানমন্ত্রী।’

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা অংশ নেয়।

ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জহর লাল রায়ের সঞ্চালনায় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মো. ফয়েজ উল্লাহর সভাপতিত্বে সমাবেশে ঢাকা জেলার বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশ শেষে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণে একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।