৩০ বছর টাউট-বাটপারের দলেরা ক্ষমতায় ছিল: মোজাম্মেল হক
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে অদ্যাবধি স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৯ বছরের মধ্যে ৩০ বছরই দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা টাউট-বাটপারদের দলের কাছে ছিল যারা দেশকে পিছনের দিকে নিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর যে অবদান, আমরা এখনো বাঙালি জাতির সামনে তুলে ধরতে পারিনি। আজকে ৪৯ বছর যাবৎ আমরা ডিফেন্সিভ হচ্ছি, অফেনসিভ হতে পারছি না। শুধু আত্ম সমর্থন করতে হচ্ছে। ৪৯ বছর চলে গেল। এই ৪৯ বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায়, আমাদের মহান নেত্রী, সফল রাষ্ট্রনায়ক দশরত্ন শেখ হাসিনা আছেন সাড়ে ১৫ বছর। এই ১৯ বছর আমাদের ক্ষমতা। আর ৩০ বছর ছিল জিয়া-এরশাদ-খালেদ, মার্শাল, টাউট বাটপারের দলেরা। যারা ক্ষমতায় ছিল ৩০ বছর।'
এই ৩০ বছরে তারা দেশকে শুধু পিছনের দিকে নিয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত একটি আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আজ রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বাংলাদেশ আইন সমিতি অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ খুনি উল্লেখ করে আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেন, ' জিয়াউর রহমান যে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ খুনি এটা যারা আত্মস্বীকৃত খুনি তারাই বলে গিয়েছে। এছাড়াও জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করেছিল। কাদের মন্ত্রী বানিয়েছিল? যাদের প্রত্যেকে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতা করেছিল। সমস্ত ক্রিমিনালদের সে মন্ত্রী করে দিল। একজনও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ছিল না। এবং সে সংবিধান থেকে ধর্ম নিরপেক্ষতা উঠিয়ে দিল। ধর্ম নিরপেক্ষতা উঠিয়ে দিয়ে পাকিস্তানের নাগরিক গোলাম আজমকে এদেশে এনে নাগরিকত্ব দিল। তাকে আবার জামাতে ইসলামী দল গঠন করার সুযোগ করে দিল। এতে কী বুঝা যায়? এদেশকে মিনি পাকিস্তান বানানোর জন্য যা যা করণীয় সব করল।'
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোজাম্মেল হক বলেন, ''মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ জন (সেক্টর কমান্ডারের)? মধ্যে একমাত্র জিয়াউর রহমানই বলেছিল, 'আমি মুজিব নগর সরকারের অর্থাৎ রাজনৈতিক সরকারের অধীনে যুদ্ধ করবো না।' সে বলল 'আমরা ওয়ার্ড কাউন্সিল করে যুদ্ধ করবো।' এই সেই ক্রিমিনাল।''
বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বমানের নেতা আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব কি শুধু বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল নাকি বিশ্বমানের ছিল? যেদিন আমাদের তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হতো, আমাদের অবস্থাও তা-ই ছিল, সেইদিনই তিনি জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে সারা বিশ্বের নীতি কী হবে, কীভাবে চলবে সেই ব্যাপারে দিক নির্দেশনা মূলক কথা বলেছিলেন।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সাল পর্যন্ত সময় চেয়েছিলেন। যে গতিতে তিনি চললে ২০৩০ সালের মধ্যেই সেটা সম্ভব। আর তার একমাত্র পথ হচ্ছে বাকশাল। আমি বিষয়টা ক্লিয়ার করতে চাই, বাকশালের দুইটি অংশ ছিল। একটা রাজনৈতিক, এটা আর সম্ভব নয়। আজকের প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করি না সেটা বাস্তবসম্মত। কিন্তু তার যে দ্বিতীয় দফা ছিল কর্মসূচি আমরা যেটাকে মুজিববাদ বলে স্লোগান দিয়েছি, বঙ্গবন্ধু যে অর্থনৈতিক কর্মসূচি দিয়েছিলেন, সেই অর্থনৈতিক কর্মসূচি একমাত্র মুক্তির সনদ বাঙালি জাতির।'
বাংলাদেশ আইন সমিতির জাতীয় শোক দিবস অনুষ্ঠান আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাওছারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচনা করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিষয়ক মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম। এছাড়া, বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ. কে. এম. সাহিদুল হক ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
বাংলাদেশ আইন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজুর রহমান আল-মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ আইন সমিতির সাবেক সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান আনসারী, বাংলাদেশ আইন সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হানিফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এস এম মুনির প্রমুখ বক্তব্য দেন। এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কর্মকার ও ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা শেষে অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।