এবার ঢাবিতে এলো আলোড়ন সৃষ্টিকারী অপরাজিতা
ফুল দেখতে বা ফুলের সুবাস নিতে কার না ভাল লাগে। এই পৃথিবীতে এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যার ফুল ভাল লাগে না। ফুলের প্রেমে মুগ্ধ হয়ে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ফুলের ফসল নামক কবিতায় লিখেছেন, জোটে যদি মোটে একটি পয়সা খাদ্য কিনিয়ো ক্ষুধার লাগি’ দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার ফুল কিনে নিয়ো, হে অনুরাগী!
তবে, নীল ফুলের কথা বললে প্রথমেই যে অপরূপ রূপসী ফুলের কথা মনে আগে আসে তার নাম অপরাজিতা । ফুলে কোনো গন্ধ নেই, তবু রঙের বাহার আর মিষ্টি শোভায় অনন্য অপরাজিতা। আমাদের দেশে নীল, সাদা ও ক্বচিৎ বেগুনি-রঙের অপরাজিতা ফুল দেখা যায়। লতা জাতীয় গাছে এক পাপড়ি ও দুই স্তর পাপড়িতে এই ফুল হয়।
অপরাজিতা ফুলটি Popilionaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত যার ইংরেজি নাম বাটারফ্লাই পি। গাঢ় নীল ফুলটিকে ডাকা হয় নীলকণ্ঠ নামেও। পাশ্চাত্য উদ্ভিদবিদেরা বলেন, এই ফুল এসেছে মালাক্কা দ্বীপ থেকে। খুব প্রাচীনকালে এই দ্বীপ এশিয়াসহ অস্ট্রেলিয়া মিলে একটি মহাদেশে ছিল। টারনেটি বা মালাক্কা থেকে এসেছে বলে অপরাজিতার বৈজ্ঞানিক নাম ক্লিটোরিয়া টারনেটিকা। ক্লিটোরিয়া অর্থ যোনীপুষ্প। ফুলের ভিতরের আকৃতি দেখে এই নাম। কেরালায় একে বলে ‘শঙ্খপুষ্পী’। এই ফুলের বয়স অন্তত পাঁচ কোটি বছর। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, ঢাকায় রমনা পার্ক, শিশু একাডেমীর বাগান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, বলধা গার্ডেন ও কোনো কোনো অফিসের বাগানে এই ফুলের গাছ আছে। এই ফুল ঔষধি সম্পন্ন।
এ ফুল চক্ষুরোগ, গলগন্ড রোগ, বাত, কোষ্ঠকাঠিন্য, শুক্র রোগ, প্রসব, মূত্রকৃচ্ছ রোগে ভাল ফল দেয়।
তবে, সম্প্রতি এই নীল রঙ্গের অপরাজিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ছাত্র কেন্দ্রে (টিএসসি) কণা টি স্টলে (সাহাবুদ্দিন মামার দোকান) চা বানানোর পর থেকেই এই আলোড়নের সৃষ্টি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন অপরাজিতা ফুল বা অপরাজিতা ফুলের চায়ের বিষয়টি নিয়ে।
এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাস্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক গ্রুপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ও স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রুপে সবচেয়ে বেশি পোস্ট পড়েছে এই অপরাজিতার। শুধু অপরাজিতা চা ও অপরাজিতা ফুলের পোস্ট দিয়ে থেমে থাকেনি শিক্ষার্থীরা। অপরাজিতা ফুলের রঙের মশারি, টেবিল, ফ্যান, ভাতের প্লেট যাই পাচ্ছে অপরাজিতার ফুলের কালার হলেই তার সাথে মিল রেখে ফেসবুকে দিচ্ছে স্ট্যাটাস। তবে স্ট্যাটাস দেখে অনেকের পোষ্টের কমেন্টে বিরক্তির ছাপ লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে অপরাজিতা ফুলের ও চায়ের ফেসবুক পোস্ট এপ্রুভ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের এডমিনের সদস্যবৃন্দ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের এডমিন আজহারুল ইসলাম রায়হান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের এক পোস্টে লিখেছেন, অপরাজিতার পোস্ট এপ্রুভ করে আমরা ক্লান্ত। আপনারা এইবার অপরাজিতাকে মুক্তি দিন।
আরেক ছাত্র আবদুর রহমান লিখেছেন, পরাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয় শিক্ষার্থী ভাই ও বোইনেরা, এইবার আপনারা একটু থামেন,অনেক হইছে।আপনাগো হাতে ধরি "অপরাজিতা" ইস্যু নিয়া আর পোস্ট দিয়েন না। এইসব পোস্ট দেইখা এখন আমরা ক্লান্ত। একটা ইস্যু পাইলেই আমরা ওই ইস্যুরে টিস্যু বানাইয়া ফালাই! এখন নতুন কোন ইস্যু বাইর করেন। এক জিনিস বেশি দিন ভাল লাগে না।
তবে ফেসবুক পোস্ট ভালো মন্দ যাই লাগুক না কেন, টিএসসিতে শাহাবুদ্দিন মামার দোকানে ভালোই চলছে অপরাজিতার চা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অপরাজিতার স্ট্যাটাস দেখে দূরদূরান্ত থেকে অপরাজিতার চা খেতে ভিড় জমাচ্ছে অনেক মানুষ। তবে চা খেয়ে অনেকেই করেছেন ইতিবাচক নেতিবাচক সমালোচনা।
ইতিবাচক নেতিবাচক যাইহোক অপরাজিতার চা বিক্রি করে লাভবান কণা টি স্টল। এ বিষয়ে কণা টি স্টলের মালিক সাহাবুদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অপরাজিতা চা ভালই চলছে। প্রতিদিন নিত্য নতুন মানুষ এখানে চা খেতে আসছে।