১৯ আগস্ট ২০১৯, ১৩:৩৩

প্রাণনাশের আশংকা, প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিরাপত্তা চান নুর (ভিডিও)

  © টিডিসি ফটো

২০১৮ সালের ৩০ জুন থেকে গত ১৪ আগস্ট পর্যন্ত মোট আট বার ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ভিপি) নুরুল হক নুরের ওপর হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এসব হামলার সাথে জড়িতদের বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নুর।

আজ সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চান তিনি।

নুর তাঁর ওপর হামলাকারীদের বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীদের অযথা হয়রানি বন্ধ করুন এবং যারা হামলার সাথে জড়িত তাদেরকে অতি দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিন। কারণ অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানি করে তার মুখ বন্ধ রাখা যায় না।’

গত ৩০ জুন থেকে এ পর্যন্ত ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় প্রাণনাশের শঙ্কাবোধ করছেন উল্লেখ করে নুর বলেন, ‘প্রতিবার প্রকাশ্যে ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটলেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশের সহযোগিতায় চেয়েও পাওয়া যায়নি। পুলিশের নিরব ভূমিকা ছিলো সন্ত্রাসীদের সহায়ক।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ, কিছুদিন আগেও বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আপনি নিজেই বলেছেন, ‘সরকারের সমালোচনা করতেই বাধা নেই, দেশে ভিন্ন মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে।’ তাই আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ, ভিন্নমতের মানুষের উপর দমন-পীড়ন বন্ধ করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে আপনার দলের নেতা-কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন। দেশে শাসন প্রতিষ্ঠায় দলীয় প্রভাবমুক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর করুন।’

গত ১৪ আগস্টের ঘটনার দিন হামলার আশঙ্কায় গলাচিপা পুলিশের সহযোগিতা চাইলেও গলাচিপা থানার ওসি তাকে কোনো ধরণের সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ করেন নুর। তিনি বলেন, ‘গত ১৪ আগস্ট পুলিশের উপস্থিতিতেও সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর হামলা চালায় এবং পুলিশও আমার আত্নীয়-সমর্থকদের গ্রেফতারের হুমকিও দেয়। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে নগ্ন হামলা চালালেও ওসি হামলার কথা অস্বীকার করে। এমতাবস্থায় আমি আমার প্রাণনাশের শঙ্কাবোধ করছি।’

অন্যায়ের-অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ছাত্রসমাজ তথা দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হোন। আমি কোন অন্যায়- অপরাধ করিনি। শুধুমাত্র অন্যায়-অনিয়মের প্রতিবাদ করার কারণেই আমি ও ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীরা বার বার ক্ষমতাসীন দলের রোষানলের স্বীকার হয়েছি।’

ক্ষমতাসীন দলের নেতা ছাড়াও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের কাছ থেকেও প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন নুর।

ডাকসু ভিপি বলেন, ‘গত ১৪ আগস্ট চর বিশ্বাস থেকে আমার বোনের বাড়ি দশমিনা যাওয়ার পথে উলানিয়া বাজারে পটুয়াখালী-৩ সংসদ সদস্য এস. এম শাহজাদা সাজুর নির্দেশে গলাচিপা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহ’র নেতৃত্বে তার ভাই নুরে আলম, লিটু পেদা, আব্বাস পেদা, পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনুল ইসলাম রণো, উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক, উলানিয়া যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিল, যুবলীগ নেতা ইদ্রিস, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ফরিদ আহসান কচিন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ আসিফ, ছাত্রলীগ নেতা জাহিদ, তূর্য্যসহ আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের প্রায় শতাধিক নেতা-কর্মীরা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রড, স্টীলের পাইপ ও চাপাতি নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় প্রায় ২০-২৫ জনকে আহত, ১০টি মটরসাইকেল ভাংচুর, দুটি ডিসএলআর ও ৮৯ হাজার টাকা ছিনতাই হয়।

তিনি বলেন, ‘অমি নিজে, রবিউল, ইব্রাহিম, জাহিদ, রিয়াজসহ পাঁচ জন গুরুতর আহত হই। সন্ত্রাসীরা শুধু হামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি আমাকে চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত করেছে। ডাক্তার সিটি স্ক্যান ও ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করার জন্য বরিশাল মেডিকেলে রেফার করলেও সন্ত্রাসীরা এবং পুলিশ আমাকে জোর করে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য আমাকে ও আমার পরিবারকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।’

উল্লেখ্য, গত ১৪ আগস্ট বুধবার পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার উলানিয়া বাজারে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মীদের দ্বারা হামলার শিকার হন ভিপি নুর। এসময় নুর ছাড়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বেশ কয়েকজন নেতা আহত হোন। পরে পুলিশ গিয়ে নুরকে উদ্ধার করে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।