৩১ জুলাই ২০১৯, ১০:৩১

ভারপ্রাপ্ত আখতারুজ্জামান কি ভারমুক্ত হতে পারবেন?

  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি কে হচ্ছেন— তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। আজ দীর্ঘ ২৬ বছর পর পূর্ণাঙ্গতা পাওয়া সিনেট মনোনীত করবে তিন জনের ভিসি প্যানেল। এর মধ্য থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য একজনকে ভিসি হিসেবে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেবেন। সে ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আখতারুজ্জামান কি ভারমুক্ত হতে পারবেন? নাকি আসবে নতুন মুখ। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মানেই যেহেতু সরকারের উচ্চমহলের আশীর্বাদ; তাই শেষ খবর কী হয় তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তো থেকেই যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের আওয়ামী লীগপন্থী নীলদল এবং জাতীয়তাবাদপন্থী সাদাদল থাকলেও সমর্থকের অভাবে সাদা দল থেকে কেউ নির্বাচিত হবেন না তা নিশ্চিত। এবার ভিসি প্যানেল নির্বাচনে বিরোধী দল না থাকলেও মূল ভূমিকায় থাকছে শিক্ষক প্রতিনিধি ও রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটরা। বিরোধী পক্ষ থাকলে কার পক্ষে ভোট দিতে হবে তা সরকারের পক্ষ থেকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এবার প্রায় সবাই নীল দলের হওয়ায় সেরকম কিছুই থাকছে না। তবু সিনেট অধিবেশনে যেন ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি প্যানেল উত্থাপিত হয়, সেজন্য নীল দল মূল অধিবেশনে বসার আগেই প্যানেল চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের নীল দলের ভিসি প্যানেল চূড়ান্ত হয়েছে। যাতে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ৩৬ ভোট, ভারপ্রাপ্ত উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ৪২ ভোট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম মাকসুদ কামাল ৩০ ভোট পেয়ে প্যানেলে মনোনীত হয়েছেন।

নীল দলের অভ্যন্তরীণ সভায় তিনজনের এই ভিসি প্যানেল মনোনীত হয়। দলের মোট ৫৪ জন ভোটারের মধ্যে একজন অনুপস্থিত ছিলেন। আর একটি ভোট নষ্ট হয়েছে। সুতরাং মোট ভোট পড়েছে ৫২টি। এর আগে শিক্ষক, রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট সবাইকে নিয়ে এক রুদ্ধদ্বার সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে তিন জনের ভিসি প্যানেল উত্থাপন করা হয়। তা নিয়ে মতৈক্য হওয়ায় ব্যক্তি পর্যায়ে ভোটাভুটির আয়োজন করা হয়। 

কে হতে পারেন উপাচার্য— প্রশ্নটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র অধ্যাপকের সঙ্গে কথা বলেছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। যারা বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে চাননি। কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হতে সব কিছুর বাইরে রাজনীতি বিষয়টা থেকেই যায়। সুতরাং কে হবেন উপাচার্য এটা বলা কঠিন। তবে প্রার্থীদের অতীত কর্মকাণ্ড ঘাঁটলে কিছুটা অনুমান করা যায়।

নাম উল্লেখ না করার অনুরোধে তারা জানিয়েছেন, ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচনের দেয়ার মাধ্যমে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন  ভিসির অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। সে হিসেবে তিনি কিছুটা এগিয়ে থাকবেন— এটা অস্বাভাবিক নয়। তবে তার বিরুদ্ধে সমালোচনা যে নেই, সেটাও কিন্তু অস্বীকার করা যাবে না। তারা আরো জানান, বর্তমান ভিসি সমালোচনা থাকলেও দায়িত্ব নেয়ার পর কিছুটা ব্যালেন্স করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন তিনি। এরমধ্যে ডাকসু ও কোটা আন্দোলনের পাশাপাশি সাত কলেজের ইস্যুতেও সঙ্গতি রেখেছেন, যদিও তার সুষ্ঠু সুরাহা হয়নি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ শিক্ষক রাজনীতিতে চিড় ধরতে দেয়নি। সাবির্ক বিবেচনা করলে তিনি ফের ভিসি হতে পারেন।

আবার বাকি যে দু’সদস্য নীল দল থেকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়েছে, তারাও হেভিওয়েট। এর মধ্যে বর্তমান ড. মুহাম্মদ সামাদ বেশ কিছুদিন প্রো-ভিসি থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকের সমর্থন পেয়েছেন, সেটা সরকারেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়। আবার আওয়ামীপন্থী শিক্ষক হিসেবেও তার বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করলে তিনিও সমানতালে সরকারের গুড বুকে আছেন। তাছাড়া ইতোমধ্যেই প্যানেল নির্বাচনে অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের চেয়ে তার ৬ ভোট বেশি পাওয়াটাও অনেককে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সেটা সরকারও সহজভাবে ফেলতে পারবে না।

অন্যদিকে ড. এস এম মাকসুদ কামাল কয়েক টার্ম নীল দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থাকায় তারও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সেই গ্রহণযোগ্যতা যদি সরকার আমলে নেয়, তবে তার ভিসি হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়।

তবে ঘুরেফিরে সেই শুরুর কথাতেই ফিরে যান জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা। বলেন, সরকারের কর্তাব্যক্তিরা যাকে আস্থাভাজন মনে করেন, তিনি হবেন ঢাবির পরবর্তী উপাচার্য। যদিও সে ক্ষেত্রে প্রার্থীর ক্যাম্পাসে গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি বজায় থাকা উচিত বলে মনে করেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনেট সদস্য জানায়, তারা সরকার থেকে কোন নির্দিষ্ট বার্তা পাননি। তবে নীলদলের শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে শিক্ষকদের থেকে নির্বাচিত সিনেট সদস্যদের বৈঠকে কয়েকজনের নাম আলোচনায় আসে। সেখানে তিনজনের একাধিক নাম আসায় তাদের ধারণা, সিনেট সদস্যরা ভিসি প্যানেল নির্বাচনে নিজেদের ইখতিয়ার থাকবে। ফলে বর্তমান ভিসি বাদও পড়ে যেতে পারেন।

প্রসঙ্গত, ২৬ বছর পর পূর্ণাঙ্গ সিনেট পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে পাঁচ ছাত্র প্রতিনিধি সিনেটে যাওয়ার মাধ্যমে ১০৫ সদস্যের সিনেট পূর্ণাঙ্গ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩ এর আর্টিক্যাল ২১ (২) ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সিনেটের এই বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করেছেন। সিনেটের এই বিশেষ অধিবেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩ এর আর্টিক্যাল ১১(১) ধারা অনুযায়ী চ্যান্সেলর কর্তৃক ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগের জন্য তিন জনের একটি প্যানেল মনোনয়ন করা হবে।