টিএসসিতে যৌন নিপীড়ন বিরোধী মাইমোড্রামা জম্বি অনুষ্ঠিত
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০১৯, ০৯:৪৫ PM , আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯, ০৯:৪৫ PM
জম্বি সবার কাছে একটি পরিচিত নাম। পৃথিবীর নামিদামি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এই বিষয় নিয়ে সিনেমা বানিয়েছে। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর উদ্যোগে ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন এর পরিবেশনায় অনু্ষ্ঠিত হয়েছে যৌন নিপীড়ন বিরোধী একশন মাইমোড্রামা 'জম্বি'। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে সাত টায় টিএসসির সমগ্র প্রাঙ্গণে এই মাইমোড্রামা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়,বাংলাদেশ ও আশেপাশের কয়েকটি দেশে উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাওয়া শিশু ও নারী ধর্ষণ এর উপর ভিত্তি করে এই গল্পের সঞ্চালনা করা হয়েছে।
মাইমোড্রামায় দেখা যায়, নষ্ট মস্তিষ্কের কিছু লম্পট একজন অসহায় নারীকে গণধর্ষণ করে। বছর খানেক পরে মহিলাটির বাচ্চা হলে দুশ্চরিত্রা অপবাদ নিয়ে সে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করতে বাধ্য হয়। গার্মেন্টসে কাজ করে সে বাচ্চাটিকে বড় করে তুলতে থাকে। সাত বছরের মাথায় মেয়েটি একই লম্পট গ্যাংয়ের দ্বারা ধর্ষিত হয়।
ধর্ষিত হবার পরে মেয়েটির মধ্যে বায়োলজিক্যাল কিছু পরিবর্তন আসে। তার মধ্যে এমন এক ভাইরাস উৎপন্ন হয় যে ভাইরাস এর মাধ্যমে সে ধর্ষণকারীকে দেখলে চিহ্নিত করে কামড়ায়। ধর্ষক প্রকাশ্যেই হোক বা গোপন কাউকেই ছাড় দেয়না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, অফিস পার্ক, পরিবহন সীমান্ত সবখানে। সমাজ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও বাধ যায় না। জম্বি আক্রমণ এতটাই ভয়াবহ রূপ ধারণ করে যে তা নির্মূলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর হতে হয়, ঘোষণা করতে হয় জরুরি অবস্থা।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের এমন আয়োজনকে স্বাগত জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন ছাত্ররা। তাদের মতে, এমন আয়োজনে তারা বিমোহিত। তারা ডাকসুর কাছে এমন আয়োজন বার বার প্রত্যাশা করেন। অনুষ্ঠান দেখতে আসা বাংলা বিভাগের সাব্বির নামের চুতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, অনুষ্ঠান এত সুন্দর হবে অামি ভাবতে পারিনি। আমি বিষয়টি খুব এনজয় করেছি ।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি (সহ সভাপতি) নুরুল হক নূর বলেন,দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন হওয়ার পর থেকেই আমরা চেষ্টা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলাম একটিভিটিস দিতে। এই সমাজে যখন মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ঘটে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাজকে জাগাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন।
আজ আমরা দেখি, ছয় মাসের শিশু থেকে নব্বই বছরের বৃদ্ধাও যখন ধর্ষিত হচ্ছে। তখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানুষের মুল্যবোধ কে জাগাতে এমন আয়োজন করেছে।
ডাকসুর এজিএস (সহ সাধারন সম্পাদক) বলেন, আজকে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টিএসসি প্রাঙ্গণে মাইমোড্রামা করছে তখনই হয়ত একজন নারী শিক্ষার্থী ভয়ের মধ্যে আছে, আতঙ্কের মধ্যে আছে যে কাল সে নিরাপদে স্কুলে যেতে পারবে কিনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নারীর জন্য নিরাপদ দেশ চায়, নিরাপদ একটি ক্যাম্পাস চায়, নারীর জন্য নিরাপদ কর্ম পরিবেশ চায়।
তিনি আরো বলেন,বাংলাদেশে ধারাবাহিক ভাবে ধর্ষনের মত নিশংস ঘটনা ঘটে চলেছে।আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, ধর্ষককে শুধু মাত্র মৃত্যুদণ্ড দিলেন, ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড চাই স্লোগান উচ্চারণ করলেই নারী যে নিরাপদ থাকবে তার কোন নিশ্চয়তা নাই।
এ বিষয়ে ডাকসুর সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদার বলেন,কিছু মানুষ মুখোশের আড়ালে ভয়ঙ্কর পশুত্ব লালন করে এবং সুযোগ বুঝেই অমানুষিক ভাবে ঝাপিয়ে পড়ে শিশু, নারীদের উপর। সেই সকল মানুষের মুখোশ উন্মোচন করতে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে আপনাদের জন্য আপনাদের নিয়ে ব্যতিক্রমী এই আয়োজন৷
মাইমোড্রামায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ফাদার তপন ডি রোজারিও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ সভাপতি ( ভিপি) নুরুল হক নূর, সহ সধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদার, সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম শাওন, ডাকসুর সদস্য তানবীর হাসান সৈকত, সদস্য তিলোত্তমা সিকদার, মাইমোড্রামা জম্বির নির্দেশক ও গল্পকার লোকমান, ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন এর পরিচালক রিজায়নুল ইসলাম রিপন প্রমূখ।