ডেঙ্গু শনাক্ত না করেই ব্লাড প্লাটিলেট গণনার হিড়িক
- সোহানুর রহমান, ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০১৯, ০৪:৫১ PM , আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৯, ০৪:৫১ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেঙ্গু আতংক বেড়েই চলেছে। শিক্ষার্থীদের ব্লাডে প্লাটিলেট সেল (অণুচক্রিকা) গণনা করার জন্য রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে একটি মেশিন স্থাপন করে কর্তৃপক্ষ। এই মেশিন দিয়ে শুধু ব্লাড প্লাটিলেট সেল গণনা করা হয়। কিন্তু ডেঙ্গু শনাক্তকরণ করা যায় না বলে জানিয়েছেন প্রধান মেডিক্যাল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সারওয়ার জাহান মুক্তাফী।
তবে আগামী বুধবার বা বৃহস্পতিবার নাগাদ ডেঙ্গু ভাইরাস NS1 ও IgG and IgM শনাক্তারণের মেশিন আনা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে ডেঙ্গু শনাক্ত না করেই সুস্থ-অসুস্থ নির্বিশেষে শিক্ষার্থীদের ব্লাড প্লাটিলেট সেল গণনার হিড়িকে বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসক ও ডেঙ্গু আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা। সুস্থদের দীর্ঘ লাইনের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারের টেকনিক্যাল অফিসার বেলাল হোসেন সরকার জানান, রোববার ১৯৬ জনের ব্লাড স্যাম্পল (রক্তের নমুনা) পরীক্ষা করে মাত্র ১০ জনের ডেঙ্গু হয়েছে বলে জানা যায়। আর আজকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত সংগ্রহকৃত ২১০ জনের মধ্যে ৬১ জনের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে মাত্র এক জনের ডেঙ্গু হয়েছে বলে জানা গেছে।
ডেঙ্গু শনাক্ত না করা গেলেও অতিরিক্ত চাপের কারণে রোববার প্রথম দিনেই মেশিনটি বিকল হয়ে যায়। পরে সেটি আবার ঠিক করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারের প্যাথলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. নার্গিস ফাতেমা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এই মেশিন দিয়ে ডেঙ্গু শনাক্ত করা যায় না। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাদের ডেঙ্গু শনাক্ত না করেই এখানে এসে ব্লাড প্লাটিলেট গণনার জন্য ভিড় জমায়। এতে আমরা যেমন-তেমন, ডেঙ্গু আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা লম্বা লাইনের পেছনে থাকায় প্লাটিলেট গণনা করতে এসে অনেক বিপাকে পড়েন।’
তিনি বলেন, ‘কারো জ্বর না হলে শুধু শুধু আতঙ্কগ্রস্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আবার জ্বর হলেই যে সেটা ডেঙ্গু জ্বর হবে সেটাও তো না।’ আর এজন্য জ্বর হলে আগে ব্লাড প্লাটিলেট গণনা না করে ডেঙ্গু হয়েছে কিনা সেটা আগে শনাক্তকরণের জন্য পরামর্শ দেন তিনি।
ডা. নার্গিস ফাতেমা জানান, ‘কারো যদি তিন দিন ধরে জ্বর থাকে, তাহলে তার আগে NS1 antigen test (ডেঙ্গু শনাক্তকরণের প্রাথমিক পরীক্ষা) করে নেওয়া উচিত। এছাড়া ডেঙ্গুর আরেক প্রকরণ NS3 শনাক্তকরণের মেশিন বাংলাদেশের কোথাও নেই বলে জানান তিনি। তাই পঞ্চমদিনে Dengue IgG and IgM antibody test এবং ব্লাড প্লাটিলেট সেল গণনার পাশাপাশি অন্যান্য উপসর্গ যাচাই করে নিতে বলেন তিনি। কিন্তু ডেঙ্গু শনাক্ত না করেই ব্লাড প্লাটিলেট গণনার কোনো প্রয়োজন নেই বলে দাবি করেন তিনি।
ডেঙ্গু সম্পর্কিত সঠিক তথ্য গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল শিক্ষার্থীদের কাছে পৌছানোর জন্য অনুরোধ জানান ডা. নার্গিস। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কগ্রস্থ না হয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর ভাইরাস, এটি এমন এক ভাইরাস যেটি শরীরে প্রবেশ করার পর দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করতে থাকে। আর এই ভাইরাস ইউরিন রিলিজের (প্রশ্রাব) মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে প্রচুর পরিমাণ তরল পানীয় (স্যালাইন, লেবুর শরববত, ফলের জুস, ডাবের পানি) এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার পরামর্শ দেন তিনি। যাতে করে ইউরিন রিলিজের মাধ্যমে ভাইরাস বের হয়ে যায়। এছাড়া, শুধু নাপা (প্যারাসিটামল) বড়ি খাওয়া ও বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শও দেন ডা. নার্গিস।’
এদিকে, ডেঙ্গু ভাইরাস NS1 পরীক্ষা করার মেশিন না এনে আগে ব্লাড প্লাটিলেট সেল গণনার মেশিন আনার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান মেডিক্যাল অফিসার ডা. সারওয়ার জাহান বলেন, ‘NS1 (ডেঙ্গু ভাইরাস) শনাক্তকরণের মেশিন পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত খোঁজেছি। কিন্তু পাইনি।’
তবে আগামী বুধবার বা বৃহস্পতিবার নাগাদ ডেঙ্গু ভাইরাস NS1 পরীক্ষা করার মেশিন আনা হবে বলে জানান ডা. সারওয়ার। তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্ট্রি এর সাথে একটা বোঝাপড়ায় গিয়েছি। ওই মেশিনটি আনলে এর মাধ্যমে NS1 ও IgG and IgM শনাক্ত করা যাবে।’
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সহ ঢাকা শহর ও অন্যান্য এলাকায় মহামারী আকার আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু জ্বর। এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী মারা গেছেন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ফিরোজ কবির স্বাধীন গত ২৬ জুলাই শুক্রবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।